দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ যশোরে অতিরিক্ত মদ পান করে গত ৭২ ঘণ্টায় অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনা খতিয়ে দেখতে পুলিশ প্রশাসন অভিযান শুরু করেছে।
তারা হলেন- শহরের বেজপাড়ার বাসিন্দা নান্টু (৩৫), ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখালি গ্রামের সাহেব আলী (৬০), শহরতলীর ঝুমঝুমপুর মান্দারতলা এলাকার বাসিন্দা ফজলুর রহমান চুক্কি (৫০) এবং শহরের গরীব শাহ রোডের বাসিন্দা মনি বাবু (৪৫), শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬), বারান্দী মোল্লাপাড়ার আব্দুর রশিদ, সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান (৪৫), মনিরামপুরে মোহনপুর গ্রামের বাসিন্দা মোমিন (৪২) ও মুক্তার আলী (৪৫)।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যশোর সদর উপজেলার শেখহাটি কালীতলা এলাকার আরশাদ আলীর ছেলে শাহিন (৩৮) শুক্রবার রাত ১২টার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার ভোর ৪টায় তার মৃত্যু হয়। মদপানে তার মৃত্যু হয়েছে বলে হাসপাতালের ডাক্তার জানান।
চৌগাছা পৌর শহর লকডাউন যশোর কোতয়ালি থানার ওসি (ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড কমিউনিটি পুলিশিং) সুমন ভক্ত জানান, যশোর শহরের বেজপাড়ার নান্টুর মরদেহ শুক্রবার ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় তার ঘর থেকে পেথেডিনের খালি অ্যাম্পুল পাওয়া যায়। সে শহরের একটি মদের দোকানে কর্মচারী ছিলেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান ঝিকরগাছা উপজেলার কাটাখালি গ্রামের সাহেব আলী (৬০) নামে এক ব্যক্তি।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে সাহেব আলী নিজ বাড়িতে মদ সেবন করার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা ৭টার দিকে তিনি মারা যান।
যশোর শহরতলীর ঝুমঝুমপুর মান্দারতলা এলাকার শাখাওয়াতের ছেলে চিহ্নিত গাঁজা ব্যবসায়ী ফজলুর রহমান চুক্কি বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। স্থানীয়রা জানান, শহর থেকে মিন্টু নামে একজন তাকে দেশি মদ এনে দিতেন। অতিরিক্ত মদ পানের কারণে বৃহস্পতিবার দুপুরে চুক্কি অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার ৫টায় তার মৃত্যু হয়েছে।
যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের ফিরোজের বাড়ির ভাড়াটিয়া মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক চিশতির ছেলে মনি বাবুর বৃহস্পতিবার ভোরে হাসপাতালে মৃত্যু হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক আজিজুর রহমান জানান, মদের বিষক্রিয়ার কারণে মনি বাবুর হয়েছে। তার স্ত্রী হিরা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, মঙ্গলবার মনিবাবু মদ পান করে অসুস্থ হয়। বুধবার রাতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে বৃহস্পতিবার ভোরে তার মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোডের সাবুর (৪৬) নামে আরো এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তার পরিবার জানায়, বুধবার সে আর মনি বাবু একসাথে মদ পান করেছিল। যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবুর মারা যায়।
যশোর শহরের বারান্দী মোল্যাপাড়ার বাসিন্দা ও মদের দোকানের কর্মচারী আব্দুর রশিদ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করার পর তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার রাতে সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলার আবু বক্করের ছেলে আক্তারুজ্জামান(৪৫) নিজ বাড়িতে মদপানের পর মারা যান। শুক্রবার সকালে পরিবারের সদস্যরা তড়িঘড়ি করে তাকে দাফন করে দেন।
শুক্রবার বিকালে মনিরামপুরে মোহনপুর গ্রামের প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মোমিন (৪২) বিষাক্ত স্পিরিট পানে মারা যান। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তার আলী (৪৫) আরো এক ব্যক্তি মারা যান। তিনি মোহনপুরের আবুল কাশেমের ছেলে। মনিরামপুর থানার ওসি রফিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মোমিনের বাড়িতে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। তার পরিবারের দাবি সে অসুস্থ ছিলো। আর মুক্তার আলীর মৃত্যুর খবর তার জানা নেই ।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিষয়টা আমারা জেনেছি। এ বিষয়ে খোজ খবর নেয়া হচ্ছে। যারা এই ভেজাল মদের কারবার করছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। দায়িত্ব অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
দৈনিক প্রত্যয়/ জাহিরুল মিলন