বিল্লাল হোসেন,যশোর প্রতিনিধি:
যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি গ্রামের সুলতানা রাজিয়া নামে এক নারী সর্দি জ্বরে ভুগছেন। প্রায় মৌসুমে তার এই ধরণের সমস্যা দেখা দেয়। সোমবার বিকেলে কাঁশির পরিমান সামান্য বেশি হলে তিনি শহরের একটি প্রাইভেট হাপাতালে চিকিৎসক দেখানোর উদ্দেশ্যে যান। কিন্তু কোন চিকিৎসককে না পেয়ে ফিরে যান। পরে চুড়ামনকাটি বাজারের পল্লী চিকিৎসক অরবিন্দু কুমার নাথের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফেরেন। ওষুধ সেবনের পর তার সর্দি ও জ্বর অনেকটা কম। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আতংকের কারণে প্রাইভেট হাসপাতালে চেম্বারে বিশেষজ্ঞরা না আসার কারণে রাজিয়ার মতো অনেকেই ছুটছেন পল্লী চিকিৎসকের কাছে। ক্লান্তিকাল সময়ে পল্লী চিকিৎসকরাই এখন ভরসা হয় পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনাভাইরাস আতংকের কারণে যশোরের প্রাইভেট হাসপাতাল ও ক্লিনিকে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগী দেখছেন না। সেখানে চিকিৎসার জন্য মানুষ গিয়েও সেবা না পেয়ে ফিরে আসছেন। চলমান পরিস্থিতির পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত অনেকেই ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখবেন না ঘোষণাও দিয়েছেন। চিকিৎসক না পেয়ে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন মৌসুমি নানান রোগে আক্রান্তরা। ছাতিয়ানতলা গ্রামের আব্দুস সামাদ মল্লিক জানিয়েছেন, তার নাতনি মৌসুমি রোগে আক্রান্ত হলে তাকে যশোর শহরে নিয়ে যায়। প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিকে কোন ডাক্তার না পেয়ে শিশু হাসপাতালে যায়। সেখানেও সেবা মেলেনি। পরে চুড়ামনকাটি বাজারের পল্লী চিকিৎসকের কাছ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছি। চুড়ামনকাটি বাজারের পল্লী চিকিৎসক অরবিন্দু কুমার নাথ জানান, পল্লী চিকিৎসকেরা বরাবরই মানুষের পাশে থেকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে। নিজেদের পেশাকে তারা মানক সেবা হিসেবে মনে করেন। তাই দেশের এই ক্লান্তিকালে তারা ঘরে বসে না থেকে রোগীদের পাশে রয়েছেন। দুরত্ব বজায় রেখে সব ধরণের রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করে চলেছি। গুরুতর রোগীদের যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছি। আরেক পল্লী চিকিৎসক হরষিৎ কুমার জানান, রোগীদের সাধ্যমতো সেবা প্রদান করছি। রোগীদের অবস্থা বুঝে চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি। যশোর শহরের বেজপাড়া তালতলা মোড়ের পল্লী চিকিৎসক নিতীশ কুমার জানান, করোনা ভাইরাস আতংকে সারাদেশ কাঁপছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা অনেকেই ঘরে বসে সময় কাটাচ্ছে। চলমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও আগের চেয়ে বর্তমানে বেশি সময় ঘরে চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা রাখছি। অনেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখাতে না পেরে ছুটে আসছেন। সরকারের নিয়মনীতি মেনে সবাইকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করছি। যাদের উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন মনে করছি তাদের সরকারি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও যশোর জেলা কমিটির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক কে এম মাসুদ পারভেজ জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস আতংকের মধ্যেও মনোবল নিয়ে যশোর জেলায় ১৫ হাজার পল্লী চিকিৎসক সার্বক্ষণিক মানুষের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। তাদরে নিরাপত্তার জন্য সরকারিভাবে ব্যক্তিগত সুরক্ষা উপকরণ (পিপিই) প্রদান করার আহবান জানিয়েছেন তিনি। মাসুদ পারভেজ আরো জানান, নিয়মের মধ্যে সব ধরণের রোগীকে চিকিৎসাসেবা প্রদান করার জন্য তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন। যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন জানান, করোনা আতংকে ব্যক্তিগত চেম্বারে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রোগী দেখছেন না। তাদের চেম্বারে বসার আহবান জানানো হয়েছে। আশা করি ২/৩ দিনের মধ্যে সকলেই রোগী দেখা শুরু করবেন। তবে গ্রামের মানুষকে সার্বক্ষনিক সেবা গ্রহণ করায় পল্লী চিকিৎসকদের সাধুবাদ জানিয়েছেন সিভিল সার্জন।