আল্লাহ তাআলার বিভিন্ন অনুশাসনের মধ্যে পবিত্রতা অবলম্বন করা একটি বিশেষ নির্দেশ। এই পবিত্রতা শুধু বাহ্যিক পবিত্রতা নয় বরং বিশ্বাসের পবিত্রতা, কর্মের পবিত্রতা, শারীরিক ও মানসিক পবিত্রতা, আর্থিক পবিত্রতা, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ পবিত্রতা, পরিবেশের পবিত্রতা বুঝায়।
এককথায় সর্বক্ষেত্রে পবিত্রতা অবলম্বনের শিক্ষা আমরা পবিত্র কুরআন থেকেই পেয়ে থাকি। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেন-
‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কোনো অবস্থান নিও না। নিশ্চয় কান, চোখ, হৃদয়- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাইল : আয়াত ৩৬)
আমাদের সবার উদ্দেশ্য আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জন করা। আল্লাহর কৃপা পাওয়ার লক্ষ্যে আমরা তার বিভিন্ন আদেশ-নিষেধের ওপর আমল করার চেষ্টা করে থাকি।
আমরা যদি নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্লেষণ করি তাহলে প্রত্যক্ষ করব আমাদের কর্মময় জীবনের বেশির ভাগই চলছে অপবিত্রতার মধ্য দিয়ে। কেননা আমি যখন কোন বিষয়ে ওয়াদা করি তখন তা ভঙ্গ করছি, ব্যবসায় অধিক মুনাফা পাওয়ার জন্য বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছি। একথায় এমন কোন পাপ আছে কী যা আজ আমার দ্বারা সংঘটিত হচ্ছে না?
যার ফলে আজ আমাদের দুঃখ-কষ্টও পিছু ছাড়ছে না। সমগ্র বিশ্ব যেন আজ অবক্ষয়ের অতল গহবরে নিমজ্জিত। আমরা যদি পবিত্র ও সৎভাবে জীবন যাপনের চিন্তা-ভাবনা করতাম, তাহলে পৃথিবীতে এতো অশান্তি দেখা দিত না।
আমরা আমাদের ওয়াজ-নসিহতে এবং বিভিন্ন বক্তৃতায় অপরকে অনেক ভালো জ্ঞান দিয়ে থাকি কিন্তু নিজেই তা পালন করি না। এমনটি হলে সেই উপদেশ কখনো কাজে আসবে না।
আমরা যদি নিজে সৎভাবে চলি আর অন্যকেও সৎপথে চলার নির্দেশ দেই, তবেই একটি আদর্শ সমাজ ও দেশ তৈরি হতে পারে। তাই প্রথমে আমাদের নিজেদের সৎ ও পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী হতে হবে।
বিশেষ করে
আল্লাহ তাআলা যেসব কাজ হারাম করেছেন, তা থেকে বেঁচে থাকা একজন মুমিনের একান্ত কর্তব্য। তাই প্রথমে নিজে সৎ ও পবিত্র হৃদয়ের হব, সব ধরনের হারাম কাজ ছেড়ে দেব, তারপর অন্যকে সৎ হতে উৎসাহিত করব। চলার পথে প্রতিনিয়ত অনেক মন্দ বিষয় আমাদের দৃষ্টিতে পরে। আমাদের উচিৎ, সেগুলোকে প্রতিহত করা। যেভাবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
‘তোমরা যদি খারাপ কিছু (কোনো কাজ সংঘটিত হতে) দেখ তাহলে নিজ হাতে তা দূর কর, আর তা নিজ হাতে না পারলে নিজ জিহ্বা দ্বারা একে মন্দ বলে নিষেধ কর, আর তাও যদি না পার, তাহলে মনে মনে একে ঘৃণা (নিরবে তা বন্ধে প্রচেষ্টা) কর ও দোয়া কর আর এমন করাটা বিশ্বাসের দিক থেকে সর্ব নিম্নপর্যায়ের।’ (মুসলিম)
নৈতিক অধঃপতনের এক চরম সীমায় আজ আমরা বসবাস করছি। যে দিকেই তাকাই, শুধু মন্দকর্মই যেন ছেয়ে আছে। আজ আমরা পার্থিব জগতের মোহে আল্লাহর অসন্তুষ্টির পথে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছি। ভালো-মন্দের পার্থক্য করা ভুলে গেছি। পাপ করতে করতে এমন হয়েছে যে- পাপকে পাপই মনে হয় না। হাদিসে এসেছে-
হজরত সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আমার উম্মতের একদল সম্পর্কে অবশ্যই জানি, যারা কেয়ামতের দিন তিহামার শুভ্র পর্বতমালার সমতুল্য নেক আমলসহ উপস্থিত হবে। মহামহিম আল্লাহ সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করবেন। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! তাদের পরিচয় পরিষ্কারভাবে আমাদের কাছে বর্ণনা করুন, যাতে অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বলেন, তারা তোমাদেরই ভাই-বেরাদর এবং তোমাদের সম্প্রদায়ভুক্ত। তারা রাতের বেলা তোমাদের মতো ইবাদত করবে। কিন্তু তারা এমন লোক যে একান্ত গোপনে আল্লাহর হারামকৃত বিষয়ে লিপ্ত হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
আসলে মানুষের সামনে নিজেকে আমরা অনেক সৎ ও মুমিন বানিয়ে রাখি কিন্তু আমাদের হৃদয়গুলো পাপে ভরপুর। যার ফলে আল্লাহর রহমত থেকে আমরা ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছি। রহমতের বৃষ্টির ফোটা আমাদের ওপর আর বর্ষিত হচ্ছে না।
বিপদের পর বিপদ আসছে, একটি বিপদ যাওয়ার আগে আরেকটি বিপদ উপস্থিত। এসব দেখেও আমরা উপলব্ধি করতে পারছি না যে আমাদের হৃদয়গুলোকে পবিত্র করা প্রয়োজন রয়েছে।
বিশ্বময় মহামারি করোনায় লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, এটি প্রত্যক্ষ করেও যদি আমি নিজেকে সংশোধন না করি- তাহলে আমার চেয়ে বোকা আর কে আছে? পাপ কাজ পরিহার করে সৎ পথে চলার সময় কি এখনও আসেনি?
অথচ আল্লাহ এবং তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে সতর্ক করে গেছেন আমরা যেন সৎ কাজে লিপ্ত থাকি। আমরা যদি সৎকাজ ও সর্বক্ষেত্রে পবিত্রতা অবলম্বন করি, তাহলে আল্লাহপাকের কৃপার চাঁদরে আমরা আবৃত থাকব। আর আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকলে দুনিয়ার বিপদ আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
তাই আসুন, সব ধরণের মন্দ কাজ পরিহার করে সব কাজে নিজেদের হৃদয়কে পবিত্র করার চেষ্টা করি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তার সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।