গাজী মো. তাহেরুল আলম: ভোলা জেলার কুঞ্জেরহাট উপশহরের গ্রীণ ভিউ মডেল স্কুলের দুই শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) হয়ে গেল আনন্দমুখর শিক্ষা সফর।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পছন্দের ভেন্যু ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম চরফ্যাসন জ্যাকব ওয়াচ টাওয়ার,খামারবাড়ি, শিশুপার্ক ও বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক।
উপশহর কুঞ্জেরহাট বাজারের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপজেলা ভোলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রীন ভিউ মডেল স্কুলের শিক্ষা সফরের এবারের আয়োজনটি ছিল আগের চেয়ে একটু বড়োসড়ো। এ আয়োজনে বিদ্যালয়টির পরিচালক হাসান শিকদার, মো. বিল্লাল হোসেন, ফরিদ উদ্দিন সহ স্কুলের সকল শিক্ষকবৃন্দ অক্লান্ত পরিশ্রম করে শিক্ষা সফরের একটি চূড়ান্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। গত বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুইশত পনের জন ছাত্র-ছাত্রী অভিভাবক ও শিক্ষকবৃন্দ নিয়ে বারোটি মাইক্রোবাস ও একটি পিকআপ যোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে সকাল সাড়ে নয়টায় চরফ্যাসন অভিমুখে সফরের যাত্রা শুরু হয়। ভোলা-চরফ্যাশন মহাসড়কের উন্নয়ন কাজ চলার কারণে চরফ্যাসন খামারবাড়ি পৌঁছাতে সময় লাগে পৌনে চার ঘন্টা। ছোট্ট সোনামণিদের অনেকেই তখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে। অত্যুৎসাহী একদল কিশোর ও যুবক যারা পিকআপে সাউন্ড সিস্টেমসহ এ ভ্রমণযাত্রায় ছিলো তারা সবাই পথের উড়ন্ত ধূলোয় গন্তব্যে পৌঁছতেই অনেকটা লালবর্ণ হয়ে যায়।
চরফ্যাসনে প্রথম দর্শণীয় স্থান হিসেবে সবাই বেছে নেয় খামারবাড়ি। খামার বাড়ির সম্পর্কে কিছু কথা না বললেই নয়। ভোলার চরফ্যাসন উপজেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থান ‘খামার বাড়ি’। প্রতিদিন হাজারো মানুষ দুর-দুরান্ত থেকে এখানে ঘুরতে আসেন। বাহারি প্রজাতির গাছ আর ফুলের সমারোহ পুরো এলাকা জুড়ে। মনোমুগ্ধকর এ স্থানটি দর্শনার্থীদের মন কেড়ে নিয়েছে। চরফ্যাসন উপজেলা সদর থেকে ১৮ কিলোমিটার দুরে নজরুল নগর ইউনিয়নের ‘শারেক খালি’ গ্রামে এ দর্শনীয় স্থানটি অবস্থিত। খামারবাড়ি নামের এ দর্শনীয় স্থানটি পর্যটকদের কাছে এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রয়েছে এর সুখ্যাতি।
ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এ প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তুলেছেন।
খামার বাড়িতে ঘোড়া, হরিণ, বাঘ-সিংহ, কুমির, হাঁস, জিরাফসহ অসংখ্য বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও জীব বৈচিত্র্যের আদলে প্রতিকৃতি নির্মাণ করা হয়েছে। এখানে রয়েছে ২টি মিনি হ্যালিপেড। পাহাড়ের আদলে নির্মাণ করা হয়েছে সু-উচ্চ আধুনিক কিল্লা, যেখানে ছাতার নিচে বসে সময় কাটানো যায়। এছাড়াও বর্তমানে এখানে একটি আধুনিক মানের রেস্টুরেন্ট, ৭টি কটেজ, একটি বাংলো, দুটি সুইমিং পুল ও রিসিপসনসহ অত্যাধুনিক স্থাপনা নির্মাণ হচ্ছে। যা এ স্পটটিকে আরো আধুনিক ও দর্শনীয় স্থানে পরিণত করে তুলবে।
দর্শনীয় এ স্থানটিতে এসে প্রকৃতির নির্মল বাতাসে ঘুরে বেড়ানো ছাড়াও ছবি তোলা, আড্ডা দেয়া বা অবসর সময় কাটানোর জন্য অনন্য স্থান।
গ্রীনভিউ মডেল স্কুলের আমন্ত্রণে এখানে না এলে হয়তো জানা হতো না একজন জনপ্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবের অনন্য অসধারণ এ অবদানের দৃষ্টান্ত। পরিবার-পরিজন নিয়ে প্রতিদিন
এখানে ছুটে আসছেন অনেকেই। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ ঠিক যেমনটি চায়, তেমনিভাবে গড়ে উঠেছে খামারবাড়ি।
গ্রীন ভিউ স্কুলের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা খামারবাড়ি ঢুকেই যেনো সবাই বাঁধনহারা। কেউ ছবি তুলছেন, কেউবা ছায়াসুনিবিড় মনোরম পরিবেশে বৃক্ষ তলায় বসে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য নয়নভরে দেখছেন। ছোট্ট সোনামনিরা বাঘ-সিংহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রতিকৃতির কাছাকাছি গিয়ে তাদের আলিঙ্গন করছে।সত্যি নান্দনিক ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এত সুন্দর খামারবাড়ি চোখে না দেখলে বোঝানো দায়!
এদিকে শিক্ষা সফরের মুরুব্বিরা যোহরের আযান দিতেই খামার বাড়ি সংলগ্ন জামে মসজিদে ঢুকে গেলেন। নামাজ শেষে তারা আবার খামারবাড়িতে প্রবেশ করে দুপুরের খাবারের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন। ব্যস্ত বাবুর্চি এবং তার সহকারীরা আয়োজকদের ছাপ জানিয়ে দিলেন আরো দুই ঘন্টা পর ছাড়া খাবার পরিবেশন করা কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয়। তখন সবার পেটে প্রচন্ড ক্ষুধা! ছোট সোনামণিদের কে অভিভাবকরা নিজেদের মতো করে চিপস্, কেক, আইসক্রিম খাইয়ে মোটামুটি নিবৃত করে রাখলেন। অতঃপর সাড়ে তিনটার দিকে প্রথম ব্যাচে শিশুদেরকে খাবার পরিবেশন করা হল, দ্বিতীয় ব্যাচে খেতে বসছেন বড়রা। বিলম্বে হলেও খাবারের অতুলনীয় রান্নার স্বাদে সবাই বেশ তৃপ্ত এবং খুশি। খাবার পরিবেশনে গ্রীণ ভিউ স্কুলের শিক্ষকদের আন্তরিকতার এতোটুকু কমতি ছিল না। শিক্ষা সফরে বিশেষ আকর্ষন ছিলো শিক্ষক সোহেল চন্দ্রের গান ও আবৃত্তি পরিবেশন এবং শারীরিক কৎসরত প্রদর্শন। এরপর খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষ করতেই তখন আছর পেরিয়ে মাগরিব। সবাই মাইক্রোবাসে উঠে বসতেই যাত্রা শুরু হলো চরফ্যাসন ওয়াচ টাওয়ারের দিকে। শিক্ষার্থীরা সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ার ও শিশুপার্ক পরিদর্শন করে বেশ উৎফুল্ল হলো। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৮ টা। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও যাওয়া হলো না স্বপ্নের বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক সবার মনে খানিকটা কষ্টের অনুভূতি থেকেই গেল। অধরা ও অদেখা প্রশান্তি পার্ক হয়তো কোন এক ভ্রমণের পথে আবার দেখা হতে পারে।
শিক্ষা সফরের গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। রাত সাড়ে নয়টায় সবাই ফিরে এলো কুঞ্জেরহাট
গ্রীন ভিউ মডেল স্কুল প্রাঙ্গনে, এরপর শিক্ষা সফরে ইতি টেনে সবাই ফিরে গেলো নিজেদের আপন ঠিকানায়।