রাকিব শান্ত, ব্যুরো প্রধান, উত্তরবঙ্গঃ তৃতীয় ধাপে নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ৩০ জানুয়ারী শনিবার। নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচারে পিছিয়ে নেই কোন প্রার্থী। পুরো পৌরসভা জুড়ে ব্যানার, পোষ্টার ও লিফলেটের সমারোহ। ঘন কুয়াশা ও প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে মেয়র ও কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটারের বাড়ি বাড়ি। পাড়া-মহল্লা, চায়ের স্টলে আড্ডাসহ সবখানে এখন নির্বাচনী আলোচনা। পৌর বাসীর মুখে-মুখে এখন নির্বাচনই যেন এখন একমাত্র আলোচনার বিষয়।
প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে করছেন কুশল বিনিময়, উঠান বৈঠক ও বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেই সাথে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নিজেদের তুলে ধরতে লিফলেট ছাপিয়ে প্রচার করছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে নিজেদের জানান দিচ্ছেন প্রার্থীরা। নওগাঁ পৌরসভার উন্নয়ন করতে বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় যেন দম ফেলার সময় নেই কোন প্রার্থীর।
নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৫জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। আওয়ামীলীগ থেকে নৌকা প্রতিক লড়ছেন জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান পৌরসভার মেয়র নজমুল হক সনি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড ইন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল, জাতীয় পাটি থেকে লাঙ্গল প্রতিকে ইফতারুল ইসলাম বকুল ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে হাত পাখার প্রতিকে লড়ছেন আতিকুর রহমান।
নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করলেও লড়াই হবে মূলত ত্রিমুখী। মূল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আওয়ামীলীগের মনোনীত (নৌকা প্রতিক) প্রার্থী নির্মল কৃষ্ণ সাহা, বিএনপি মনোনীত প্রার্থী (ধানের শীষ প্রতিক) বর্তমান মেয়র নজমুল হক সনি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী (নারিকেল গাছ প্রতীক) নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড এন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল।
১৯৬৩ সালে নওগাঁ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৮৪ সালে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভার মর্যাদা পায়। ১৯৮৭ সালে মূল শহরের সঙ্গে আরও শতাধিক মহল্লাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালে ৩১ ডিসেম্বর পৌর নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে ধানের শীষ প্রতীকে মেয়র নির্বাচনে প্রতিযোগিতা করেছেন নজমুল হক সনি। নির্বাচনে ৩৪ হাজার ৮৮৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়ে মেয়র পদে দ্বিতীয় বারের মত বহাল থাকেন নজমুল হক সনি। অন্যদিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী দেওয়ান ছেকার আহম্মেদ শিষাণ ২২’শ ভোটে পরাজিত হন।
নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নজমুল হক সনি বলেন, আমি জনগনের ভোটে পর-পর দু”বার নির্বাচিত পৌর মেয়র। পৌরবাসীর দোয়া ও সমর্থন এর কারনেই তা সম্ভব হয়েছে।
পৌরবাসীকে আধুনিক ও মানসম্মত পৌরসভা উপহার দিতে মহা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে রাস্তা নির্মাণ, রাস্তা প্রসস্থ করণ, ড্রেন নির্মান কাজকে তরান্বিত করেছি। নওগাঁ পৌরসভায় ২টির বেশি আরসিসি রাস্তা ছিল না আমি বর্তমানে সকল রাস্তার পাশাপাশি আরসিসি ড্রেন নির্মানের ব্যবস্থা করেছি। পৌর এলাকা আলোকিত করতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন এর ব্যবস্থা করেছি। বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এখন পৌরবাসীর দোড়গরায়। আগামী তিন মাসের মধ্যে পুরো পৌরবাসীকে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ সম্ভব হবে বলে মনে করছি। আমি যদি আবারও জয়ী হই তবে নওগাঁ পৌরসভাকে সার্বিক ভাবে একটি উন্নত পৌরসভা হিসেবে গড়ে তুলবো সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে। আমি আশা করছি একটি অবাধ, সুষ্ট ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী নওগাঁ জেলা আওয়ামীগের সহ-সভাপতি নির্মল কৃষ্ণ সাহা শুরু থেকেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী এবং উত্তরবঙ্গের মুক্তিযোদ্ধের অন্যতম সংগঠক প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের আদর্শে গড়া এই নেতা মেয়র প্রার্থী হওয়ায় সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে সাড়া জেগেছে। এদিকে প্রবীণ এই নেতাকে মেয়র করার লক্ষে প্রতিদিন নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে- ওয়ার্ডে গিয়ে গণসংযোগ, পথসভা, মতবিনিময় শুরু করছেন। পৌর নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন সাধারণ মানুষদের কাছে। তাই নওগাঁ পৌরবাসী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেতা আব্দুল জলিলের স্বপ্ন আধুনিক পৌরসভা গঠনে সহায়তা করবেন এবং দেশরতœ জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নারিকেল গাছ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন নওগাঁ চেম্বার অব কর্মাস এন্ড এন্ডাষ্ট্রির সভাপতি ইকবাল শাহরিয়ার রাসেল। তিনি বলেন, পৌরসভা নির্বাচন করবো বলে আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে আসছিলাম। মনোনয়ন উত্তোলনের পর থেকে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়ে আসিিছ। নির্বাচনি প্রচারনায় বিভিন্ন ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হতে হচ্ছে। ভোটারদের কাছে আমার প্রতাশ্যা প্রতীক না; ব্যক্তি দেখে ভোট দিবেন। আমি নির্বাচিত হলে, সবার আগে প্রমাণ করবো আমি এই পৌরবাসির লোক। আমার অফিস হবে পৌরবাসীর অফিস। আর পৌর ভবন হবে আপনাদের বাড়ি। আমি ব্যক্তি উদ্যোগে শহরের কোমাইগাড়ীতে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে একটি নি¤œ মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন, পৌর একালায় দুটি মসজিদ নিমাণ, নওগাঁ সদর হাসপালে রক্তের গ্রুপ পরিক্ষার মেশিন প্রদান, একটি ময়লা ফেলার গাড়ি প্রদান, অস্বচ্ছল ও দুস্থ মহিলাদের স্বাবলম্বী করার লক্ষে পৌর এবং নওগাঁ সদর উপজেলার ৫শ জনকে সেলাই মেশিন প্রদান, নওগাঁ পৌর এলাকার বিভিন্ন স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, ঈদগা ও মন্দিরের উন্নয়নকল্পে বিভিন্ন সময় অনুদান প্রদান, নওগাঁ কেডি সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় ও সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে অভিবাবক ছাউনি নির্মান। শহর পরিচ্ছনতার লক্ষে শহরে ৫টি ড্রাস্টবিন প্রদান, জেলা ক্রীড়া সংস্থার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বিভিন্ন সংগঠনকে ক্রীড়া সামগ্রী ও অনুদান প্রদান, দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, বিগত ৮ বছর যাবত জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংর্বধনা ও বঙ্গবন্ধুর আতœজীবনী বিতরণসহ নানা সামাজিক সেবা মূলক কাজ করে যাচ্ছি যা পৌরবাসী অবগত আছেন। আমার সার্বিক দিক বিবেচনা করে প্রিয় ভোটাররা আমাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন বলে আশাবাদী।
অন্যদিকে পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে পুরো পৌর এলাকায় জুড়ে এখন উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এখন ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদানের জন্য অপেক্ষা করছেন। সব কিছু মিলে নওগাঁ শহরের সবখানে এখন মূল আলোচ্য বিষয় নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচন। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা আগামী ৩০তারিখের নির্বাচনে কে হবেন পৌর পিতা।
উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে নওগাঁ পৌরসভা প্রতিষ্ঠা লাভ করে। নওগাঁ সদর উপজেলার প্রান কেন্দ্রে ছোট যমুনা নদীর তীরে অবস্থিত। পৌরসভার আয়তন ৩৮.৩৬ বর্গ কিলোমিটার। নওগাঁ পৌরসভায় মোট ৯টি ওয়ার্ড ও ৩টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড। নির্বাচনে মোট ৪১টি কেন্দ্রে ৩৩২টি বুথে ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। নওগাঁ পৌরসভার মোট ভোটার সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ২৪০জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫৭হাজার ২৩৯ জন এবং নারী ভোটার ৫৯ হাজার ১জন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান জানান, নওগাঁ পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল প্রস্তিুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষে এইমধ্যে প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। এবারের নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৫৭ জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৯ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।