ওয়েব ডেস্ক: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ১১৪ চিকিৎসককে বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আগামী বুধবারের মধ্যে তাদের নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
সোমবার (৫ জুলাই) মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব জাকিয়া পারভিন স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনটিতে বলা হয়- ‘কোভিড-১৯ অতিমারি মোকাবিলা এবং জনসেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিম্নে বর্ণিত স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সংযুক্তিতে পদায়ন করা হলো।’
এদিকে, এত চিকিৎসককে একসঙ্গে বদলি নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন চিকিৎসক সংগঠনের নেতারা। এছাড়া এই বদলির ফলে চমেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার আশঙ্কা জানিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও।
চিকিৎসক নেতারা বলছেন, চমেক হাসপাতালে তো কেবল করোনা রোগীর চিকিৎসা হয় না। এখানে করোনা ওয়ার্ডের ২৫০ রোগী ছাড়াও প্রায় দুই হাজার রোগী আছে। একযোগে এত চিকিৎসককে বদলি করায় হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড তো বটেই, স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে। তাছাড়া হাসপাতালের বিশেষায়িত ইউনিটের বেশ কয়েকজন চিকিৎসককে বদলি করা হয়েছে। যাদের বদলিতে হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায় মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটবে। এই বিশেষায়িত চিকিৎসকদের যেখানে বদলি করা হয়েছে, সেখানে তাদের কোনো কাজ নেই।
আবার, বদলি হওয়া চিকিৎসকদের চট্টগ্রাম ছাড়াও খাগড়াছড়ি, ফেনী এবং আশপাশের জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে বদলি করা হয়েছে। লকডাউন চলাকালে কীভাবে এত দ্রুত তারা কর্মস্থলে যোগদান করবেন সেটি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন চিকিৎসকরা।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘চমেক চট্টগ্রাম বিভাগের উন্নত চিকিৎসার একমাত্র হাসপাতাল। এখানে করোনা ছাড়াও নিয়মিত জটিল রোগ নিয়ে নানা রোগী আসেন। জটিল রোগের অনেক চিকিৎসক এই বদলির তালিকায় রয়েছেন। এতে করে হাসপাতালের জটিল রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়বে। যেমন নিউরোসার্জন, কলেজের অ্যানাটমি বিভাগের অধ্যাপক, পিসিআর ল্যাব প্রধান, দন্ত চিকিৎসক এই বদলির তালিকায় আছেন। হাসপাতালে বর্তমানে প্রচুর ব্রেইন টিউমারের রোগী আছে। তাদের অপারেশনের কী হবে? তাছাড়া কলেজে সারাবছর যিনি অ্যানাটমি পড়িয়েছেন তাকে দিয়ে তো করোনার চিকিৎসা করানো ঝুঁকিপূর্ণ হবে। আবার দাঁতের ডাক্তার করোনার চিকিৎসায় কী করবেন? সবচেয়ে বড়ো কথা হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার ল্যাব প্রধানকে বদলি করা হয়েছে। এতে করে করোনা ল্যাবটি অচল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বগুড়ায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করা জীবেশ কুমার প্রামাণিক নামে একজন চিকিৎসককে বদলির তালিকায় রাখা হয়েছে। এতে করে বোঝা যায় এটি অপরিকল্পিত, অগ্রহণযোগ্য ও হাস্যকর বদলি। যার কারণে হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে এবং সাধারণ রোগীরা কষ্ট পাবে। আমি মনে করি, স্বাস্থ্যখাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর অর্জনকে ম্লান করার জন্য একটি কুচক্রী মহলের ইশারায় এ বদলি আদেশ হয়েছে। তারা মনে করেছেন- মেডিকেল কলেজ বন্ধ তাই এসব শিক্ষক মনে হয় বাড়িতে বসে আছেন। কিন্তু মেডিকেলের শিক্ষকরা তো হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন।’
কোভিড-১৯ মোকাবিলায় গঠিত স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) বিভাগীয় সমন্বয়ক ও সাংগঠনিক সম্পাদক আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, ‘চমেক হাসপাতালে কোভিড রোগীর পাশাপাশি নন-কোভিড রোগীও আছে। একসঙ্গে এত চিকিৎসককে বদলিতে চমেকের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেডিকেলে প্রায় দুই হাজার নন-কোভিড রোগী আছে। তাদের চিকিৎসা সেবা ব্যাহত হবে। বিষয়টি নিয়ে আমি ইতোমধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে এসএমএস দিয়েছি। এরপর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারা আমাকে হাসপাতালের প্রয়োজনে যা করার তা করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’