ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন:মামা আসার অপেক্ষা করতে লাগলাম, এদিকে বাচ্চারাও স্কুল থেকে চলে এলো, তাদেরকে খাইয়ে সবকিছু গুছিযে বললমা যে, আজকে একজন মেছাব আসবেন, উনাকে ডেকে আনছি কারন ঘরে তোমরা বেশ কয়েকবার ভয় পেয়ছো, নতুনঘরে প্রবেশের পর কোনো রকম দোয়া করানো হয়নি, তো সেজন্যই মামাকে আনছি, আর সেই সাথে বললাম এই মামা আমার কোন ফ্রেন্ডের পরিচিত, মামার যদি সময় থাকে তাহলে সাপ্তাহে দুদিন বাচ্চাদেরকে আরবী পড়াতে বলবো, বলে রাখি এদেশে ঘরে এনে পড়ালে দুদিনই যথেষ্ট, এক তো লম্বা সময় ( সকাল ৮:৩০-বিকাল ৩:৩০)স্কুল, এর মাঝে যদি একটু দূরে হয়, তাহলে কম করেও স্কুল আওয়ারে জার্ণির করার জন্য,৩০ মিনিট থেকে ১ঘন্টা হাতে নিয়ে বের হতে হয়, তাছাড়া দেশে যেমন হুজুররা আরবী পড়াতে ঘরে এনে, এক মাসেও যা নেননা,
এখানে সাপ্তাহে দুদিনেই এর চেয়ে বেশী দিতে হয়, তবে মসজিদে পড়ালে অনেক কম, কিন্তু সব জাগায় ধারে কাছে মসজিদ পাওয়া যায় না বা সব মসজিদেও পড়ানোর ব্যবস্থা থাকেনা, সবচেয়ে বড় সমস্যা, স্কুল পরেই বাচ্চারা ২ ঘন্টা আরও মসজিদে গিয়ে পড়তে চায় না, যাইহোক এরই মাঝে হুজুর মামা চলে এলেন,চা নাস্তা দিয়ে বসলাম গভাীর আগ্রহে…. মামা এস্তেখারা করে কি দেখলেন? তিনি বললেন, আমার যা সাহস তাতে উনার আর নতুন করে সাহস দেবার দরকার নেই, তবে আমাকে একজন মহিলা মানুষ জ্বীন চালান করে দিয়েছে ( অবশ্যই খারাপ জ্বীন) যাতে করে আমি বাচ্চাদেরকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারিনা, আমি যেখানেই যাই না কেন আমাক ডিস্টার্ব করবে, আমি জানতে চাইলাম কে হতে পারে? আমার সাইড না শ্বশুরবাড়ীর সাইডে করেছেন?
তিনি বললেন পুরো বলতে পারবেন না, কারন দেশ থেকে এটা করা হইছে, তবে মহিলা যেখানে থাকেন সেখানের পাশে পুকুর আছে, চিন্তা করে দেখলাম আমার কুটুম যারা আছেন, তারা সবাই শহরে থাকেন, সেখানে কোন পুকুর নেই, তার মানে শ্বশুরবাড়ীর লোকজন, বলে রাখি আমার শ্বশুরবাড়ীর সবাই লন্ডনে থাকেন, তবে উনাদের কিছু আত্মীয় গ্রামে থাকেন, বলে রাখি, আমার ছেলেরাই ছিল,আমার শ্বশুরের বংশের মাঝে ছেলে সন্তান, বাকীদের সবার ঘরে মেয়ে ছিল, কারো ছেলে সন্তান নেই, জানিনা কার পাকা ধানে মই দিয়েছিলাম, যার কারনে আমার ক্ষতি করতে এভাবে জ্বীণ চালান দিয়েছে আমার পিছনে!!! মামা বললেন চুলায় হাঁড়িতে পানি দিয়ে বসিয়ে আসতে, আমি যথারীতি তাই করলাম, এরপর একটা তাবিজ লাল কলমে লেখা বললেন এটা যখন পানি বয়েল হতে থাকবে তখন পানিতে ছাড়তে আর সেই সাথে উনার মোবাইলে রাখা সম্পূর্ণ আজানটা একই সাথে ছাড়তে,
তত সময় কাগজের লেখাটাও পানিতে মিশে যাবে আর আজানও সম্পর্ন হবে, কথা মতো আমি তাই করলাম, আরো মামা বললেন এই পানিটা প্রতিদিন একই সময়ে সম্পূর্ণ ঘরের কোনায় কোনায় ছিটাতে হবে তিনদিন, ভুল করেও যদি সময় ঠিক না রাখি, বা একদিন মিস করি ,তাহলে কাজে দিবেনা, আরেকটা শর্ত দিলেন এই পানি হাত দিয়ে না , গাছের পাতা সহ ছোট একটা ডাল আনতে হবে, আর সেই পাতাগুলো পানিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে ছিটাতে হবে প্রতিটা রুমের কোনায় কোনায়,প্যাসেজ পর্যন্ত যেনো বাদ না দেই, এই বলে চলে গেলেন, সেই সাথে বাচ্চাদের, শুক্র শনিবার বিকালে প্রতিদিন২ ঘন্টা করে পড়াতে রাজী হলেন, মামা যেতে যেতে সন্ধ্যা ৭টার উপর হয়ে গিয়েছিল, তখন জুলাই মাসের শেষের দিক, লম্বা দিন, তাই প্লান করলাম প্রতিদন রাত ৮টার সময়, পানিটা নিয়ে ছিটাব। শুরু করলাম পানি ছিটাতে , কিন্তু মনে হচ্ছিল আমার সমস্ত শরীর এতো ভারী হয়ে আছে, হাত পা চালাতে পারছিনা, বড় ছেলেকে বললমা আমার সাথে থাকতে, শুরু করলাম রান্না ঘর থেকে ছেটানো, নীচের ফ্লোরের সব রুম শেষ, প্যাসেজ ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগলাম পানি ছিটাতে ছিটাতে, এভাবে উপর পর্যন্ত গেলাম…..আগামীতে আসছে শেষ পর্ব ।
লেখিকা: ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন