বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মনকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন দিলেও দুদকের মামলার কারণে তার দলীয় মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায়। যে মামলার কারণে তার দলীয় মনোনয়ন বাতিল হয়ে যায় অবশেষে সেই মামলা খারিজ করে দিয়েছে আদালত। মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁওয়ের সিনিয়র স্পেশাল জজ মামুনুর রশিদ দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তার দাখিলকৃত চুড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহন করে মামলার সকল আসামীদের দায় হতে অব্যাহতি প্রদান করেন। সেই সাথে মামলাটি নথিজাত করার আদেশ দেন।
চতুর্থ ধাপে অনুষ্ঠিতব্য ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে গত ২১ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও জেলায় ২০টি ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড। সেই তালিকায় ২১ নং ঢোলারহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তার বিরুদ্ধে দুদকের দায়েরকৃত মামলা তদন্তাধীন থাকার অভিযোগে ২৪ নভেম্বর সীমান্ত কুমার বর্মনের মনোনয়ন বাতিল করে স্কুল শিক্ষক অখিল চন্দ্র রায় কে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। এদিকে ২৯ নভেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই বাছাই কালে ঋণখেলাপির অভিযোগে ওই ইউনিয়নে নৌকার মনোনীত প্রার্থী অখিল চন্দ্র বর্মনের মনোনয়ন বাতিল করে রিটানিং অফিসার ও উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম।
এ ঘটনার পরদিন ৩০ নভেম্বর ঠাকুরগাঁও সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালত চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন সহ ৬ আসামীকে মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেয়। মামলার অপরাপর আসামী ছিলেন উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিংহ রায়, খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম, শাহাবুদ্দিন আহাম্মদ ও এসএম গোলাম মোস্তফা।
বিচারক তার পর্যালোচনায় উল্লেখ্য করেন, মামলা দায়েরের পূর্বে প্রকল্প কমিটি কর্তৃক অব্যায়িত অর্থ ট্রেজারী চালানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত প্রদান করায় সরকারি টাকা আত্মসাৎ অবশিষ্ট নাই মর্মে প্রতীয়মান হয়। তাছাড়া প্রকল্প কমিটির সভাপতিগণ তাদের সাক্ষর স্বীকার করে জবানবন্দি প্রদান করায় জাল জালিয়াতির অপরাধ প্রমান করাও সম্ভব নয়। যেহেতু দুর্নীতি দমন কমিশন স্বয়ং অভিযোগপত্র দায়ের কালীন আসামীদের বিরুদ্ধে অপরাধের অস্তীত্ব পায়ন, সেহেতু সার্বিক পর্যালোচনায় দাখিলকৃত চুড়ান্ত রিপোর্ট গ্রহন যোগ্যতার দাবি রাখে।
উল্লেখ্য, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জুন মাসে জিআর প্রকল্পের আওতায় ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ওয়াজ মাহফিল, নামযজ্ঞ ও মাদরাসার এতিমখানায় খাবারের জন্য জেলা প্রশাসক ২১৭ টন চাল বরাদ্দ দেয়। এর মধ্যে ২১ নং ঢোলারহাট ইউনিয়নের বেশ কিছূ প্রকল্পে ৩৪ টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়ী। সে সময় অভিযোগ ওঠে চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণ প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা ও খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জাল কাগজপত্র তৈরি করে বরাদ্দের চাল উত্তোলন করে কালোবাজারে বিক্রি করে অর্থ আত্মসাৎ করে।স্থানীয়দের অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৯ সালের মার্চে অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তদন্তকালীন সময়ে চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মণ ওই বছরের ১৪ জুলাই কয়েকটি প্রকল্পের বিপরীতে প্রকল্প মূল্যের অর্থ ২ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৮ টাকা ১০ পয়সা সরকারি কোষাগারে জমা দেন।
এদিকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া অখিল চন্দ্র বর্মন মনোনয়ন বাতিলের আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার বরাবরে আপিল দায়ের করেছেন। আপিলের সঙ্গে তিনি রুহিয়া শাখা জনতা ব্যাংকে পাওনা টাকা পরিশোধ অন্তে ব্যাংকের প্রদত্ত প্রত্যয়ন পত্র দাখিল করেছেন যেখানে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ২৮ নভেম্বর সাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ্য করেছেন অখির চন্দ্র রায়ের নামে গ্রহীত চাকুরিজীবি ঋণ হিসাবটি ২৮/১১/২০২১ তারিখে সুদাসল সহ পরিশোধ করিয়াছেন। বর্তমানে তাহার নিকট ব্যাংকের কোন দায় দেনা নেই।
সদর উপজেলার ১৯ টি ইউনিয়নে নির্বাচনী মাঠে প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকরা মাঠ চষে বেড়ালেও ঢোলারহাট ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের পক্ষে এখনও ভোট প্রচারনা শুরু হয়নি। এ অবস্থায় নৌকার মাঝি হিসেবে শেষ পর্যন্ত কে থাকবেন নির্বাচনী মাঠে এই নিয়ে ঢোলারহাট ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ এলাকার সাধারণ মানুষ চরম উৎকন্ঠায় রয়েছেন।