ওয়েব ডেস্ক: কিশোর গ্যাংয়ের পৃষ্ঠপোষকদেরও ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, বর্তমান সময়ে কিশোর অপরাধ উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তারা হত্যাকাণ্ডের মতো হিংস্র এবং নৃশংস অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষা করতে এখনই কিশোর গ্যাং কালচারের লাগাম টেনে ধরা দরকার।
মঙ্গলবার (২৯ জুন) দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদফতরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, র্যাব কিশোর গ্যাং নামক অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে জোরালো অভিযান পরিচালনা করছে। আমরা প্রত্যাশা করি, পরিবার তার সন্তানের প্রতি আরও নজর দিবে; পাশাপাশি সমাজ ও শিক্ষাঙ্গনকে এগিয়ে আসতে হবে। যারা কিশোরদেরকে গ্যাংয়ে রূপান্তর করছে অর্থাৎ পৃষ্ঠপোষক তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না।
র্যাব ডিজি বলেন, হলি আর্টিজান পরবর্তী জঙ্গি অভিযানে শাহাদত বরণকারী লে. কর্নেল আজাদ এবং সকল দেশপ্রেমী, অকুতোভয় র্যাব সদস্য যারা দেশের স্বার্থে দায়িত্বপালনের সময় জীবন উৎসর্গ করেছেন তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। সেই সঙ্গে তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা জ্ঞাপন করছি। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখযুদ্ধে থেকে যেসব চিকিৎসক, নার্স, সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, জনপ্রতিনিধি ও অন্যান্য পেশাজীবী দেশ ও মানব প্রেমে জাগ্রত হয়ে কাজ করছে তাদের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।
র্যাব জঙ্গি দমনে প্রশংসনীয় অবদান রেখে চলছে
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে আমরা আড়াই হাজার জঙ্গি গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। জঙ্গি দমনে বিগত সময়ের অভিজ্ঞতায় হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় প্রাথমিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় র্যাব। ঘটনার পরপরই র্যাব সদস্যরা হোটেল ও তার আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেয়। চূড়ান্ত সম্মুখ অবস্থান গ্রহণ করে রাত ১২টার মধ্যেই মূল অভিযান তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। নৃশংস এই হামলায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আদালতে চার্জশিট দাখিলের মাধ্যমে তদন্ত-কাজও শেষ হয়েছে এবং বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। আমরা আশা করছি, শিগগিরই এ হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে রায় কার্যকর হবে।
তিনি আরও বলেন, র্যাবের অভিযানে হলি আর্টিজানের হামলার আসামিদের গ্রেফতার র্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে। হামলার অন্যতম মূল পরিকল্পনাকারী জেএমবি আমির সারোয়ার জাহান র্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে ছাঁদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মৃত্যু হয়। এছাড়াও গ্রেফতার করা হয় জেএমবির সূরা সদস্য মামুনুর রশীদ রিপন এবং অপর শীর্ষ নেতা শরিফুল ইসলাম খালিদ। তারা ঘটনার পরিকল্পনা, অর্থায়ন, প্রশিক্ষণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
হলি আর্টিজান ঘটনা পরবর্তী অভিযানে র্যাব জঙ্গি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতা, অর্থদাতা ও বিভিন্ন পর্যায়ের সদস্যদের গ্রেফতার করে জঙ্গি সংগঠনগুলোকে দুর্বল করে দিয়েছে জানিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, হলি আর্টিজানে হামলা পরবর্তী সময়ে র্যাবের অভিযানে এক হাজার ৪১৬ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়। শুধু অভিযান নয়, জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচার-প্রচারণা ও সুধী সমাবেশের আয়োজন করে র্যাব। এছাড়াও জঙ্গিবাদ দূর করে ভুল বুঝতে পারা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
ভেজাল পণ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত চলছে জানিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, করোনা মহামারির সময়ে লকডাউন নিশ্চিত করার পাশাপাশি র্যাব ভেজাল পণ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। এছাড়াও এক বছরের বেশি সময় ধরে আমরা মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, অবৈধ কিট, ভুয়া রিপোর্ট ইত্যাদি সম্পর্কীয় অভিযান পরিচালনা করছি। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগের টেস্টিং কিট ও রি-এজেন্ট জব্দ এবং প্রতারক চক্রের মূলহোতাসহ ৯ জন অপরাধীকে গ্রেফতার করে র্যাব। এভাবে র্যাব করোনাকালে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখা এবং লকডাউন নিশ্চিত ও মানসম্মত সুরক্ষাসামগ্রী প্রাপ্তি নিশ্চিতকল্পে কাজ করে যাচ্ছে।
করোনা পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পাশাপাশি কর্মহীন, অসহায় ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা প্রদান, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ, প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অসুস্থ রোগীদের জরুরি সেবা প্রদান এবং অন্যান্য মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে র্যাব মানুষের আস্থা ও অফুরন্ত ভালোবাসা অর্জন করেছে।
জঙ্গিদের বড় কোনো হামলার সামর্থ্য আছে কি-না এমন এক প্রশ্নের জবাবে ডিজি বলেন, আমাদের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা মনে করি, জঙ্গিদের এই মুহূর্তে বড় কোনো আক্রমণাত্মক ঘটনা ঘটানোর সামর্থ্য নেই।