নিজস্ব সংবাদদা:নিত্য নতুন সমস্যার কার্যকরী সমাধানের মধ্য দিয়ে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস্ (বিইউপি)-এর শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ প্রবেশের সূচনালগ্ন (১৭ মার্চ) থেকেই দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।শুরুতে অল্প কিছুদিনের জন্য বন্ধ ঘোষনা করা হলেও সার্বিক পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ধীরে ধীরে তার সময়সীমা বেড়েই চলছিল।সেই সময়ে কোভিড-১৯ এর প্রকোপে জর্জরিত বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর মতো এদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যেতে পারে,এমনটি অনুমান করেই মিরপুর-১২ সেনানিবাসে অবস্থিত বাংলাদেশের ২৯তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস্ (বিইউপি)-এর কর্তৃপক্ষ অনলাইনে ক্লাস চালু করার সিদ্ধান্ত নেন।
দেশের প্রথম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ফেসবুক লাইভ,জুম ও গুগল ক্লাসরুম-প্ল্যাটফর্মগুলোর মাধ্যমে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকেই ক্লাস শুরু হয়।কিন্তু শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের কাছে এটি নতুন মাধ্যমে হওয়ায় এবং বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ঢাকার বাইরে থাকায় প্রথম দিকে অনলাইন ক্লাসগুলো সবার জন্য ইতিবাচক ফলাফল বয়ে এনেছিল না।তখন বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ থেকে ৫’শতাধিক শিক্ষার্থীকে ইন্টারনেট প্যাকেজ দেওয়া হয়।তাছাড়া,কোম্পানির সাথে আলোচনা সাপেক্ষে বিশেষ ছাড় এবং লোনের মাধ্যমে ল্যাপটপ ও ফোন কেনার ব্যবস্থাও করা হয়। এছাড়াও ৪’শতাধিক দুঃস্থ শিক্ষার্থীকে দশ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্য করা হয়।এসব কার্যক্রমের প্রভাবে অল্প সময়ের মধ্যেই সমস্যাগুলো অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়।যার ফলশ্রুতিতে, অনলাইন ক্লাসে ৯৫ শতাংশ উপস্থিতি নিশ্চিত হয়।তাছাড়া,দেশের এই দুঃসময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির তহবিল থেকে সরকারি তহবিলে ৫০ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়।এসব কল্যাণকর পদক্ষেপের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টি অনেক প্রশংসিত হয়।
পরবর্তীতে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি) কর্তৃক অনুমোদন না পাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয় খুললে পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাই ফাইনাল পরীক্ষা ব্যতিরেকেই জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে আবার নতুন সেমিস্টারের অনলাইন ক্লাস চালু হয়।
তবে এবার সেমিস্টার ফি রসিদে ট্রান্সপোর্ট,মেডিকেল,লাইব্রেরি,
কালচারাল ইত্যাদি অনাকাঙিক্ষত ফি জুড়ে দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে চরম হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।মূলত, লকডাউন জনিত কারনে অনেকের পরিবারের পক্ষেই সেমিস্টার ফি যোগাড় করা ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তাই সেমিস্টার ফি শিথিলকরণের জন্য উপাচার্য বরাবর ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীর স্বাক্ষরসহ আবেদন প্রদান করা হয়।
আবেদনটি বিবেচনায় এনে বিশ্ববিদ্যালটির উপাচার্য মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান জানিয়েছেন,সেমিস্টার ফি কমানোর ব্যাপারে যাচাই বাছাই করে দুঃস্থ শিক্ষার্থীদের সাহায্যে করা হবে।তবে সেমিস্টার ফি রসিদে অনাকাঙিক্ষত ফি জুড়ে দেওয়ার ব্যাপারে আশানুরূপ কোন উত্তর পাওয়া যায়নি।যেহেতু লকডাউনের শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কল্যাণ তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের বিভিন্নভাবে আর্থিক সাহায্য করে আসছেন।সেমিস্টার ফি-এর মতো বড় ব্যাপারটাতেও তিনি একইভাবে শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াবেন বলে আশা রেখেছেন সবাই।
অনলাইনে চলমান শিক্ষাকার্য,ক্লাসরুমে বসে পাঠদান কর্মসূচির মতো শতভাগ ফলপ্রসূ না হলেও অনেকাংশেই ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনছে বা আনবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।এতে করে একদিকে যেমন ঘরবন্দি জীবনের একঘেয়েমিতার অবসান ঘটছে।অন্যদিকে সেশন জটও কমানো সম্ভব হবে।
করোনা মহামারীতে এখন বিশ্ববাসী উদ্বিগ্ন।নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ঠিক কবে নাগাদ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে ।তাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন কর্তৃক সকল বিশ্ববিদ্যালয়কেই অনলাইনে পাঠদান কর্মসূচি শুরু করার আহ্বান জানানো হয়েছে।সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস্ (বিইউপি) অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে আছে।তাই বলাই যায় যে, বিশ্ববিদ্যালয়টি অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আদর্শ হিসেবে কাজ করবে।