বদরুল ইসলাম বিপ্লব,ঠাকুরগাঁও থেকে: নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের ব্যস্ততা বাড়ছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রার্থী ও দলীয় সমর্থকদের প্রচার প্রচারনায় সরগরম হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও শহর।প্রথমদিকে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারনায় শহর মুখর থাকলেও জনবল ভিত্তিক নৌকার প্রচারনা এখন এগিয়ে।
আসন্ন ঠাকুরগাঁও পৌরসভার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির মাঝে। প্রথম থেকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরিফ বিএনপি সহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে প্রচারনায় নামেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তিনি ২০/৩০ জনের কর্মী বাহিনী নিয়ে পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। শহরের অলিগলিতে তার পোষ্টারের ছড়াছড়ি। অন্যান্য প্রার্থীদের পোষ্টার শৈত্য প্রবাহ ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেলেও তার পোষ্টারে প্লাষ্টিক মোড়ানো থাকায় এখনো শহরের সর্বত্র তার পোষ্টার শোভা পাচ্ছে। সেই সাথে গানের সুরে সুরে শরীফকে ভোট দেওয়ার প্রচারনায় অনেকে মুগ্ধ হয়ে পড়ে। দলীয় সমর্থন, ব্যক্তি ইমেজে তিনি শহরের দরিদ্র শ্রেনীর ভোটারদের কাছে বেশ সাড়া পাচ্ছেন। সবমিলে প্রথম থেকেই প্রচারনায় এগিয়ে রয়েছেন ধানের শীষের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরীফ।
অপরদিকে আঞ্জুমান আরা বন্যা নৌকার প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও শহরে তুলনামূলকভাবে তার পোষ্টার সংখ্যা কম। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই লাগানো পোষ্টার শৈত্য প্রবাহের কারণে ভিজে নষ্ট হয়ে পড়ায় তার পোষ্টার সংখ্যা কমে গেছে। তবে তার পক্ষে এখন প্রচারনায় যুক্ত হয়েছে দলীয় শক্তি।আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বোচ্ছাসেবলীগ সহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী তার প্রচারনা চালিয়ে আসছেন। দলবল নিয়ে প্রত্যহ স্ব স্ব সংগঠনের নেতারা কর্মী বাহিনী নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে পাড়ায় পাড়ায় চালাচ্ছেন প্রচারনা। তারা প্রার্থীকে দেখে নয়, এলাকার উন্নয়নের সার্থে শেখ হাসিনার নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন। নৌকার পক্ষে পাড়ায় পাড়ায় বৈঠক ভোটারদের মনোবল বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে। জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মুহা:সাদেক কুরাইশি, সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায়, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান অরুনাংশু দত্ত টিটো সহ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বন্যার প্রচারনায় যুক্ত হওয়ায় নির্বাচনী মাঠের হিসেব পাল্টে যেতে বসেছে। জনবল ভিত্তিক প্রচারনায় এখন শরীফকে ছাড়িয়ে বন্যা এগিয়ে। নির্বাচনের পূর্বদিন পর্যন্ত জোটগত নৌকার প্রচারনা অব্যাহত থাকলে নৌকা এবার হারানো পৌরসভাকে দখলে নিতে পারে।
এদিকে নৌকার পক্ষে দলীয় অবস্থানে সাহস হারাতে বসেছে বিএনপি। বিএনপি ও তাদের দলীয় মনোনীত প্রার্থী এখন মনোবল হারিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ার আশংকা করছেন।
অবশ্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো: জিলহাজ উদ্দীন জানান, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে ইতোমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সকল প্রকার প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে। আইন শৃংখলা রক্ষাকারী সেল, ভিজিলেন্স ও অবজারভেশন টিম, মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে।
বিএনপির মনোনীত প্রার্থী শরিফুল ইসলাম শরীফ আসন্ন নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট হলে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সভাপতি তৈমুর রহমান বলেন, গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ ভোটের আগের রাতে ভোট ডাকাতি করে নিয়ে নেয়। কাজেই আমরা আশংকা করছি আওয়ামীলীগ প্রার্থীর কোনরূপ জনপ্রিয়তা না থাকলেও প্রশাসন যন্ত্রকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করতে পারে। তাই প্রশাসনের নিরপেক্ষতা কামনা করছি।
অপরদিকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বন্যা আসন্ন নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ঠাকুরগাঁও পৌরসভাটি দীর্ঘ ৫ বছর ধরে উন্নয়ন বন্ধাত্ব অবস্থায় গিয়ে পৌছেছে। পৌরসভার উন্নয়নে শহরের নতুন ভোটাররা যেহেতু ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, কাজেই নৌকার জয় ঠেকানোর কেউ নেই।
এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক দীপক কুমার রায় বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে ঠাকুরগাঁওয়ের যে উন্নয়ন হয়েছে তা অনেক পুরাতন শহরেও হয়নি। ঠাকুরগাঁওয়ে রোড ডিভাইডার স্থাপন, আলোক বাতি স্থাপন প্রকল্প শহরের চিত্র পাল্টে দিয়েছে। কাজেই উন্নয়নের সার্থে পৌরবাসী নৌকাকে ভোট দেবে।
এ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ৩জন, কাউন্সিলর প্রার্থী ৫৯জন এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। মোট ভোটার ৬০ হাজার ৭২৭ জন। পুরুষ ২৯ হাজার ৭১২ এবং নারী ভোটার ৩১ হাজার ১৫ জন ।