বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়ের বৈঠক ঘিরে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তীব্র হয়েছে। সারদা মামলার তদন্তে সিবিআইয়ের জেরার সম্মুখীন হওয়ার পর থেকেই মুকুল রায়ের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ায় তৃণমূল। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এবার প্রাক্তন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়কে নিয়ে আসতে চাইছেন অমিত। বাংলায় তাঁর প্রথম ভার্চুয়াল সভায় মুকুল রায়কে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ওই সভার পরই মুকুল রায় দিল্লি চলে যান। তাঁর সঙ্গে যান সদ্য তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া সব্যসাচী দত্তও। তার পর গত বুধ ও শুক্রবার দু’বার অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করেন মুকুল।
বৈঠকের ফলাফল জানা না গেলেও মুকুল রায় জানিয়েছেন, বৈঠক সন্তোষজনক। বাংলার আগামী বিধানসভা ভোট নিয়ে অমিত শাহ খুবই সিরিয়াস ভাবনাচিন্তা করছেন। অমিত শাহ অবশ্য প্রকাশ্যে বৈঠক নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। করার কথাও নয়। তবে বাংলা এবং রাজধানীর রাজনৈতিক মহল মনে করছে, ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটের কথা ভেবেই তিন বছর আগে মুকুল রায়কে বিজেপিতে নিয়েছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু এতদিন তাঁকে বড় কোনও পদ দেননি। শুধু দলের কর্মসমিতির সদস্য করে রেখে দিয়েছিলেন। ঘটনায় মাঝে মাঝে মুকুল রায় যে কিছুটা হতাশও হয়ে পড়তেন, তার প্রমাণ পাওয়া যেত দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে তাঁর উদাসীনতায়। তবে দিল্লির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে (পড়ুন অমিত শাহ) তাঁর মন বারবার নরম হয়েছে। এতদিন পরে এবার তাঁকে উপযুক্ত কাজে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন অমিত শাহ। তাই তাঁকে দিল্লি আসতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।
কিন্তু কী কাজে তাঁকে ব্যবহার করতে চাইছেন অমিত শাহ? এই প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজছে বাংলার রাজনৈতিক মহল। প্রথমেই শোনা যায়, মুকুল রায়কে মন্ত্রী করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু তাতে বাংলায় কতখানি লাভ বিজেপি নিজেদের ঝুলিতে নিতে পারবে, তা সংশয়ের বাইরে ছিল না। তবে বাবুল সুপ্রিয় এবং দেবশ্রী চৌধুরির পর আরও একজনকে বিজেপি কেন্দ্রের মন্ত্রী করছে, এটা বাঙালির কাছে একটা ইতিবাচক বার্তা যাবে, এমন একটা সহজ ব্যাখ্যা শোনা গিয়েছিল তখন। পাশাপাশি এই প্রশ্নও উঠেছিল, কোন মন্ত্রক পেতে পারেন মুকুল? সেই সময় শোনা গেল, কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্ব পেতে পারেন মুকুল। এর কারণ হয়তো ওই মন্ত্রকের বেশ কয়েকজন আধিকারিকের সঙ্গে মুকুল রায়ের নিয়মিত যোগাযোগের সংবাদ সূত্র মারফত চলে এসেছিল রাজনৈতিক মহলের কাছে। সেইজন্য এই ভাবনা কাজ করতে পারে।
কিন্তু মুকুল রায় কয়লা মন্ত্রক পেলে বাংলার রাজনীতিতে বিজেপির কী লাভ, তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে হয়রানই হতে হয়েছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। এরই মধ্যে আরও একটি খবর পাওয়া গিয়েছে সূত্র মারফত। তা হল, শুধু মুকুল রায়ই নন, বাংলা থেকে দু’জন নাকি মন্ত্রী হতে পারেন। তবে মুকুল রায় ছাড়া অপরজন কে, তার জবাব পাওয়া যায়নি। শোনা যাচ্ছে, রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হতে পারেন ওই দ্বিতীয়জন। সূত্রের খবর, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে দিলীপ ঘোষকে মুখ্যমন্ত্রী করতে চায় না দল। পরিবর্তে তাঁকে দিল্লিতেই কোনও মন্ত্রিত্বে নিয়ে আসতে চায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য অন্য ভাবনা রয়েছে অমিত শাহের। কিন্তু বাংলায় কাকে তিনি ওই পদের জন্য ভেবেছেন, তা জানা যায়নি। কখনও কখনও শোনা গিয়েছে, ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম। তবে সৌরভ সে–সব কথা স্রেফ গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
আরও একজনের কথা শোনা যাচ্ছে। তিনি নাকি তৃণমূলের কোনও নেতা। যিনি বর্তমানে রাজ্যের মন্ত্রীও। তবে তাঁর নাম জানা যায়নি। এদিকে, মুকুল রায় সম্বন্ধে এদিন শোনা গেল অন্য কথা। তাঁকে নাকি অমিত শাহ নিজের কাছেই রাখতে চাইছেন। তাই তাঁকে করা হতে পারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী। নিজেকে যেহেতু গোটা দেশ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে হচ্ছে, তাই অমিত শাহ চাইছেন নির্দিষ্ট ভাবে বাংলার জন্য ভাবার জন্য মুকুল রায়ই তাঁর সঙ্গে থাকুন। এই কাজের মধ্য দিয়ে বাংলার পুলিশ কর্তাদের চাপের মধ্যে রাখতে চাইছেন অমিত। উল্লেখ্য, নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলার পুলিশ কর্তাদের ভূমিকা নিয়ে অনেকবারই প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন মুকুল রায়। এমনকী, রাজ্যপালের কাছেও বেশ কয়েকবার অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনেই রয়েছেন দেশের আইপিএস অফিসাররা। মুকুল রায় ওই মন্ত্রকে থাকলে বাংলার পুলিশ কর্তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু মুকুল রায় মন্ত্রী হবেন কী করে? প্রশ্নটা রাজনৈতিক মহলের। মুকুল রায় এখন সাংসদ নন। তাই তাঁকে মন্ত্রী করা হলে ৬ মাসের মধ্যে কোথাও থেকে জিতিয়ে রাজ্যসভা বা লোকসভায় আনতে হবে বিজেপিকে। তাই মুকুল রায়ের ক্ষেত্রে কী হবে, আপাতত সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।