ওয়েব ডেস্ক: নির্ধারিত সময়ে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল তহবিল অর্থাৎ ‘ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডে’ মাত্র নগদ ২১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট দূর করতে ফান্ডটি গঠন করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
দীর্ঘদিন অবণ্টিত ও দাবিহীন পড়ে থাকা নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ বাবদ ফান্ডের আকার দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। গত ৩০ আগস্টের মধ্যে বিএসইসিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর এ টাকা জমা দেওয়ার কথা ছিল। সেই নির্ধারিত সময়ে নগদ লভ্যাংশের ১২০০ কোটি টাকার মধ্যে ২১০ কোটি টাকা জমা পড়ে। তবে বাকি লভ্যাংশের অর্থ দ্রুত চলে আসবে বলে প্রত্যাশা বিএসইসির।
বিএসইসির তথ্য মতে, গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত মালিকানাহীন কিংবা মালিকানা জাটিলতায় পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানি ও মিউচুয়্যাল ফান্ডের বিতরণ না হওয়া নগদ ও বোনাস লভ্যাংশ এবং ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের পড়ে থাকা নগদ ১২০০ কোটি টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেয় বিএসইসি। এ নির্ধারিত সময়ে মাত্র ২১০ কোটি টাকা জমা পড়েছে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশই এখনো জমা পড়েনি।
নগদ লভ্যাংশের মতই একই অবস্থা বোনাস শেয়ার জমা রাখার। গত ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ বাবদ ১৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা বিএসইসির তহবিলে জমা হওয়ার কথা, কিন্তু নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানগুলো জমা দেয়নি। এদিকে ১৫ হাজার কোটি টাকার দাবিদার ৩ হাজার ৩৮৬টি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাবের কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, যারা নির্ধারিত সময়ে তহবিলে অর্থজমা দেয়নি, নিয়ম অনুসারে সেই সব প্রতিষ্ঠান জরিমানা কিংবা শাস্তি ভোগ করবে। কোনোভাবেই তাদের আর সময় দেওয়া হবে না।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ফান্ডটি গঠন ও পরিচালনা দুটি বড় চ্যালেঞ্জের বিষয়। প্রথম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে- এতোগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে ফান্ড রয়েছে, সেগুলো একত্রিত করা।
এই ফান্ডটি পরিচালনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মূখ্য সচিব নজিবুর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ১০ সদস্যের বোর্ড অব গভর্নরস করা হয়েছে।
বোর্ড অব গভর্নরসের অন্য সদস্যরা হলেন- বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক মো. সাইফুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তানজিলা দীপ্তি, ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারেক আমিন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ভাইস চেয়ারম্যান এ কে এম নুরুল ফজল বুলবুল, সেন্ট্রাল কাউন্টার পার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) স্বতন্ত্রো পরিচালক মোহাম্মদ তারেক, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি আজম জে চৌধুরী এবং আইসিএমএবির সাবেক সভাপতি এ কে এম দেলোয়ার হোসেন এফসিএমএ। বোর্ডের প্রথম সভাও গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
অবণ্টিত ও দাবিহীন লভ্যাংশ কী?
কোনো কোম্পানির লভ্যাংশ ঘোষণার পর তা তাদের ডিভিডেন্ড অ্যাকাউন্ট থেকে বিনিয়োগকারীদের নামে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নগদ লভ্যাংশ সরাসরি বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়। স্টক লভ্যাংশ জমা হয় তাদের বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টে।
যাদের নামে শেয়ার, তারা কেউ মারা গেলে, বিদেশে চলে গেলে, কিংবা দীর্ঘদিন খোঁজ না রাখলে তাদের ব্যাংক হিসাব বন্ধ বা অকার্যকর হয়ে যায়। বিও হিসাবের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে।
এমন ক্ষেত্রে লভ্যাংশের টাকা বা শেয়ার বিনিয়োগকারীর ব্যাংক বা বিও অ্যাকাউন্টে জমা না হয়ে কোম্পানির কাছে ফেরত যায়। বিনিয়োগকারীর মৃত্যুর পর অনেক সময় তথ্য বা কাগজপত্রের অভাবে তার মনোনীত উত্তরাধিকারও সেই টাকা বা শেয়ার আর দাবি করেন না।
এর বাইরেও আইনি জটিলতা বা অন্য কারণে লভ্যাংশ বিনিয়োগকারীর হাতে পৌঁছায় না অনেক সময়। তখন কোম্পানি ওইসব লভ্যাংশ ‘সাসপেন্ডেড’ হিসাবে জমা দেখিয়ে চূড়ান্ত আর্থিক বিবরণী তৈরি করে।