পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ তদারকি ও সেতুর নিরাপত্তা বিধানসহ জাতীয় নিরাপত্তা সম্প্রসারণের জন্য ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড স্থাপন করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বাস্তবায়ন হচ্ছে ‘পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানকল্পে ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড স্থাপন (প্রথম সংশোধিত)’ প্রকল্প। এবার প্রকল্পের দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে, তাতে এর সময় বাড়ছে এবং ব্যয়েও পরিবর্তন আসছে।
সূত্র বলছে, সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রকল্পটির ওপর ‘প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি’র সভায় এমন প্রস্তাব দিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন।
প্রকল্পটির মূল খরচ ছিল ৯৮৭ কোটি ৩০ লাখ টাকা। প্রথম সংশোধনীতে তা বাড়িয়ে করা হয়েছিল ১ হাজার ৩২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
এর দ্বিতীয় সংশোধনীর ব্যয়ের বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলছেন, অভিজ্ঞ পরামর্শদাতার প্রণীত ও অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করায় কিছু কিছু অংশের সমাপ্তি ব্যয় অনুমোদিত প্রথম সংশোধিত ডিপিপি অপেক্ষা কম/বেশি হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা এলাকার বাদ পড়া গাছপালার ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং ফায়ারিং রেঞ্জের শব্দ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সমন্বয় করার জন্য দ্বিতীয় সংশোধিত ডিপিপি/আন্তঃখাত সমন্বয় অনুমোদন প্রয়োজন হচ্ছে।
প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জুলাইয়ে শুরু হয়েছিল। এর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে। তা শেষ না হলে প্রথম সংশোধনী এনে মেয়াদ বাড়িয়ে করা হয়েছিল ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত। দ্বিতীয় সংশোধনীর প্রস্তাব করে এখন ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের বক্তব্য, ‘করোনায় লকডাউনের কারণে কাজের অগ্রগতি সাধনের মোক্ষম সময়ে প্রায় ৫ মাস প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ বন্ধ ছিল। এছাড়াও এ অঞ্চলে অতিবৃষ্টির কারণে কাজ বিঘ্ন ঘটে এবং প্রায়শই ফেরি যোগাযোগ বন্ধ থাকায় ঠিকাদাররা নির্মাণ সামগ্রী আনতে বেশি সময় নিয়েছেন। এতে প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি ব্যাহত হয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নির্ধারিত মেয়াদকাল ২০২১ সালের জুনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না। সুষ্ঠুভাবে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য এক বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত সময় বৃদ্ধির প্রয়োজন হচ্ছে।’
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৬২ দশমিক ২০ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি ৬০ দশমিক ০৬ শতাংশ, টাকায় যার পরিমাণ ৭৯৩ কোটি ৬ লাখ ৬২ হাজার।
চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ছিল ৫৬ দশমিক ১১ শতাংশ। এই সময়ে খরচ হয়েছিল ৭৪০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তার মধ্যে ফুয়েল ও লুব্রিকেন্টে ৫০ হাজার, স্টেশনারিতে ৩০ লাখ, বিজ্ঞাপনে ৪২ লাখ, পরামর্শকে ৫ কোটি ২৩ লাখ, সম্মানি ভাতায় ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার ও টেস্টিং ফিতে ১০ লাখ ৫২ হাজার টাকা।
এছাড়াও যানবাহন কেনায় ৬০ লাখ, যন্ত্রপাতি ও উপকরণ কেনায় ২৩ কোটি ৯৫ লাখ ৯২ হাজার, এক্সেসরিজসহ কম্পিউটার কেনায় ৩০ লাখ, আবসবাবপত্র কেনায় ৪৫ কোটি ৮৩ লাখ, ফায়ার ফাইটিংয়ে ৭ কোটি ২২ লাখ, ভূমি ক্রয়ে ১৯২ কোটি ২১ লাখ, সাইট উন্নয়ন ও ল্যান্পস্কেপিংয়ে ৯০ কোটি, অফিস ভবনে ৩৬ কোটি ৮৫ লাখ, আবাসিক ভবনে ৫৮০ কোটি ৭৫ লাখ, অন্যান্য ভবন ও অবকাঠামোয় ১৭৩ কোটি ১৭ লাখ, সড়ক/হার্ড স্ট্যান্ডিংয়ে ৭৫ কোটি, সারফেস ড্রেনে ৩৫ কোটি, বহি: (বাইরের) পানি সরবরাহে ১৩ কোটি ৭৫ লাখ, টেলি কমিউনিকেশনে ১ কোটি, বহি: বিদ্যুতায়নে (লাইন ও তার) ২৬ কোটি ৮৫ লাখ, গ্যাস সংযোগে ১ কোটি ৪৪ লাখ, আরবরিকালচারে ৬০ লাখ, স্যুয়ারেজ ডিসপোজাল, গাইড ওয়াল, সেপটিক ট্যাংক, ফুয়েল ডিসপেন্সিং ইউনিট ইত্যাদি ৭ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে।