প্রত্যয় ওয়েব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে লাল গ্রহ মঙ্গলপৃষ্ঠে অবতরণ করেছে চীনের মানুষবিহীন রোভার ‘জুরং’।
সিনহুয়া জানিয়েছে, শনিবার ভোরে মঙ্গলের উত্তর গোলার্ধের যে বিস্তৃত ভূখণ্ডকে ইউটোপিয়া প্লানিশা নাম দেওয়া হয়েছে সেই এলাকায় অবতরণ করে ছয় চাকার সৌরবিদ্যুতচালিত রোবট যান ‘জুরং’।
২৪০ কেজি ওজনের এই রোবটযানের নাম দেওয়া হয়েছে চীনের অগ্নিদেবতার নামে। এই রোভারে আছে ছয় ধরনের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সরঞ্জাম।
ল্যান্ডার থেকে মঙ্গলের মাটিতে নামার পর শুরু হবে জুরংয়ের তিন মাসের অভিযান, যার লক্ষ্য সৌরজগতের চতুর্থ গ্রহে কখনো প্রাণের সঞ্চার হয়েছিল কি না, তা খুঁজে বের করা। এ লক্ষ্যে শক্তিশালী একটি রাডার ব্যবহার করে মঙ্গলের মাটি, মাটির নিচের পানি ও বরফ এবং বায়ুমণ্ডল পরীক্ষা করবে রোভারটি।
জুরংকে মঙ্গলের মাটিতে বয়ে এসেছে চীনের অরবিটার তিয়ানওয়েন-১। তিয়ানওয়েন বা ‘স্বর্গের প্রতি প্রশ্ন’ নামটি দুই হাজার বছর আগে লিখিত চীনা একটি কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। মহাকাশযানটি ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের কক্ষপথে পৌঁছায়। তখন থেকেই মঙ্গলের চারপাশে ঘুরে ঘুরে ইউটোপিয়া প্লানিশার ওপর জরিপ চালাচ্ছিল অরবিটার তিয়ানওয়েন-১। ওই এলাকার ছবি তুলে চিহ্নিত করার চেষ্টা করছিল- রোভার নামানোর জন্য ঠিক কোন জায়গাটি সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।
চীনের এই মঙ্গল অভিযানের সূচনা হয়েছিল গতবছরের ২৩ জুলাই। সেদিনই একটি লংমার্চ-৫ রকেট চীনের মার্স অরবিটার তিয়ানওয়েন-১ কে নিয়ে রওনা হয় মহাকাশে। দীর্ঘ সাত মাসের যাত্রা শেষে তিয়ানওয়েন-১ ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে সেটিকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে।
এটি মঙ্গলে চীনের প্রথম স্বনির্ভর মিশন। এর আগে ২০১১ সালে রাশিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে আরেকটি অনুসন্ধানযান উৎক্ষেপণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিল চীন। যদি জুরংকে সফলভাবে ল্যান্ডার থেকে নামিয়ে মঙ্গলের পৃষ্ঠে মোতায়েন করা যায়, তাহলে প্রথম মিশনেই মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ, অবতরণ ও একটি রোভার ছাড়তে সফল হওয়া প্রথম দেশ হবে চীন।
তিয়ানওয়েন-১ ফেব্রুয়ারিতে মঙ্গলে পৌঁছানো তিনটি অরবিটারের একটি। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের রোভার পারসাভেরেন্স সফলভাবে মঙ্গলের জেজেরো খাদে নামে, এ জায়গাটি ইউটোপিয়া প্লানিশা থেকে দুই হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে।
একই মাসে সংযুক্ত আরব আমিরতের পাঠানো হোপ অরবিটাল মঙ্গলের কক্ষপথে প্রবেশ করে। তবে এর নকশা মঙ্গলের পৃষ্ঠে অবতরণ করার মতো নয়। এটি উপর থেকে মঙ্গলকে প্রদক্ষিণ করে গ্রহটির আবহাওয়া ও বায়ুমণ্ডলের তথ্য সংগ্রহ করছে।