বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর লাগাতার খননকার্যের কারণে আল-আকসা মসজিদের কিছু অংশ ধসে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জেরুজালেম প্রশাসন। একই সঙ্গে শেখ জাররাহ মহল্লায় দখলনীতি জোরদার ও স্থানীয় ফিলিস্তিনিদের চলাচলে নতুন করে বাধা দেওয়ার অভিযোগও করেছে তারা।
বুধবার এক বিবৃতিতে জেরুজালেম প্রশাসন সতর্ক করে জানিয়েছে, আল-আকসা মসজিদের নিচে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের চলমান খনন কাজ পবিত্র মসজিদের স্থিতিশীলতা ও পুরোনো জেরুজালেম নগরীর ঐতিহাসিক ইসলামী নিদর্শনের জন্য সরাসরি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়, দখলদার ইসরায়েল ‘মিথ্যা ধর্মীয় দাবির’ অজুহাতে শেখ জাররাহ মহল্লায় ইহুদি বসতি সম্প্রসারণ ও দখল জোরদার করছে। গত দুই দিনে ওই এলাকায় কঠোর সামরিক অবরোধ জারি করে স্থানীয় বাসিন্দাদের চলাচল সীমিত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনারা বসতি স্থাপনকারীদের ‘শিমন দ্য রাইটিয়াসের সমাধি’ নামে পরিচিত স্থানে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে, যেখানে তারা তোরাহ ধর্মীয় আচার পালনের জন্য বিশেষভাবে স্থাপিত তাবুতে সমবেত হয়েছে।
এ সময় পাড়াজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক যান মোতায়েন করা হয়, বসানো হয় একাধিক তল্লাশি চৌকি, এবং বন্ধ করে দেওয়া হয় প্রধান সড়কগুলো। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের দৈনন্দিন জীবন প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
জেরুজালেম প্রশাসন জানায়, ইসরায়েল ‘ধর্মীয় গল্পগাঁথার’ অজুহাতে ওই এলাকায় নতুন করে দখল বাস্তবতা তৈরি করছে, যাতে করে ফিলিস্তিনি উপস্থিতি মুছে ফেলে বসতি স্থাপনকারীদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা যায়। এটি মূলত পুরোনো জেরুজালেমের আরব-ইসলামী চরিত্র মুছে ফেলার একটি পরিকল্পিত পদক্ষেপ।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘শিমন দ্য রাইটিয়াসের সমাধি’ নামে পরিচিত স্থানের কোনো ঐতিহাসিক বা প্রত্নতাত্ত্বিক ভিত্তি নেই। বরং দলিল-প্রমাণ অনুযায়ী, স্থানটি ১৭৩৩ সালে সুফি আলেম শেখ সিদ্দিক আস-সাদীর মালিকানাধীন ছিল, যা তিনি খলওয়া (আধ্যাত্মিক নির্জনতা) ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতেন। ওই স্থানের সঙ্গে কোনো প্রাচীন ইহুদি ব্যক্তিত্বের সম্পর্কের প্রমাণ নেই। এটি কেবল দখলদারদের বানানো কাহিনি।
বিবৃতির শেষাংশে জেরুজালেম প্রশাসন জোর দিয়ে বলেছে, ইসরায়েল ধর্মীয় অজুহাত দেখিয়ে দখল ও বসতি সম্প্রসারণকে বৈধতা দিতে চায়, কিন্তু বাস্তবে এটি ফিলিস্তিনি অধিবাসীদের ধীরে ধীরে উচ্ছেদ ও এলাকাটিতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার একটি কৌশল।
তারা আরও জানায়, শেখ জাররাহ মহল্লা ও সংশ্লিষ্ট স্থানের মালিকানা সংক্রান্ত ঐতিহাসিক দলিল, শরিয়াহ আদালতের রায় এবং জেরুজালেমের স্থানীয় পরিবারগুলোর নথিই আসল ও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি, যা ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর স্বীকৃতিও পেয়েছে।
সূত্র : আল জাজিরা, ওয়াফা নিউজ এজেন্সি