দৈনিক প্রত্যয় ডেস্ক:জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়া খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে শনিবার (১১ এপ্রিল) দিনগত রাতে।
তার আগে রাজধানীর গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে সন্দেহজনকভাবে রিকশায় ঘোরাঘুরি করছিলেন দণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ। সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন তিনি বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি। তাকে গ্রেফতারের পর সাংবাদিকদের এমনটাই দাবি করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এদিকে জানা গেছে, খুনি মাজেদ এতদিন আত্মগোপন করেছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতায়।
কলকাতার গণমাধ্যম বর্তমান পত্রিকার অনুসন্ধনীমূলক এক প্রতিবেদনে জানা যায়, পার্কস্ট্রিটে বসবাস করতেন খুনি মাজেদ। খুনি মাজেদের ছবি বাংলাদেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে দেখে অবাক হয়েছে সেই মহল্লার বাসিন্দারা।
বঙ্গবন্ধুর খুনি আব্দুল মাজেদ নয় পার্ক স্ট্রিট তাঁকে চেনে আলি আহমেদ ওরফে ইংরেজির মাস্টারমশাই হিসেবে। এলাকার লোকে জানত, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে থেকে পাস করেছেন মাস্টারমশাই। টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাতেন তিনি। প্রথমে তালতলার ভাড়া বাড়িতে একাই থাকতেন মাজেদ। পরে পার্ক স্ট্রিটে চলে আসেন।
২০১১ সালে তাঁর থেকে ৩২ বছরের ছোট পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার সেলিনা বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। তাদের ছয়বছরের এক মেয়ে রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরেই বাহাত্তর বছর বয়স্ক মাজেদের শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পিজি হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষাও হয়।
২২ ফেব্রুয়ারি পিজি হাসপাতাল থেকে সেই রিপোর্ট আনতে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। আর বাড়ি ফেরা হয়নি মাজেদের। স্বভাবতই উদ্বিগ্ন স্ত্রী রাতে পার্ক স্ট্রিট থানায় মিসিং ডায়েরি করেন। তদন্তে শুরু করে পার্ক স্ট্রিট থানা। পিজি হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ তন্নতন্ন করে ঘাটলেও হদিশ মেলে না তার।
এরপর পুলিশ মাজেদের ভাড়া বাড়ি থেকে একটি ব্যাগ পায়। সেই ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে সিম কার্ড, আধার কার্ড, ভোটার আইডি, ভারতীয় পাসপোর্ট এবং এক মহিলা সহ তিনজন শিশুর ছবি পাওয়া যায়। স্ত্রী সেলিনা পুলিশকে জানায়, ব্যাগের মতো তাঁর অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসে কাউকে হাত দিতে দিতেন না মাজেদ।
মহল্লায় খুব একটা মেলামেশা করতেন না তিনি। টিউশনির পাশাপাশি বড়জোর এলাকার এক চায়ের দোকান, রেশন দোকান এবং এক বিল্ডার্সের দোকানে আড্ডা দিতেন মাজেদ। বাড়ির সদর দরজায় সব সময় তালা লাগানো থাকত। বাইরের কাউকে বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এভাবেই আঠারো-উনিশ বছর কলকাতায় আত্মগোপন করেছিলেন আব্দুল মাজেদ।