মোঃ আহসান হাবীব ঃ
চীনের জিয়াংসু প্রদেশ, জেংজিয়ান শহরের পশ্চিমে ইউন্টাই পর্বতের পাদদেশে শিজিংদু প্রাচীন রাস্তায় অবস্তিত। যা ইউন্টাই পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত একটি ভাঙা পর্বত পথে নির্মিত প্রাচীন সভ্যতার একটি ধ্বংসাবশেষ। এটি একটি ঐতিহাসিক স্থান যা খাঁড়া ভাঙা পর্বতের সাথে সংযুক্ত। জেংজিয়ান ইতিহাস ও সংস্কৃতির শহরের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় সর্বাধিক সংরক্ষিত অঞ্চল।
প্রাচীন এ রস্তাটি দৈর্ঘ্য প্রায় এক হাজার মিটার। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ষষ্ঠ রাজবংশের শাসনামলে। এরপর থাং, সং, ইউয়েন, মিং এবং চিং শাসনামলে এর ব্যাপক সংস্কারের মধ্য দিয়ে এ স্থাপত্য শৈলী বর্তমান দৃশ্যমান নির্মাণে এসে দাঁড়িয়েছে। এ স্থাপত্য শৈলী নিঃসন্দেহে বহন করছে চৈনিক সভ্যতার আদিমতম নিদর্শন হিসেবে।
সুপ্রাচীন কাল থেকে চৈনিক এ সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করেছে থাং, সং, ইউয়েন, মিং ও চিং রাজবংশ। এখানে শিজিংদুর সংক্ষিপ্তসার ইতিহাস ফুটে আছে, প্রাচীন লোকেদের মুখে ও স্থাপনার পরতে পরতে। যা জানান দিচ্ছে নিজ ঐতিহ্যকে।
এখানে দাঁড়িয়ে আছে থাং কোডের প্রধান, সং রাজবংশের সুপ্রাচীন রাস্তাগুলো, ইউয়েন রাজবংশের পাথরের সুবিশাল টাওয়ার, মিং রাজবংশের জীবন রক্ষাকারী সমাজ এবং চিং শাসনামলের আধুনিক ব্রিটিশ কনস্যুলেট। এখানের সমস্ত স্থাপনা শৈলী সুনিপুণ জাঁদরেল নকশার সাথে প্রতিষ্ঠিত। এখানের বেশিরভাগ দরজাই পাথরের নির্মিত ও বেশ প্রাচীন। একই সাথে প্রাচীন শিলালিপির নিদর্শন বেশ স্পষ্ট। এ অঞ্চল প্রাচীনতম সময়ে এ শহরটি দুর্গে অবস্থিত ও ব্যবসায়িক ভ্রমণে সমৃদ্ধ ছিল। এ প্রাচীন রাস্তায় যে কোন পর্যটকের হাঁটা, নিজের কাছে ভ্রমন পিপাসুদের মনে হতে পারে, সে হাঁটছে কোন একটি প্রাকৃতিক ইতিহাসে ফেঁপে উঠা কোন জাদুঘরে।
শিজিংতু রাস্তাটি চিং রাজবংশের পর থেকে প্রাণবন্ত বানিজ্যিক রাস্তায় পরিনত হয়েছিল। জেংজিয়ান শব্দের অধীনে ৫৩ টি ঢাল ও ৫৩ টি স্তর রয়েছে। এ ৫৩ টি ঢালের নাম পর্যায়ক্রমে বৌদ্ধ ধর্মের ৫৩ টি মানচিত্রের উৎস থেকে এসেছে। এবং এ ৫৩ টি ঢাল শিজিংদুর এ পথের শুরু মাত্র। যা যে কাউকে সমৃদ্ধ চৈনিক সভ্যতার ইতিহাসের বার্তা দিবে।
বর্তমানে এখানে রয়েছে জিংজিয়ান জাদুঘর। আদিম সমাজ থেকে মিং ও চিং রাজবংশ পর্যন্ত ৩০ হাজারেরও বেশি ঐতিহাসিক, শৈল্পিক এবং বৈঞ্জানিক ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। যার মধ্যে জাতীয় স্তরের সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষও রয়েছে। জিংজিয়ানের এ জাদুঘরটি এখন একটি জাতীয় সাংস্কৃতিক ধ্বংসাবশেষ সংরক্ষণ ইউনিট।
এখন জেংজিয়ানের এ প্রাচীন রাস্তায় পর্যটন বিকাশের জন্য অনেকগুলো সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল প্রকল্প রয়েছে। এটি বর্তমানে ব্যবসায়িক পরিবেশে পূর্ণ। রাস্তার দু পাশে রেস্তোরাঁর নানারকম ভোজের আল্লাদি গন্ধ ও হাজার বছরের পুরনো ফেরি, একশ বছরের পুরনো রাস্তা এবং প্রকৃতির অপার মাধুর্য। যে কোন ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য লম্বা কোন ছুটির সময় কাটাতে এ সাংস্কৃতিক পরিবেশটি হবে উপভোগ্য।