দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক।
রোববার (২১ মার্চ) চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং সমমর্যাদার বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের জন্য ৭ম ওরিয়েন্টেশন কোর্সের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মন্ত্রী এ কথা জানান।
বিচারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা গড়ার অন্যতম অনুসঙ্গ হলো আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। এই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আপনাদের ভূমিকা অগ্রগণ্য। আপনারা জানেন বর্তমানে ৩৭ লাখ মামলা বিচারাধীন। এই বিশাল মামলা জট কমিয়ে আনা এখন আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দ্রুততম সময়ে মামলা নিষ্পত্তিতে সরকারের প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হচ্ছে।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বিচার ব্যবস্থায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি অধিক কার্যকর করার লক্ষ্যে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসকে ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে। আইনে সংশোধনী এনে বিভিন্ন স্তরে মামলার সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। দ্রুততম সময়ে সাক্ষী হাজির করার জন্য গত দুদিন আগে বিদ্যমান সমন জারির পাশাপাশি মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে মামলার তারিখ সম্পর্কে সাক্ষীকে অবগত করার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে।’
কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতেও সরকার ভার্চুয়াল কোর্ট চালু করে জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সমুন্নত রেখেছে জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘দুই হাজার ৮০০ কোটি টাকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।’
আইনমমন্ত্রী বিচারকদের বলেন, ‘সরকার ও সুপ্রিম কোর্টের বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি আপনারা যারা বিচারক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের ইনোভেটিভস স্টেপস অনেকাংশে মামলা জট কমাতে সাহায্য করবে। বিচারিক কর্মঘণ্টা, সঠিক প্রয়োগ, ইফেকটিভ কেইস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ইফিসিয়েন্ট কোর্ট ম্যানেজমেন্ট সর্বোপরি আপনাদের নেতৃত্বের মাধ্যমে বিচার বিভাগ মামলার বোঝা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারে।’
করোনা মহামারীতে ভার্চুয়াল কোর্ট সফল করার জন্য বিচারকদের ধন্যবাদ জানিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘বিচার প্রক্রিয়ায় স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কার্যকর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব।’
‘বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমি দেশের বিভিন্ন জেলায় চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে বিচারকদের পরিবহন সমস্যা সমাধানে সরকার আন্তরিক। পাশাপাশি আমি আপনাদেরকে এটাও বলতে পারি- আমরা একটা প্রকল্প নিব যেখানে জেলায় বিচারকদের আবাসনের ব্যবস্থা সুবিধাদি সম্পর্কে সক্রিয় পদক্ষেপ থাকবে। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আপনাদের দক্ষতা উন্নয়নে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ভারত ও চীনে আপনারা ট্রেনিং প্রোগ্রামে গিয়েছেন। আমরা এখন চেষ্টা করছি আরও অন্যান্য উন্নত দেশে আপনাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা যায় কি-না।’
তিনি বলেন, ‘করোনাভাইরাস মহামারি শেষ হওয়ার পর আমরা এই প্রকল্প হাতে নিতে পারব বলে আমি বিশ্বাস করি। এই সকল উদ্যোগ তখনই সকল সফল হবে, যখন বিচার বিভাগ জনগণের প্রত্যাশা মেটাতে সক্ষম হবে। জনগণের শেষ আশ্রয়স্থল হিসেবে আদালত তার মর্যাদা ধরে রাখবে, দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ থেকে সর্বোচ্চ দক্ষতা ও সততা সততা দিয়ে আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক হবে এটাই আমার প্রত্যাশা।’
অনুষ্ঠানে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক বিচারপতি খন্দকার মুসা খালেদ, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার বক্তব্য দেন।