নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর এই বয়সী শিশুদের মধ্যে ২৪ হাজারের বেশি শিশুর মৃত্যু হয় রোগটিতে। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৬৬ জন শিশুর মৃত্যু এই রোগে। যা দেশে মোট শিশু মৃত্যুর ১৮ শতাংশ। বুধবার বিশ্ব নিউমোনিয়া দিবস উপলক্ষে আইসিডিডিআর,বিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। ড্যাটা ফর ইমপ্যাক্ট, আইসিডিডিআরবি এবং ইউএসএইড যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইডিডিআর,বির সহযোগী বিজ্ঞানী ড. আহমেদ এহসানুর রহমান। এসময় দেশের নিউমোনিয়া নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন আইসিডিডিআর,বির জেষ্ঠ পরিচালক ড. শামস এল আরেফিন, শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. রুহুল আমিন, চাইল্ড হার্ট ট্রাস্টের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সমির সাহা, আইসিডিডিআর,বির জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ড. যুবায়ের চিস্তি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইডিডিআর,বির গবেষণা প্রধান ড. কামরুন নাহার এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউএসএআইডির জ্যেষ্ঠ উপদেষ্ঠ ড. কান্তা জামিল। বক্তারা বলেন, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে শিশুদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। করোনাভাইরাসও নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী। তবে যেসব ভাইরাসের কারণে শিশুদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে তার ৫০ ভাগই অচেনা। রোগটিতে শিশু মৃত্যুর অন্যতম কারণ আক্রান্ত হওয়ার পর অনেক দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে আসা। অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এছাড়া হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেয়া, এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ছুটোছুটির কারণে বছরে বিপুলসংখ্যক শিশুর মৃত্যু হয়।
বক্তারা বলেন, ১ থেকে ১১ মাস বয়সী শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। আক্রান্ত শিশুদের প্রতি একশ জনে ৫২ জনের মৃত্যু হয় বাসায়, আর ৪৫ জনের মৃত্যু হয় হাসপাতালে। বৈশ্বিক হিসাবে কিছুদিন আগেও বছরে গড়ে ১০ মিলিয়ন শিশুর মৃত্যু হতো রোগটিতে। বর্তমানে এই সংখ্যা কিছুটা কমে সড়ে ৮ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই সংখ্যা আবারও বাড়বে। ড. আহমেদ এহসানুর রহমান বলেন, ২০১৭ সালের অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ডেমোগ্রাফিক অ্যান্ড হেলথ সার্ভে অনুযায়ী বাংলাদেশের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিউমোনিয়ার পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা সক্ষমতা আছে। সমীক্ষায় আরো দেখা যায়, ৫০ শতাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অক্সিজেন কন্সেন্ট্রেটর নেই। এক-তৃতীয়াংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেনের অন্যান্য সোর্সও অনুপস্থিত। মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জেলা হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার আছে।
অধ্যাপক ড. রুহুল আমিন বলেন, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের মধ্যে মৃত্যুহারের ১৮ শতাংশ নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যু। এই মৃত্যুহার হ্রাসে তিনি শিশুকে ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শুধুমাত্র মায়ের দুধ খাওয়ানো এবং দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ খাওয়ানো চালিয়ে যাওয়া, ৬ মাসের পর থেকে মায়ের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরী পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো, পরিবেশ দূষণ হ্রাস করা এবং শ্বাসকষ্ট হলে তৎক্ষণাৎ নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতী হাসপাতালে পালস অক্সিমিটার, স্বল্পমূল্যের দেশীয় অক্সিজেন স্বল্পতা দূর করার বিষয়ে আলোপাত করেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, প্লাস্টিক বোতল দিয়ে তৈরী বাবল সিপ্যাপ নিউমোনিয়াজনিত শিশু মৃত্যুহার ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনতে সক্ষম। অপুষ্টির শিকার শিশুদের মধ্যে নিউমোনিয়াজনিত মৃত্যুর প্রবণতা ১৫ গুণ বেশি বলে গবেষণায় দেখা যায়।