গত বছরের মার্চ মাসে ফ্রাঙ্ক ও তার স্ত্রীর গ্রিসে আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে সরকার৷ আফ্রিকার দেশ ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো থেকে এসেছে পরিবারটি। কাজের অভাবে পরিবারটি তিন সন্তানসহ এখনো গ্রিসের সামোস দ্বীপের একটি ক্যাম্পে আছে।
“আমাদের মনে হয় যে আমরা দুর্ভাগ্যের কাছে পরাজিত,” বলেন ফ্রাঙ্ক।
৪২ বছর বয়সি ফ্রাঙ্ক তার স্ত্রী, তিন সন্তানসহ ক্যাম্পটিতে আছেন। কিন্তু গ্রিক ভাষা না জানা ও কাজ না পাওয়ার কারণে এক অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে পরিবারটি। ইনফোমাইগ্রেন্টসেকে নিজের দুর্দশার বর্ণনা দিচ্ছিলেন ফ্রাঙ্ক। “দ্বীপটিতে আশ্রয় নেওয়ার প্রায় এক বছর পর ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ সালে আশ্রয়ের আবেদনের ব্যাপারে আমাদের সাক্ষাৎকার নেয় কর্তৃপক্ষ। আর ১ মার্চ ২০২০ সালে আমরা এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া পাই। এর তিন মাস পর, অর্থাৎ গত বছর জুলাই মাসে শরণার্থী হিসেবে থাকার বৈধতা পেতে সবশেষ ধাপ পার হই।”
আশ্রয় আবেদনের প্রত্রিয়া বর্ণনা শেষে ফ্রাঙ্ক বলেন, “আমাদের আসল দুর্ভোগ শুরু হয় এরপর থেকে। আমাদের বলা হয় নবজাতকসহ যে কন্টেইনারে আমরা থাকছিলাম সেটি ছেড়ে দিতে হবে। আমার স্ত্রীকে জোর করে এখান থেকে নিয়ে এসে ক্যাম্পটিতে রাখা হয়। তারপর থেকে এখানে আমি আমার দুই মেয়ে, এক নবজাতক সন্তান ও স্ত্রীসহ অবস্থান করছি।
কীভাবে মুক্তি পাব জানি না
ফ্রাঙ্ক জানান, এখানে আসার পর কয়েক সপ্তাহ শরণার্থী জন্য দেওয়া কোন সাহায্য পাননি তারা। ‘‘ভাগ্য ভালো যে সেসময় আমরা একটি এনজিওর খোঁজ পাই, যারা আমার বাচ্চাদের কিছু ন্যাপকিন ও দুধ দিয়ে সহায়তা করেছে।’’
ক্যাম্পে নিজেদের বর্তমান অবস্থার বর্ণনা করতে গিয়ে ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘‘জানি না কীভাবে এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাব। এখানে এমন মানুষও আছেন, যারা শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি পাওয়ার পর এক দেড় বছর ধরে এ ক্যাম্পেই অবস্থান করছেন৷’’
এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জটিল। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটি জানিয়েছে যে, এখান থেকে যেতে হলে প্রথমে আমাদের নিজেদের খরচে থাকার মতো জায়গা বের করতে হবে। তারপর তারা আমাদের ভাড়ার টাকা দিয়ে সাহায্য করবে।’’
ফ্রাঙ্ক জানান, থাকার জায়গা পাওয়া এতো সহজ নয়। কাজ না থাকায় ও স্থানীয় ভাষা না জানার কারণে বিষয়টি অন্তত জটিল। ‘‘আমি কীভাবে বাসা পাব? আমার চাকরি নেই। আমরা স্থানীয়দের কাউকে আমি চিনি না। আমার মনে হয় না এখানকার মানুষ আমাকে বাসা ভাড়া দেবে।’’ ফ্রাঙ্ক জানান এখানে তাদের দুর্দশা সবদিক থেকেই। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের সহায়তাকারী সংস্থাটি জানিয়েছে যে, তারা আমাদের কাজ শেখার ট্রেনিংয়ের জন্য কিছু অর্থ সহযোগিতা দেবে। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ নয়। টাকা পেতে হলে আমাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। আর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে আমাকে তিনশ’ ইউরো দিতে হবে,যা আমার কাছে নেই।এখানকার আরো একটি সমস্যা হলো শরণার্থীদের সমাজে অর্ন্তভুক্ত করতে তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই কর্তৃপক্ষের। আর সামোস দ্বীপে তেমন কোনো কাজও নেই। ’’
ফ্রাঙ্ক বলেন, ‘‘আমরা শরণার্থী হিসেবে থাকার অনুমতি পেয়ে এক ধরনের সুরক্ষা পেয়েছি, কিন্তু এই দ্বীপে আটকে আছি। মনে হয় যেনো দুর্ভাগ্যের কাছে হার মানতে হচ্ছে আমাদের। আমার বলার কোনো ভাষা নেই। আমরা একটি অচলাবস্থায় আটকে আছি।’’
সুত্র :ইনফোমাইগ্রেন্টস
(প্রতিবদনে সাক্ষাৎকার প্রদানকারীর নাম পরির্বতন করে ব্যবহার করা হয়েছে)