1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

“আমার ছেলেবেলা” কলমে :আবুল বাশার রাজীব

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০২০
  • ১২৩১ Time View

কতো পাল্টে গেছে সময়,জীবনধারা

কত পাল্টে গেছি আমি এবং আমরা। কতো বদলে গেছে আমাদের চিন্তা-ভাবনা-চেতনা, রাতের মায়াবী নিঝুম জ্যোৎস্না, স্নিগ্ধ সকালের শিশির ভেজা সেই সবুজ মাঠ; কৈশোরে খোলাপায়ে যে বিশাল মাঠে ছুঁয়েছি শিশিরের স্নিগ্ধতা, দুপুরের ঝাঁ ঝাঁ রোদ, বিকেলের সোনা রোদ, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি ভেজা মাঠ, নরসুন্দা নদীর টলটলে জল, মাঠের চার পাশের আমতলা, কাঠাল তলা, কৃষ্ণচূড়ার তলা, লিচুতলা, কামিনী তলা, মাঠের পাশের নদীর কূল ঘেষা ধানের ক্ষেত…..কতো বদলে গেছে এই সব কিছুই। আমি প্রায়ই একা একা পথ চলি আর ভাবি, এ’জীবনের ফেলে আসা দিনগুলো নিয়ে।

এলাকার ছেলেদের সংগে ফুটবল খেলে নরসুন্দায় গোসল করার সেই দিনগুলি

যখন ছোট্ট ছিলাম ভাবতাম কবে যে বড় হব! যখন যা খুশি করব, ইচ্ছামত ঘুরে বেড়াব, যা ইচ্ছা তা খাব, যতখুশি তা খাব। মাত্র ১টাকায় পাওয়া যেত চালতার আচার, আইসক্রীম, আমড়া, পেয়ারা, জাম, খেজুর, জলপাই, শনপাপড়ি, ১ টাকায় ২০টা হজমি, ১টাকায় ৪টা হাওয়াই মিঠাই, ১ টাকায় ২০টা সুপার বিস্কুট, বিলাতি পাউডার দুধ , নাবিস্কো চকলেট, চানাচুরভাজা,ঝালমুড়ি, ইত্যাদি অমৃতের স্বাদ পেতাম যা; খেয়ে তৃপ্তি মিটতনা কোনক্রমেই। কবে যে বড় হবো, ইনকাম করব, ইচ্ছামত মনের তৃপ্তি মিটিয়ে সব খাব।

বিভিন্ন ধরনের গ্রীস্মকালীন ফলমূল

সন্ধ্যা হলেই বাড়ি ফিরার তাড়া থাকবেনা, মা-বাবার বকুনি খেতে হবে না, পুকুরে-নদীতে যতক্ষন ইচ্ছা গোসল করব, সাতার কাটব, কলাগাছের বেলায় ভাসব, দামলাব, কেউ ধমক দিবেনা এই বাদড় পানি ঘোলা করছিস কেন? এতক্ষণ সাতার কাটছিস কেন?

ঝালমুড়ি ওয়ালা চাচা আমাদের অপেক্ষায়

১টাকায় কেনা ঘুড়িটা প্রতিযোগিতায় কেটে দূরে হারিয়ে গেলে সেদিনের মতো ঘুড়ি উড়ানো স্থগিত হয়ে যেত; পরবর্তী ঘুড়ি কিনে আবার উড়ানো। আর এখন ভাবি ছোট্ট ছিলাম সেইতো ভাল ছিলাম। কত সুন্দরইনা ছিল শৈশবের সেই নানারঙের দিনগুলো। আর এখন বড় হয়েছি ঠিকই কিন্ত সময় ও সুযোগের অভাবে সাধ্য থাকা সত্বেও সেসবের কিছুই করা হয়ে উঠেনা বা সম্ভব হয়ে উঠেনা বা ইচ্ছাই হয়না বা শরীরে সহ্য হয়না।

শৈশবে ঘুড়ি উরানো

চোট্টবেলায় তখন প্রতিটা মূহুর্ত , প্রতিটা বেলা,প্রতিটা ক্ষণ কাটত খুবই আনন্দে। কখনও কখনও অন্যদের তৈরি করা কলাগাছের ভেলায় করে লুকিয়ে লুকিয়ে নরসুন্দা নদীতে ভেসে যেতাম মাঝ নদীতে, কুটিঘাট থেকে কাচারীবাজার মসজিদ ঘাট , কখনও কখনো আখড়া বাজার ব্রীজের নীচে চলে যেতাম শাপলা তুলতে ।

বর্তমান আখরা বাজার ব্রীজ।ফটোগ্রাফার বন্ধু রেজুয়ান।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙত পাখীদের কলকাকলীতে।খুব ভোরে আব্বা আম্মার চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুম থেকে উঠে কলেজের বাগান থেকে ফুল কুড়াতাম।তারপর গুরুদয়াল কলেজ মাঠে যেতাম।গিয়েই মৌসুমভেদে বিভিন্ন খেলায় মেতে উঠতাম যেমন দাড়িয়াবান্দা, ফুটবল, ফুটবল খেলা শেষ করে আম্মাকে দেখানোর জন্য কিছুক্ষন পড়ার টেবিলে সময় কাটিয়ে আবার মাঠে গিয়ে গুডবারি ও দাগদাগ (ডাংগলি), সাতছাড়া( সাতটা শিক/মাটির হাড়ির টুকরো) আর একটা টেনিসবলের খেলা), বমবাস্টিং(বোমবাসটিং মানে একজনের পিঠে আরেকজন চামড়াবিহীন বল দিয়ে ঢিল মারা),চোরপুলিশ,মার্বেল খেলা, আমের আটি দিয়ে খেলা, বদ্দিরাজ গাছের বিচি দিয়ে জোড়-বেজোড় খেলা, সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে তাস বানিয়ে খেলা ইত্যাদি ;যখন যেটার সুযোগ ঘটত! এত খেলাধুলা রেখে স্কুলে যেতে মনই চাইতনা।

নরসুন্দা নদী সংলগ্ন বর্তমান গুরুদয়াল কলেজ চত্বর। ফটোগ্রাফার বন্ধু রেজুয়ান

তারপর স্কুলে গিয়ে কোনমতে সময়টা পার করে বাড়িতে এসে হাজিরা দিয়ে নরসুন্দা নদীর সাথে লাগানো বর্তমান গোল পুকুরে দলবেধে গোসল করা, লাফালাফি-ঝাপাঝাপি, ডুব দিয়ে মলাই মলাই খেলা, সাতার প্রতিযোগিতা, পানিতে ডুব দিয়ে কে সবচেয়ে বেশীক্ষন থাকতে পারে, নদীতে কলা গাছের ভেলায় করে কখনো বা কচুরীপানার তৈরি ভেলায় করে ঘুরে বেড়ানো। তারপর দুপুরের খাওয়া শেষে ঘুড়ি ওড়ানো, সুতা মাঞ্জা দেয়া, কোন ঘুড়ি কেটে আসলে কার আগে কে ধরব তার প্রতিযোগিতা করা,রাউন্ডাস খেলা, হাডুডু, তারপর সন্ধ্যায় বিদ্যুৎ না থাকলে বা পড়া ফাকি দিয়ে চোরপুলিশ, ফলামঞ্জি, তিল্লা এক্সপ্রেস ইত্যাদি। আর যেদিন স্কুল থাকতনা ;সেদিনটাকে মনে হত ঈদেরদিন এবং দিনটা কাটত ঈদের মত করেই।
দলবেধেঁ বিভিন্নরকম ভর্তা খেতাম তেতুল আর ধনে পাতা দিয়ে মেখে কোনদিন আম,কোনদিন জাম, মজি (কচি কাঠাল), কচি লাউ, জাম্বুরা, শসা, বড়ই, কামরাঙা যখন যেটা পাওয়া যেত।

বিভিন্ন রকম ভর্তা

কতইনা মজা হতো, শৈশবের সেই দিনগুলোতে যদি ফিরে যেতে পারতাম।

এখনো যখন কলেজের মাঠ দিয়ে বা মাঠের পাশ দিয়ে হেটে যাই, নদীর উপর তৈরি ব্রীজটি অতিক্রম করি, ছোট ছোট বালকদের খেলতি দেখি- পুকুরে সাতার কাটতে দেখি, নিজের অজান্তেই থমকে যাই, ইচ্ছে করে তাদের সাথে যোগ দিয়ে সাতার কাটি, খেলি।

এলাকার ছোট ছোট বালকদের সাথে আমি

ভুলেই যাই যে, আমি আর সেই ছোট্ট বালকটি নেই, আমি যে চল্লিশোর্ধ একজন মানুষ! কি যেন এক অজানা টানে দাড়িয়ে উপভোগ করতে থাকি ছোট্ট বালকদের কান্ডকারখানা। যখন হুশ ফিরে তখন আবার চলতে শুরু করি।

লেখক: মো: আবুল বাশার রাজীব

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..