আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমিকে হত্যা করতে তার বাসভবনে ড্রোন হামলায় জড়িত ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনী। ইরাকের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও মিলিশিয়া সূত্রের বরাত দিয়ে সোমবার (৮ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। গত রোববার ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
ইরাকের বেশ কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও মিলিশিয়া সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমিকে হত্যা করতে তার বাসভবনে ড্রোন হামলায় ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্তত একটি গ্রুপ জড়িত।
তবে অন্য আরও বেশ কয়েকটি সূত্র এবং বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমির বাসভবনে এই ধরনের হামলায় তেহরানের সম্মতি দেওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ইরান চায়, তাদের পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্তে সহিংসতা কমে আসুক এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকুক। আর তাই তেহরানের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অযৌক্তিক।
গত রোববার বিস্ফোরক-বোঝাই তিনটি ড্রেনের সাহায্যে ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমি অক্ষত থাকলেও তার বেশ কয়েকজন নিরাপত্তারক্ষী আহত হন। খাদিমির বাসভবনটি রাজধানী বাগদাদের অত্যন্ত সুরক্ষিত এলাকা বলে পরিচিত গ্রিনজোনে অবস্থিত।
বাগদাদের ওই গ্রিনজোনে বহুসংখ্যক সরকারি দফতর এবং বিদেশি দূতাবাস অবস্থিত। এমন সুরক্ষিত এলাকায় ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ড্রোন হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। হামলার পর ইরাকজুড়ে উত্তেজনা দেখা দেয়।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ইরানপন্থি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর সমর্থকরা বাগদাদের গ্রিনজোনের কাছে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। সেসময় তারা ইরাকের সর্বশেষ পার্লামেন্ট নির্বাচনের ফলাফলের বিরোধীতা করেন। কারণ সর্বশেষ নির্বাচনে ইরাকি পার্লামেন্টে কিছু ক্ষমতা হারিয়েছেন ইরানপন্থিরা।
ইরাকি কর্মকর্তারা ও বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমির ওপর ড্রোন হামলার মাধ্যমে এই বার্তা দেওয়া হয়েছে যে- সরকার গঠনের ক্ষেত্রে ইরানপন্থিদের না রাখা হলে বা গুরুত্ব দেওয়া না হলে অথবা রাষ্ট্রযন্ত্র-জুড়ে তাদের যে দখল ও প্রভাব রয়েছে সেগুলোকে চ্যালেঞ্জ করা হলে তারা এ ধরনের হামলা পরিচালনা ও সহিংসতা সৃষ্টি করতে সক্ষম।
ইরাকের শিয়া মুসলিম মিলিশিয়া বাহিনীগুলোর বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের হামদি মালিক বলছেন, ‘হামলার লক্ষ্য ছিল- পরিষ্কারভাবে এই বার্তা দেওয়া যে, আমরা ইরাকে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করতে পারি। আমাদের হাতে অস্ত্র আছে এবং আমাদের সেই ধরনের ক্ষমতা আছে।’
ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ড্রোন হামলার দায় কেউ স্বীকার করেনি। এছাড়া ইরানপন্থি মিলিশিয়া বাহিনীগুলোও তাৎক্ষণিকভাবে হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। এমনকি হামলার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকে ইরান সরকারও বিরত রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দু’জন আঞ্চলিক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আল-খাদিমিকে হত্যায় তার বাসভবনে ড্রোন হামলা হওয়ার আগে থেকেই বিষয়টি সম্পর্কে জানতো তেহরান। কিন্তু ইরানি কর্তৃপক্ষ হামলা চালাতে কোনো নির্দেশনা দেয়নি।
ইরাকের মিলিশিয়া সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, হামলার পর গত রোববারই ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কুদস ফোর্সের কমান্ডার ইরাক সফর করেন। সেসময় তিনি ইরাকের আধা-সামরিক বাহিনীর নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সহিংসতা ও উত্তেজনা আরও না বাড়ানোর অনুরোধ করেন।
এছাড়া না প্রকাশ না করার শর্তে ইরাকের দু’জন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সোমবার রয়টার্সকে জানান, কাতাইব হিজবুল্লাহ ও আসাইব আহল আল-হক নামে দুটি মিলিশিয়া গ্রুপ একসঙ্গে রোববার ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে হামলা করেছে।
উল্লেখ্য, গত বছরের মে মাসে ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন মোস্তফা আল-খাদিমি। এর আগে তিনি দেশটির গোয়েন্দা প্রধান হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।