বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
বিধ্বংসী আমফান কলকাতার অহঙ্কারে যে তীব্র আঘাত করেছে, তাতে সন্দেহ নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির হাত ধরে চলা আধুনিক এই শহরটি নিজেকে সে ভাবে রক্ষা করতে পারেনি ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা আমফান দানবের তাণ্ডব থেকে। যাঁরা কলকাতার প্রাচীন স্থাপত্যগুলি নিয়ে চর্চা করে থাকেন, তাঁদের অনেকেই আশঙ্কিত হয়েছিলেন এই কথা ভেবে যে, আমফানের ধাক্কায় বুঝি ভিক্টোরিয়ার পরীটিই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে! কিন্তু সকলের সেই আশঙ্কাকে অমূল প্রমাণ করে দিয়েছে ১০০ বছরের পুরনো সেই পরী!
আমফানের দাপট শেষ হয়ে যাওয়ার পর দেখা যায়, কলকাতার অহঙ্কার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সেই পরী বহাল তবিয়তে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর তা দেখে অনেকেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন। বলেছেন, কলকাতাকে রীতিমতো অসহায় বানিয়ে দিলেও পরীটির কোনও ক্ষতি করতে পারেনি ওই ঘূর্ণিঝড়। গত বছর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের পাঁচিলের ঠিক বাইরে বজ্রাঘাতে একজনের মৃত্যু হয়। তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, পাঁচিলের ভিতরে বাজ পড়লে কী হবে? এই উদ্বেগের জবাবে মেমোরিয়াল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, বজ্রাঘাত থেকে পুরোপুরি নিরাপদ এই সৌধ। কারণ, ভিক্টোরিয়ার চূড়োয় বসানো পরীটিই শতাব্দী প্রাচীন সৌধের ‘গার্ডিয়ান এঞ্জেল’।
ভিক্টোরিয়ার গম্বুজে বসানো ১৬ ফুট উঁচু এই পরী আসলে বজ্রনিরোধকের ভূমিকাই পালন করে। মেমোরিয়াল হলের কিউরেটর জয়ন্ত সেনগুপ্তর বক্তব্য ছিল, ‘প্রতি বছরই ভিক্টোরিয়ার ওপর অনেকবার বাজ পড়ে। কিন্তু পরীর শরীরে বজ্রনিরোধক দণ্ডটি প্রবেশ করানো থাকায় সৌধে বাজের প্রভাব পড়ে না।’ শুধু বাজ পড়া নয়, ভিক্টোরিয়ার পরী হাওয়া মোরগের কাজও করে। যা দেখে হাওয়ার গতিপ্রকৃতি অনুমান করা সহজ হয়। তবে, আমফানের আঘাত পরীটি সামলাতে পারলেও ভিক্টোরিয়ার বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা বাগানের গাছগুলি সেই তাণ্ডব সহ্য করতে পারেনি। এখানকার অসংখ্য গাছ এই সুপার সাইক্লোনে মাটিতে ভেঙে পড়েছে।
ভিক্টোরিয়ার বিখ্যাত পরীটি নীচ থেকে দেখে ছোট মনে হলেও তার ওজন কয়েক টন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আগে এই পরীটি বাতাসের দিকপ্রবাহের সঙ্গে সঙ্গে গোল হয়ে ঘুরত! এখন আর ঘোরে না। অনেকের অভিযোগ, দূষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত অদক্ষ কর্মীদের জন্যই পরীটির বলবিয়ারিংয়ে ক্ষতি হয়। ফলে পরীটির ঘোরা বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমে ভারতীয় ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীটিকে ঘোরানোর চেষ্টা করা হলেও সাফল্য আসেনি। পরে লন্ডনের যে কোম্পানি এই ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল তৈরি করেছিল, তাদের ইঞ্জিনিয়ারদেরও আনা হয়েছিল। তাঁরাও পরীটিকে ঘোরাতে সফল হননি। না ঘুরলেও কলকাতা তথা বাংলা, এমনকী বাইরের মানুষেরও পরীটি নিয়ে আগ্রহের খামতি দেখা যায়নি কখনও।