প্রত্যয় ওয়েব ডেস্ক: মহামারী করোনাভাইরাসের এ সঙ্কটময় সময়ে অর্থনীতিতে স্বস্তি জোগাচ্ছে প্রবাসীদের কষ্টের অর্থ রেমিটেন্স। ঈদ সামনে রেখে দেশে টাকা পাঠানোর প্রবণতা বাড়িয়ে দিয়েছেন প্রবাসীরা।
চলতি মে মাসের প্রথম ১৪ দিনে মহামারীর মধ্যেও প্রবাসী বাংলাদেশীরা রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন ৮০ কোটি মার্কিন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা)। যা গত বছরের একই সময়ের প্রায় সমান। এপ্রিলে প্রবাসীদের পাঠানো মোট অর্থের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ। করোনাভাইরাসের কারণে বছরের ব্যবধানে রেমিটেন্স কমার আশঙ্কা থাকলেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশি রেমিটেন্স এসেছে চলতি মাসের প্রথমার্ধে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আসন্ন ঈদ উপলক্ষে পরিবারের জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও বাড়তি অর্থ দিয়েছেন প্রবাসীরা। ফলে আশঙ্কা থাকলেও কমেনি রেমিটেন্স প্রবাহ। এই নিয়ে চলতি অর্থবছরের শুরু অর্থাৎ ১ জুলাই থেকে ১৪ মে পর্যন্ত ১০ মাস ১৪ দিনে মোট রেমিটেন্স আসল ১৫ দশমিক ৬৬ বিলিয়ন ডলার।
একদিকে রেমিটেন্স অন্যদিকে আমদানি কমে যাওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন বেশ সন্তোষজনক রয়েছে। আজ দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিটেন্স আহরণের প্রধান দেশগুলো করোনার প্রাদুর্ভাবে গত তিনমাস ধরে অচলাবস্থা। কাজ নেই, অনেকে ঘর থেকেও বের হতে পারছেন না। বেশিরভাগ দেশে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রবাসীরা চাইলেও দেশে রেমিটেন্স পাঠাতে পারেননি। যার কারণে গত দুইমাস রেমিটেন্সের প্রভাব কমেছে। তবে আস্তে আস্তে এখন বিশ্ব পরিস্থিতি উন্নত হচ্ছে। অচলাবস্থা অনেক দেশে স্বাভাবিক হচ্ছে। ব্যবসা-বাণিজ্য চালু হতে শুরু করেছে। তাই ঈদের সামনে আবারও রেমিটেন্স পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসীরা।
প্রতিবছরই ঈদের আগে দেশে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়ে। গত বছরে ঈদের আগে মে মাসে ১৭৪ কোটি ৮২ লাখ ডলারের রেকর্ড পরিমাণ রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। ওই সময়ে মে’র প্রথম ১৪ দিনে পাঠিয়েছিলেন ৮৭১ মিলিয়ন ডলার বা ৮৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, করোনার প্রাদুর্ভাবের সময়ে আগের মাস এপ্রিলে প্রবাসী বাংলাদেশীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে ১০৮ কোটি ১০ লাখ ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন। যা গত ৩০ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ৮৫ কোটি ৬৮ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
এদিকে চলতি বছরের এপ্রিলে পাঠানো রেমিটেন্স আগের বছরের এপ্রিল মাসের চেয়ে ৩৫ কোটি ডলার বা ২৪ দশমিক ৬৩ শতাংশ কম। গতবছর একই সময়ে দেশে রেমিটেন্স এসেছিল ১৪৩ কোটি ৪৩ লাখ ডলার।
এপ্রিলের আগের মাস মার্চে ১২৮ কোটি ৬৮ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছিল, যা গত বছরের মার্চ মাসের চেয়ে ১৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম। এদিকে রেমিটেন্সে সরকারঘোষিত দুই শতাংশ প্রণোদনা প্রবাসীরা সহজে যেন পান সেজন্য বেশকিছু শর্ত শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতদিন দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্সের প্রণোদনায় কোন ধরনের কাগজপত্র লাগত না। এর আওতা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জুলাই থেকে প্রবাসীদের পাঠানো পাঁচ হাজার মার্কিন ডলার বা পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত রেমিটেন্সে বিনা শর্তে কোন ধরনের কাগজপত্র ছাড়াই প্রণোদনার অর্থ প্রদান করা হবে। পাশাপাশি পাঁচ লাখ টাকার ওপরে কাগজপত্র জমা দেয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে। এতদিন প্রণোদনা পেতে হলে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স প্রাপক উত্তোলনের ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হতো। এখন তা বাড়িয়ে দুই মাস করা হয়েছে।
জানা গেছে, এতদিন দেড় লাখ টাকার নিচে পাঠানো অর্থের বিপরীতে রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য কোন কাগজপত্র লাগত না। তবে দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিটেন্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিটেন্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশী নিয়োগদাতার দেয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হতো। এছাড়া রেমিটেন্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে তাকে ব্যবসার লাইসেন্সের ফটোকপি দিতে হতো।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিটেন্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা এক হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছরের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিটেন্স আহরণ।
এদিকে রেমিটেন্স প্রবাহ বাড়া ও বিভিন্ন সংস্থার ঋণের কারণে রফতানি মন্দার মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক অবস্থায় রয়েছে। ১৭ মে পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৩ দশমিক ৮৪ বিলিয়ন ডলার।
উৎস: জনকন্ঠ