ঘঘু … ঘুঘু…
আমি চমকে উঠি পাখির এই মিষ্টি ডাকে। এই ডাক যেন শুধু ডাক নয়, যেন কেউ একজন বুক ভরা বেদনা নিয়ে, দুঃখ ভরাক্রান্ত হৃদয়ে তার হারিয়ে যাওয়া কোন এক প্রিয় সঙ্গীকে ডেকে যাচ্ছে। তার বিরহী মনের বেদনা, ভালবাসা, অব্যক্ত কথা সেই ছোট্ট ঘুঘু ঘুঘু ডাকের সাথে সুর হয়ে বের হয়ে আসছে, আর সেই সুরের ঝংকারে প্রকৃতিও যেন বিষণ্ণ হয়ে উঠে।
এই ঘুঘু ডাক শুনলেই মনের মাঝে ছটফটানি শুরু হয়ে যায়, উদাস হয়ে যাই আমি, মনে হয় কি যেন হারিয়ে ফেলেছি আমিও, কেমন যেন চাপা কষ্ট অনুভব করি। মনের অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসে। সাথে সাথে বদলে যেতে থাকে আমার চারপাশের দৃশ্যপট। একটা বড় উঠোন, উঠোন ঘিরে চারপাশে ঘর। ঘরের পিছন ঘিরে বিশাল ফলের বাগান, পুকুর, বাগানের চার ধারে ফসলের জমি। শান্ত সবুজ এক পরিবেশ।
দাদাবাড়িতেই আমি প্রথম শুনেছি ঘুঘু পাখির ডাক, সেই ছেলে বেলায়। ঘুঘু ঘুঘু ডাক শুনে মোহবিস্টের মতো ঘর থেকে বের হয়ে গেছি আমি। তাকে এই গাছ, সেই গাছ, এই বাগান, সেই বাগানে, পুকুর পাড়ে খুঁজে বেড়িয়েছি। হয়নি দেখা, জানাও হয়নি কি কষ্ট সে বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে আর ডেকে ডেকে ছড়িয়ে দিচ্ছে চারিধারে।
এখনও এই ডাকটা শুনতে পেলে আমার মনের ভিতর অজানা কষ্ট কাজ করতে থাকে। ঘুঘু ঘুঘু শুনতে পেলেই আমি ছোটাছুটি শুরু করি, এ জানালা ওই জানালায় দৌড়ে যাই। ঘুঘু দেখতে পাইনা, কোথায় যে লুকিয়ে থেকে ডেকে ডেকে সে উদাস করে আমায়। যে দৃশ্য মনে ভেসে উঠে তাও দেখতে পাইনা। কোথায় উঠোন, বাগান, কোথায় সে মেঠো পথ। “তবে কি ছেলেবেলা অনেক দূরে ফেলে এসেছি”।
খাঁচাটা ছাদে ধুয়ে দরজার বাইরেই রেখেছিলাম। ডোর বেলের শব্দ শুনে দরজা খুলে দেখি কেউ নেই। কিন্তু খাঁচায় কি যেন ছটফট করছে। ছোট্ট একটা ঘুঘু পাখি। বাব্বাহ, কি তার রাগ, কাছে গেলেই পাখা ফুলিয়ে তেড়ে আসে। বুঝে গেছি দারোয়ান কাকা দিয়ে গেছে। পরে শুনেছি সে রায়ানের জন্যে গাছ থেকে ধরে এনেছে।
দেখা হোল তার সাথে, খুব কাছে। কিন্তু খাঁচা বন্দি পাখি কখনই ভালো লাগেনা। ছেড়ে দিলাম তাকে, উড়ে যাক, ডেকে যাক। উদাস করুক আমায়, ক্ষণিকের জন্যে হলেও যেন ফিরে আসুক আমার ছেলেবেলা।