স্পোর্টস ডেস্ক: স্কুল শিক্ষার্থীদের জন্য ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ নামের অভিনব এক কর্মসূচি চালুর মাধ্যমে ‘বিশ্ব হাত ধোয়া দিবস’ পালিত হয়েছে। ব্র্যাকের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এ কর্মসূচি হাতে নেয়।
‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মেডিকেল সেন্টার’ এর সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ২০১৯ সালে করোনা প্রাদুর্ভাবের আগে মানুষের হাতের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার হার ছিল ৫৪.৫ শতাংশ; ২০২০ সালের মার্চে তা সর্বোচ্চ ৯২.৮ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু আগস্ট ২০২০-এর মধ্যে তা কমে ৫১.৫ শতাংশে নেমে এসেছে। এতে হাতের স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের হ্রাসের হারকে নির্দেশ করে এবং সব আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটেই এ হ্রাসের হার লক্ষ্যণীয়। বাংলাদেশেও অনুরূপ প্রবণতা দেখা গেছে।
হাত ধোয়ার অভ্যাসের এ উদ্বেগজনক হ্রাসের ফলে প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমণ ও রোগে অনেক শিশু অসুস্থ হতে পারে। স্বাস্থ্যগত এ অসুস্থতা মোকাবিলা এবং বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে নতুন করে হাত ধোয়ার অভ্যাস তৈরির প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করে লাইফবয়। এই ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ কর্মসূচি শিশুদের যথাযথভাবে হাতের পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে শেখা এবং তা অনুশীলন করাকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষেত্রে একটি অংশগ্রহণমূলক সমন্বিত সমাধান প্রদান করতে সক্ষম হবে।
মহামারি-পরবর্তী স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলায় ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’টি তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে ইউবিএল, যেখানে খেলার মাধ্যমে শিশুদের কোমল মনকে উজ্জ্বীবিত করে হাতের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি৪), অতিরিক্ত সচিব, দিলীপ কুমার বণিক; বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেড (ইউবিএল) এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার ও ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ। তারা স্কুল পরিদর্শন করে খেলাধুলা ও আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়ার সহজ অভ্যাস শেখানোর কার্যক্রমে অংশ নেন।
চলতি বছর, লাইফবয় ও ব্র্যাক যৌথভাবে বাংলাদেশের দেড় হাজার স্কুলে অংশগ্রহণমূলক ও আনন্দদায়ক উপায়ে শিশুদের হাত ধোয়ার অভ্যাস সম্পর্কে শেখাতে ৭ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
‘বিহেভিয়ার চেঞ্জ মডেল’ বা ‘অভ্যাস পরিবর্তন মডেল’ অনুসরণ করে ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’-এ কয়েক ধরনের খেলা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-সাপ ও মই এবং কাগজের ক্রিকেটের মতো জনপ্রিয় কিছু গেমস। এসব গেমস খেলার সময় সাবান দিয়ে হাত ধোয়া শেখা এবং তা অনুশীলন করার বিষয়টি সুকৌশলে শিশুদের নতুন করে ভাবতে উত্সাহিত করা হয়েছে।
১৯৯০ এর দশক থেকে বাংলাদেশে লাইফবয়-এর একটি উল্লেখযোগ্য কাজের ক্ষেত্র হলো-হাত ধোয়ার আচরণ পরিবর্তন। ২০১১ সাল থেকে ১১ মিলিয়নেরও বেশি শিশুকে নিয়ে সরাসরি কাজ করেছে ‘লাইফবয় স্কুল প্রোগ্রাম’।
ইউনিলিভার বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাভেদ আখতার বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য ‘ওয়াটার, স্যানিটেশন অ্যান্ড হাইজিন’ (ওয়াশ) -সম্পর্কিত রোগগুলো সব সময়ই প্রকট সমস্যা হিসেবে বিবেচিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ডায়রিয়ার কারণে শিশুমৃত্যু ব্যাপক হারে কমলেও, ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু হারের অন্যতম প্রধান কারণ এখনো ডায়রিয়া, প্রতি হাজারে যার সংখ্যা প্রায় ৬ জন। বাংলাদেশের লক্ষ্য, ২০৩০ সালের মধ্যে হাতের স্বাস্থ্যবিধিতে সর্বজনীন প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা, কারণ হাতের স্বাস্থ্যের গুরুত্ব ত্রিমাত্রিক: ‘জীবন বাঁচানো, অর্থ সাশ্রয় ও সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ’।
ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ বলেন, যখন আমরা মহামারি-পরবর্তী বিশ্বে বিভিন্ন জটিলতার মুখোমুখি হয়েছিলাম, তখন বিশেষ করে আমাদের শিশুদের জন্য স্বাস্থ্য ও সুস্থতার মূলভিত্তি হয়ে দাঁড়ায় হাতের পরিচ্ছন্নতার বিষয়টি। স্বাস্থ্যঝুঁকি মোকাবিলা ও দৈনন্দিন জীবনে হাত ধোয়াকে উপভোগ্যভাবে ফিরিয়ে আনতে এ পদক্ষেপে লাইফবয়ের সঙ্গে অংশীদার হতে পেরে ব্র্যাক গর্বিত। সমাজের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ক্ষমতায়িত করতে ‘এইচ ফর হ্যান্ডওয়াশিং গেমস’ ও ব্র্যাক একই উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করছে। এ সহযোগিতার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের হাত ধোয়া বিষয়ে প্রশিক্ষিত ও অনুপ্রাণিত করাই আমাদের লক্ষ্য, যা পরবর্তী প্রজন্মের জন্য হাত ধোয়াকে সারা জীবনের একটি অভ্যাস হিসেবে তৈরি করে তুলবে।