প্রত্যয় ডেস্ক: পৃথিবীকে রক্ষায় বহুপাক্ষিক প্রয়াসকে জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৈশ্বিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কোভিড ১৯ মহামারি স্মরণ করিয়ে দেয়-পৃথিবীতে সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। এ জন্য বৈষম্য হ্রাস,দারিদ্র্য বিমোচন এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে আমাদের গ্রহকে সুরক্ষিত করতে হবে এবং আমাদের বহুপাক্ষিক প্রয়াসকে আরও জোরদার করতে হবে।’
স্পেন সরকার আয়োজিত ‘বহুপাক্ষিকতা জোরদারে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে ধারণ করা ভিডিও বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) এ আহ্বান জানান।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান বলেন, ‘সম্মিলিত কার্যক্রম, একতা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপরই বৈশ্বিক সমৃদ্ধি নির্ভর করছে। কোভিড ১৯ মহামারি এই বাস্তবতা আবারও পৃথিবীর সামনে নতুন করে এনেছে। ইতিহাসও প্রমাণ করে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থেকে যেকোনও বিচ্যুতি মানবজাতির জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে। তাই গ্লোবালাইজড বিশ্বে গঠনমূলক বহুপাক্ষিকতার কোনও বিকল্প নেই। মানবজাতির অভিন্ন অগ্রগতি এবং আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্দেশনার এটিই একমাত্র পথ।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘বৈশ্বিক পর্যায়ে বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা না নিলে বৈশ্বিকভাবে পুনরুদ্ধার হবে না এবং কখনোই সেটি টেকসই হবে না।’ তিনি সাম্প্রতিক সংরক্ষণবাদী প্রবণতা এবং কিছু দেশে বিদেশিদের ব্যাপারে আতঙ্কের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এতে নিরীহ মানুষের জন্য আরও ভোগান্তি এনে দিতে পারে এবং শান্তিপূর্ণ বহুপাক্ষিক পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে মর্মে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ কারণে আমাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক শান্তি,সুরক্ষা এবং বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর এই জাতীয় ক্রিয়াকলাপ থেকে বিরত থাকা উচিত।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘বাংলাদেশ বহুপক্ষীয়তার পতাকা বাহক এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সুরক্ষার পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করছে। আমরা এসডিজি বাস্তবায়নে ‘গোটা সমাজ’ এই নীতি অবলম্বন করেছি,আমরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
দ্বিতীয়বারের মতো ৪৮ সদস্যের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা এলডিসি অবস্থান থেকে উন্নয়ন ঘটিয়েছি ,এ ক্ষেত্রে জাতিসংঘের ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি ও আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। ’
জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশে ২১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক ঘোষণা গৃহীত হয়েছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘ঘোষণায় আমরা আমাদের একীভূত সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্বের দায়িত্ব এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছি এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যগুলোর জন্য ২০৩০ সালের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে এবং প্যারিসচুক্তি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যদিও এসব আন্তর্জাতিক উপাদান ও বোঝাপাড়া থেকে সুবিধাগুলো অর্জনে বলিষ্ঠ বহুপক্ষীয়তা প্রয়োজন।’
তিনি বলেন, ‘বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চেতনা বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, এখানে বলা হয়েছে,আমরা স্বাধীনতায় উন্নতি করতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আকাঙ্ক্ষাগুলো বজায় রেখে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি আমাদের পূর্ণ অবদান রাখতে পারি।’ এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) দেওয়া ভাষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব এবং জাতিসংঘের ভূমিকার কথা তুলে ধরেন।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ দুঃখ, দুর্দশা এবং সংঘাতের এই পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ মানুষের আশার কেন্দ্র হয়ে থাকবে।’ তাঁর মন্তব্য এখনও আমাদের বহুপাক্ষিকতার ভিত্তি হয়ে আছে বলে স্বীকার করে নেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বৈশ্বিক এ ফোরামে করোনা মোকাবিলায় তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেগুলো তুলে ধরে বলেন, ‘মহামারির প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের সময় উপযোগী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ৫.২৪ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছে।’ অনুষ্ঠানে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেন এবং কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, জর্ডানের উপপ্রধানমন্ত্রী, সেনেগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেরিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাইস মিনিস্টারের পূর্বে ধারণকৃত ভিডিও ভাষণ অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।
জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের ভিডিও এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্যের একটি ভিডিও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।