মো:মনিরউজ্জামান জুয়েল
পরদিন সকালবেলা ইয়াকুব (আঃ) মামাবাড়ির উদ্দেশ্যে আবার যাত্রা শুরু করলেন। যাওয়ার আগে সেই পাথরটিতে তেল দিয়ে চিহ্নিত করে রাখলেন। যদি তিনি আবার প্রত্যাবর্তন করতে পারেন, তাহলে তিনি এখানে একটা ইবাদতখানা নির্মাণ করবেন। মামার বাড়ি হারানের (কানানের পূর্বে, বর্তমান ইরাক) কাছাকাছি আসলে তিনি মানুষদেরকে মামা লাবানের বাড়ির কথা জিজ্ঞেস করেন। তারা এক মরু রাখাল বালিকাকে দেখিয়ে দেন। রাখাল বালিকা রাহেল তখন মরুভূমিতে মেষ চরাতে ছিলেন। ইয়াকুব (আঃ) রাহেলের মোষগুলোকে কূপ থেকে পানি খাওয়াতে সাহায্য করলেন। তারপর রাহেলের সহায়তায় তিনি মামার বাড়ি পৌঁছান। সবকিছু শুনে মামা লাবান উনাকে স্বাদর সম্ভাষণ জানান। সেখানে তিনি দুই মামাতো বোন লাইয়া বিনতে লাইয়্যান ও পরবর্তীতে রাহীলকে বিয়ে করেন। বিনিময়ে মামার বাড়িতে বিশ বছর রাখালের কাজ করেন।
এভাবে ২০ বছর কেটে যায়। সাইয়্যেদেনা ইয়াকুব (আঃ) বাড়িতে প্রত্যাবর্তন করা মনস্থির করলেন। উনি বিবি-বাচ্চা আর ২০ বছরে যা কিছু উপার্জন করেছিলেন সবকিছু নিয়ে রওনা দেন। পথিমধ্যে উনার ভাই হযরত ইষ্ (আঃ) এর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সাক্ষাতের পর ঈষ্ (আঃ) তাঁর চাচা ইসমাইল (আঃ) এর কাছে হেজাজ তথা মক্কায় ফিরে যান। আর ইয়াকুব (আঃ) সেই স্থানে আবার ফিরে আসেন। তিনি কয়টা ভেড়ার পালের বিনিময়ে পার্শ্ববর্তী গোত্রের কাছ থেকে কিছু জায়গা কিনে নেন। এবং সেখানে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী একটা ইবাদতখানা নির্মাণ করেন।
আসলে এটা ছিলো বাইতুল মাকদিসের মূল ভিত্তিপ্রস্তর যা কালেক্রমে ক্ষয় হয়ে গিয়েছিলো। যা তার দাদা সাইয়্যেদেনা ইব্রাহীম (আঃ) বহুবছর আগে নির্মাণ করে গিয়েছিলেন। তিনি তা আরো সম্প্রসারণ করেন। এভাবে বাইতুল মাকদিস কেন্দ্রিক বনী ইসরাইল জাতির আবাস শুরু হয়। উল্লেখ্য যে, সাইয়্যেদেনা ইয়াকুব (আঃ) এর আরেক নাম ইসরাইল হওয়ায় তাঁর বংশধরদের বনী ইসরাইল সম্প্রদায় বলা হয়। সাইয়্যেদেনা ইয়াকুব (আঃ) এখানে ইবাদত শুরু করেন এক ইলাহ বা আল্লাহর। তাঁর ধর্মীয় সম্প্রচারের বিস্তৃতি বর্তমান ফিলিস্তিন, সিরিয়া আর লেবানন পর্যন্ত বলবৎ ছিলো।
একটা সময় হযরত ইয়াকুব (আঃ) এর একাদশ পুত্র, হযরত ইউসুফ (আঃ) কে তাঁর সৎ ভাইয়েরা ঈর্ষা বসীভূত হয়ে কূয়ায় ফেলে দেন। সেখান থেকে হেজাজের এক কাফেলা মিশর যাওয়ার পথে উনাকে উদ্ধার করেন। এবং কিফতীর নামক মিশরের খাদ্য ভান্ডার রক্ষকের কাছে বিক্রি করে দেন। সুদর্শন ইউসুফ (আঃ) উনার দূরদর্শিতা আর প্রজ্ঞা দ্বারা মিশরের খাদ্যমন্ত্রী হন। একটা সময়ে মিশরে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়, আর তা মিশর ছড়িয়ে কানানেও পৌঁছে যায়। সাইয়্যেদেনা ইউসুফ (আঃ) এর ভাইয়েরাও খাদ্যের সন্ধানে মিশরে আসেন। ইউসুফ (আঃ) এর সাথে উনার ভাইদের মিলন হয়। এবং পরবর্তীতে তাঁর বাবা সাইয়্যেদেনা ইয়াকুব (আঃ) ও পুরো বনী ইসরাইল জাতি কানান থেকে মিশরে হিজরত করেন। শুরু হয় নিজ দেশ কানান তথা ফিলিস্তিন ছেড়ে বনী ইসরাইল তথা ইহুদি জাতির মিশরে বসবাস! (চলবে..)