ওয়েব ডেস্ক: প্রকৃতির অপরূপ দান পাহাড়-পর্বত সুরক্ষা করে প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে আজ পালিত হচ্ছে ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস’। প্রতিবছর ১১ ডিসেম্বর বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও টেকসই ভবিষ্যতকে সামনে রেখে জাতিসংঘ ২০০৩ সালের ১১ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৬ সাল থেকে জাপানে দিবসটি উদযাপনে রাষ্ট্রীয় ছুটি থাকে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি।
এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বলেছেন, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও মানুষের অপরিকল্পিত ভূমি ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাপী পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অতিবৃষ্টি, খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, অপরদিকে বৃক্ষ নিধনের মাধ্যমে বন উজাড়; এই দুইয়ের প্রভাবে পার্বত্য এলাকায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পার্বত্য জেলাগুলো ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য অত্যন্ত আকর্ষণীয় গন্তব্যস্থল উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, পর্যটকরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে ও নিরাপদে পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে, সেজন্য এ অঞ্চলে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে, যা এ অঞ্চলের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এক্ষেত্রে পরিবেশ রক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় রাখা আবশ্যক।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস পালনের মাধ্যমে পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীদের জীবন ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে এবং পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের উন্নত ভবিষ্যৎ গঠনের মৌলিক উপাদানগুলো নিশ্চিত হবে, এটাই সবার প্রত্যাশা।
অন্যদিকে, বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকার পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সব খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ অঞ্চলের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারে আমরা নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাগুলো কোনো পিছিয়েপড়া জনপদ নয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পশ্চাৎপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনেন এবং পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের সমসুযোগের ব্যবস্থা নেন। বঙ্গবন্ধু কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাহাড়ি ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা দেন।
সরকারপ্রধান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোনো তৃতীয়পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক। পার্বত্য অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, এর টেকসই ব্যবহার এবং সব উপকারভোগীর কাছে সমান সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে আমাদের সরকার ন্যাশনাল বায়োডাইভার্সিটি স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড অ্যাকশন প্ল্যান (২০১৬-২১) বাস্তবায়ন করছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ১২টি জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এ অঞ্চল সারাদেশের জনগণের কাছে অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও এখন পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যা শান্তি চুক্তির আগে ছিল অলীক কল্পনা।
উল্লেখ্য, পৃথিবীর প্রায় ২২ শতাংশই পার্বত্য অঞ্চল। এ অঞ্চলে পৃথিবীর প্রায় এক-দশমাংশ মানুষের বাস এবং ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মিঠাপানির উৎস। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণী এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্র্যপূর্ণ। বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে পার্বত্য অঞ্চলের উন্নয়ন অপরিহার্য।