দৈনিক প্রত্যয় ডেস্ক:করোনা বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনের অনেক কিছু। বদলে গেছে সম্পর্কের বা আবেগের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি কলকাতার একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে মা ও সন্তানের মাঝে করনার কিভাবে অমানবিকতার নিষ্ঠুর দেয়াল তুলে দিয়েছে।
তবলিগ জামাতের কাজে যোগ দিয়ে ফেরা ছেলে এখন রয়েছেন বাধ্যতামূলকভাবে রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে। এর মধ্যেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হল তার মায়ের। কিন্তু চেষ্টা করেও মাকে শেষ বারের মতো দেখতে পেলেন না ছেলে। হাজির হতে পারলেন না মায়ের জানাজায়।
তপসিয়ার বাসিন্দা, মহম্মদ ইশতিয়াক তবলিগ জামাতের কাজে এক মাস ধরে বাঁকুড়ায় ছিলেন। গত ১ এপ্রিল পুলিশ তাঁকে রাজারহাটের কোয়রান্টিন সেন্টারে এনে রাখে। ইতিমধ্যে গত রবিবার রাতে তার মা হাজরা খাতুন হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান। গভীর রাতে ফোনে মায়ের মৃত্যুসংবাদ পান ইশতিয়াক।
বৃহস্পতিবার ফোনে ইশতিয়াক বলেন, ‘মাকে শেষ দেখা দেখতে এবং মরদেহের সামনে নমাজ পড়তে চেয়ে হজ হাউস কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু সব চেষ্টাই বিফলে গেল।’
ইশতিয়াক জানান, হজ হাউসের অনুমতিক্রমে সোমবার দুপুরে তাঁর বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ি পাঠানো হয়েছিল। পুলিশের সঙ্গে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে তিনি জানতে পারেন যে, স্বাস্থ্য দফতর থেকে বাড়ি যাওয়ার অনুমতি মেলেনি।
রাজ্য হজ কমিটির মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মহম্মদ নকি বলেন, ‘ইশতিয়াক যাতে মাকে শেষ দেখা দেখতে পান, সে জন্য চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হয়নি।’ তিন ভাইয়ের মধ্যে ইশতিয়াক মেজো ছেলে। বাকি দুই ভাই কর্মসূত্রে আপাতত রাজ্যের বাইরে। লকডাউনের জেরে সেখানে আটকে পড়েছেন তাঁরাও। ফলে তিন ছেলের অনুপস্থিতিতে মায়ের শেষকৃত্যের কাজ করেছেন পাড়ার মসজিদের ইমাম।
মাকে সঙ্গে দেখা না হওয়ার দুঃখ তাঁকে কুরে কুরে খেলেও অবশ্য পরিস্থিতির বাস্তবতা বুঝতে পারছেন ইশতিয়াক। তাঁর কথায়, ‘‘কাগজে পড়েছি, এক হাসপাতালের কোয়রান্টিন সেন্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক রোগীদের ফেলে মৃত মাকে শেষ বারের মতো দেখতেও যাননি। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই খবর ভাইরাল হয়েছে। ওই চিকিৎসকের মতো আমারও মায়ের সঙ্গে দেখা হল না।’’
নিউ টাউনের মদিনাতুল হুজ্জাজের ওই কোয়রান্টিন সেন্টারে এখন তবলিগ জামাতের ৩০৩ জন সদস্য রয়েছেন। এঁদের মধ্যে বিদেশি ১০৮ জন, কলকাতার ৮৬ জন। বাকিরা মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি এবং এ রাজ্যের বাসিন্দা। হজ কমিটির আধিকারিক নকি বলেন, ‘‘করোনা সন্দেহে এখান থেকে সাত জনের নমুনা এম আর বাঙুর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। প্রত্যেকের পরীক্ষার ফল নেগেটিভ এসেছে। ২৮ দিন হলে ওঁদের ছেড়ে দেওয়া হবে।’’