প্রত্যয় নিউজ ডেস্কঃ মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। সোমবার (২৭ জুলাই) এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সেমিনারে সরকারের এই পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, মহামারির প্রকোপ কমলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে যদি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হয়, তাহলে এ বছরের মধ্যেই প্রাথমিকের শিক্ষাবর্ষ শেষ করা হবে। আর সেপ্টেম্বরে স্কুল না খুললে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ শিক্ষাবর্ষ দীর্ঘায়িত হতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখনই খুলুক, এবার প্রাথমিকের সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
মহামারীর কারণে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। আপাতত ৬ অগাস্ট পর্যন্ত সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করে রেখেছে সরকার, যদিও এরপর স্কুল খোলা যাবে কি না, সে নিশ্চয়তা এখনও মেলেনি।
‘করোনায় প্রাথমিক শিক্ষায় চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে জাকির হোসেন বলেন, সেপ্টেম্বরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা গেলে শিক্ষাবর্ষের ব্যাপ্তি আর না বাড়িয়ে ডিসেম্বরেই তারা শেষ করতে চান।
তবে প্রয়োজনে চলতি শিক্ষাবর্ষ বাড়িয়ে এবং পরের শিক্ষাবর্ষ কমিয়ে আনার পরিকল্পনাও রাখা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বর্তমান শিক্ষাবর্ষ আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিদ্যালয় খোলার পর কতটুক সিলেবাসের উপর পরীক্ষা নেওয়া হবে সেই পরিকল্পনা করা হচ্ছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিদ্যালয় সেপ্টেম্বরে যদি খোলে, কিংবা না খুললে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া যায় সে বিষয়ে সংশোধিত সিলেবাস প্রণয়নে আমরা কাজ হাতে নিয়েছি। যদি খোলা হয়, তাহলে এক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের আছে, না হলে আরেক ধরনের প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে।
প্রাথমিক সমাপনীসহ ক্লাসভিত্তিক পরীক্ষা কীভাবে নেওয়া যায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি তা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বরং এ পরীক্ষা আরও যুগপযোগী করতে একটি বোর্ড গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আকরাম-আল-হোসেন জানান, আগামী দুই-এক সপ্তাহের মধ্যে প্রাথমিকের ক্লাস রেডিওর মাধ্যমে প্রচার শুরু করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পোষাতে ‘রিকভারি প্ল্যান’ করছেন তারা। স্কুল খোলার পর কতটুকু সময় পাওয়া যাবে, তার আলোকে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
তিনি বলেন, ৪৫ শতাংশ পরিবারে টিভি আছে বলে আমাদের জরিপে এসেছে। অন্যের বাড়ি গিয়ে কিছু শিক্ষার্থী টিভির ক্লাস দেখছে।
তবে গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, এই মহামারির মধ্যে শিক্ষায় বৈষম্য বাড়ছে, টিভির ক্লাসের আকর্ষণ হারিয়ে যাচ্ছে। ইন্টারনেটের ওপর করের বোঝা কেন আরোপ করা হল? কোন অদৃশ্য কারণে এটা প্রত্যাহার করা হল না? অবিলম্বে এটা প্রত্যাহারের দাবি করছি, নইলে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সংযোগ রাখা সম্ভব না। অনলাইন ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ কীভাবে গড়ব?
অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে রাশেদ রাব্বী নামে একজন অভিভাবক বলেন, তার দুই সন্তান ঢাকার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ছে। সংসদ টিভির ক্লাস তাদের খুব কম কাজে আসছে, কারণ এই টিভির শব্দ ও ছবি ‘নিম্নমানের’।
রংপুর ক্যাডেট কলেজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রওশন আরা বলেন, স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থী পরিবারের জন্য বিভিন্ন ধরনের কাজে যুক্ত হয়েছে। টিভির মাধ্যমে তৃণমূল পর্যন্ত শিক্ষা পৌঁছানো ‘বেশ কষ্টসাধ্য’।
ইরাব সভাপতি মুসতাক আহমদ, সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক, সমকালের প্রতিবেদক সাব্বির নেওয়াজ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। ইরাবের সাংগাঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ জসীম অনুষ্ঠানে ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন।
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন