জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবজ্ঞা ও তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘হত্যার’ ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু। রোববার (৭ মার্চ) এক বিবৃতিতে তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন। রাজশাহী নগর বিএনপির দফতর সম্পাদক নাজমুল হক ডিকেন ই-মেইলে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
এর আগে মিনুকে ক্ষমা চাইতে নগর আওয়ামী লীগের বেঁধে দেয়া ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষ হয় শনিবার (৬ মার্চ) সন্ধ্যায়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ক্ষমা না চাইলেও পরদিন তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন।
যোগাযোগ করা হলে মিজানুর রহমান মিনু এই বিবৃতিটি পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেন।
বিবৃতিতে মিনু উল্লেখ করেন, ‘আমার বক্তব্যের জন্য যারা ব্যথিত হয়েছেন, মর্মাহত হয়েছেন, আমি তাদের নিকট দুঃখ প্রকাশ করছি।’ মিনু আরও বলেন, ‘আমি এই মহানগরীতে জন্মগ্রহণ করে দীর্ঘদিন রাজশাহীবাসীকে নিয়ে রাজনৈতিক নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করে আসছি। স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনসহ সব আন্দোলনে পাশে পেয়েছি। সুতরাং কোনো ব্যক্তি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষকে উদ্দেশ করে আক্রোশমূলক বক্তব্য প্রদান করা আমার স্বভাববহির্ভূত। তাই সবাইকে আমার বক্তব্যে ষড়যন্ত্র না খোঁজার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
এর আগে গত মঙ্গলবার বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে মিজানুর রহমান মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আজ রাত কাল আর সকাল নাও হতে পারে। ’৭৫ মনে নাই?’
সমাবেশে মিনু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেও কটাক্ষ করে বক্তব্য দেন। এর প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে নগর আওয়ামী লীগ। পরদিনই বিক্ষোভ-সমাবেশ করে দলটি। সেই সমাবেশ থেকে নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন মিনুকে ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন।
লিটন ঘোষণা দেন, এই সময়ের মধ্যে মিনু ক্ষমা না চাইলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এক প্রতিবাদলিপিতে মিনুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবেই দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। নগর ওয়ার্কার্স পার্টির বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে মিনুকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ১২ অক্টোবর রাজশাহী মহানগর বিএনপির এক বিক্ষোভ সমাবেশে মিনু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা মুখার্জির সঙ্গে তুলনা করে কটূক্তিমূলক বক্তব্য রাখেন। এনিয়েও তখন রাজশাহীতে বিক্ষোভ করে আওয়ামী লীগ। প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেয়ায় তাকে ক্ষমা চাইতে বলা হয়। এরপর ফেসবুক লাইভে এসে দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন সাবেক সিটি মেয়র মিনু।
এবার বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ এবং আরেকটি ১৫ আগস্টের ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্য দেয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান। গত শুক্র ও শনিবার বিষয়টি নিয়ে তিনি কথা বলেন। মিনু এত সাহস কোথায় পেলেন, সেই প্রশ্নও তোলেন ওবায়দুল কাদের। অবশেষে মিজানুর রহমান মিনু গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে এ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন।
এদিকে মিনু বিবৃতি পাঠানোর আগে আলটিমেটামের সময় শেষ হওয়ায় নগর আওয়ামী লীগ মিনুর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নেয়। রোববার ৭ মার্চের আলোচনা অনুষ্ঠানেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনায় নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সভায় মিনুর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়।
সভা শেষে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, ‘আমরা বিএনপি নেতা মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ইতোমধ্যে আমাদের আইনজীবীদের বলা হয়েছে। কোন কোন ধারায় মামলা করা যায় সেটা তারা দেখবেন। সোমবার (৮ মার্চ) আদালতে মামলা করা হবে। এছাড়া আগামী ৯ মার্চ রাজশাহীতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হবে। সেখানে আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল ও রংপুর বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনও উপস্থিত থাকবেন।’