আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ডিজেলের বদলে অভ্যন্তরীণ সব নৌযান ও আর্মি ট্রাক মিথানলে চালানোর পরিকল্পনা করছে ভারত। এতে দেশটির আমদানি তেলের নির্ভরতা অনেকাংশে কমে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নৌযানগুলোর ডিজেল ইঞ্জিন মিথানলে চালানোর উপযোগী করে তুলতে পুনে-ভিত্তিক ডেকান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ভারত সরকার। ডেকান ওয়াটার ট্রিটমেন্ট জানিয়েছে, তারা তাদের সুইডিশ অংশীদারের সহায়তায় প্রকল্পটি এগিয়ে নেবে
মিথানল একটি নিম্ন-কার্বনযুক্ত জ্বালানি। প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা এবং শহুরে বর্জ্য, বায়োম্যাস বা পুনর্ব্যবহৃত কার্বন ডাই অক্সাইডের মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে এটি তৈরি করা যায়। মিথানল পেট্রল, ডিজেল, এমনকি ইথানলের চেয়েও সাশ্রয়ী।
ইকোনমিক টাইমসের খবর অনুসারে, মিথানল ব্যবহারে শুধু ভারতের তেল আমদানির প্রয়োজনীয়তাই কমবে না, এটি প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে দেশটির প্রতিশ্রুতি পূরণেও সহায়ক হবে।
উচ্চপদস্থ ভারতীয় কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, এ প্রকল্পের অধীনে হলদিয়া, বারাণসী ও এলাহাবাদে অভ্যন্তরীণ নৌযানগুলো (মিথানল ব্যবহারে) রূপান্তরের ব্যবস্থা করেছে ভারত সরকারের নীতিনির্ধারণী থিংক ট্যাংক নীতি আয়োগ।
প্রকল্পটি ডেকান স্ক্যান্ডিনাওস ইন্ডিয়ার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। এটি ভারতের ডেকান ওয়াটার ট্রিটমেন্টের ৭০ শতাংশ ও সুইডেনের স্ক্যান্ডিনাওসের ৩০ শতাংশ অংশীদারত্বে গঠিত একটি যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান।
মিথানলের ব্যবহার বাড়ানোর মাধ্যমে ভারতের অপরিশোধিত তেল আমদানি ২০ শতাংশ কমানোর পরিকল্পনা করেছে নীতি আয়োগ। এটি বাস্তবে রূপ নিলে দেশটিতে পরিবেশ দূষণ ৪০ শতাংশ কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পরিকল্পনার আওতায় অন্তত ৫০০ নৌযানকে শতভাগ মিথানল-চালিত হিসেবে রূপান্তরিত করা হবে। এর ফলে নদী ও সমুদ্রের দূষণ কমবে। এছাড়া ভারতের সব আর্মি ট্রাকও ডিজেলের বদলে মিথানল-চালিত করা হতে পারে। বদলে যেতে পারে ডিজেল-চালিত রেল ইঞ্জিনগুলোও। ভারত এরই মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে মিথানল উৎপাদন বাড়িয়েছে।
ডেকান স্ক্যান্ডিনাওস ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান অনিমেষ সরকার বলেন, দেশে বিকল্প জ্বালানির প্রচার ও ব্যবহারের জন্য ভারত সরকারের উদ্যোগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ‘মিথানল অর্থনীতি’ কর্মসূচি চালানোর লক্ষ্য তাদের। সেই অনুসারে, অন্তর্দহন ইঞ্জিনগুলোর জন্য মিথানল সমাধানের নকশা ও সরবরাহের পাশাপাশি প্রচলিত জ্বালানি ইঞ্জিনগুলো রূপান্তর করা হবে।
ভারতে ট্যাক্সসহ গ্যাসোলিনের দাম প্রতি লিটার ৯৪ দশমিক ৪৯ রুপি। গ্যাসোলিনের সমতুল্য শক্তির ভিত্তিতে ট্যাক্সসহ ইথানলের খরচ আনুমানিক ৬৯ দশমিক ৯ রুপি ও মিথানলের খরচ ৩৭ দশমিক ৬ রুপি। অর্থাৎ, ইথানল ও পেট্রলের তুলনায় মিথানল ব্যবহার অনেক বেশি লাভজনক।
ভারতের জন্য কয়লা থেকে মিথানল উৎপাদন অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক গ্যাস, ন্যাফথা, বায়োম্যাস প্রভৃতিও হতে পারে এর বিকল্প উৎস।