বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা: বিজেপির বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার কলকাতার হরিশ পার্কে আন্তর্জাতিক পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সবুজায়ন প্রকল্পের একটি অনুষ্ঠানে বিজেপির বিরুদ্ধে নাম না করে তিনি অভিযোগ করেন, ‘দুর্যোগের সময়ও একটি দল রাজনীতি করে চলেছে।’ তবে কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনায় কোনও দ্বিধা ছিল না তাঁর। বলেন, ‘আমি কখনও বলিনি, কেন্দ্রের ক্ষমতা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে সরিয়ে দাও।’
উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগে জাতীয় সংবাদ মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘২০২১ সালে বাংলার ক্ষমতায় আসবে বিজেপিই।’ মনে করা হচ্ছে, এদিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই কথারই জবাব দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আমফান ঝড়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলায় এলে তাঁর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একই হেলিকপ্টারে দুর্গত অঞ্চল ঘুরে দেখেন। তার কিছুদিনের মধ্যেই মমতার এই বক্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
লোকসভা নির্বাচনের পর থেকে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে বিজেপির বিরুদ্ধে চরম মনোভাব থেকে অনেকটাই সরে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যের স্বার্থে কেন্দ্রের সঙ্গে ভারসাম্য রেখে চলেছেন তিনি। কিন্তু বাংলায় রাজ্য সরকারের চরম বিরোধিতার পথ থেকে বিরোধী দল হিসেবে বিজেপি সরে আসেনি। প্রায় প্রতিদিনই বিজেপি নেতারা রাজ্য সরকার ও শাসক দলের সমালোচনা করে চলেছেন।
মুখ্যমন্ত্রী হরিশ পার্কের অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা যখন মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করছি, দুর্যোগ ও বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করার চেষ্টা করে চলেছি, এটা অনেক দলের পছন্দ হচ্ছে না। তারা চায় না মানুষের ভালো হোক। তারা চায় মানুষের ক্ষতি হোক, আর তা নিয়ে তারা যেন রাজনীতি করতে পারে। তাই একটা রাজনৈতিক দল চারদিকে বলে বেড়াচ্ছে, বাংলা থেকে এদের তাড়াও। এখন কি রাজনীতি করার সময়? আমি বলছি, রাজনীতির সময় রাজনীতি হবে। তা হলে এখন কেন এ–সব করা হচ্ছে?’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘যান না, গিয়ে অসহায় মানুষের সেবা করুন। গাছ পুঁতুন। পুকুর পরিষ্কার করুন। ভয়ে তো বাড়িতে মুখে লিউকোপ্লাস্টার লাগিয়ে লুকিয়ে ছিলেন। কাউকে দেখা যায়নি তখন।’ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্যের জবাবও দিয়েছে বিজেপি। এক নেতা বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী ঠিক বলছেন না। যখনই বিজেপি নেতারা ত্রাণের কাজে বেরিয়েছেন, রাস্তায় পরিকল্পিত ভাবে পুলিশ তাঁদের আটকে দিয়েছে। পুলিশ দফতরের দায়িত্বে কে রয়েছেন? মুখ্যমন্ত্রী সবই জানেন। তবু কী করে এ–সব কথা বলছেন?’
পাশাপাশি, সবুজায়নের নামে দুর্নীতি চলছে বলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব হল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন প্রশ্ন তোলেন, ‘গাছ লাগানো নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি প্রকল্প রয়েছে। গাছ লাগানোর ৪০ শতাংশ বেঁচে গিয়েছে বলে রিপোর্টে জানানো হয়েছে। সেইসব গাছ কি আদৌ লাগানো হয়েছে?’ তিনি অভিযোগ করেছেন, ‘নদিয়ায় তো গাছ লাগানো নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। ৭ টাকায় কলাগাছের যে চারা বিক্রি হয়, তা সরকারের হিসেবে ১৬ টাকায় কেনা হয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। আর নারকেল গাছের চারার দাম ৬০ টাকা। অথচ সরকার সেই চারা ২৬০ টাকা দিয়ে কিনেছে বলে দেখানো হয়েছে হিসেবে।’
কয়েকদিন আগেই সুন্দরবনে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু ম্যানগ্রোভ। তাই মুখ্যমন্ত্রী ৫ কোটি টাকার গাছ লাগাবেন বলে ঘোষণা করেছেন। এদিন দিলীপ ঘোষ প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ম্যানগ্রোভ তো কেটে সাফ করে দিয়েছেন। তা হলে অত ম্যানগ্রোভের চারা তিনি পাবেন কোথায়? ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা লাগাতে হলে যে বিশাল পরিকল্পনার প্রয়োজন হয়, তা কি মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যবাসীকে জানিয়েছেন?’ যদিও দিলীপ ঘোষের এই প্রশ্নের জবাব এদিন দেয়নি শাসক দল তৃণমূল।