1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : Rakibul Hasan Shanto : Rakibul Hasan Shanto
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

#একমাসের_বাড়ী ( সত্য ঘটনা অবলম্বনে ভূতুড়ে গল্প) #১০ম_এবং_শেষ_পর্ব

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০
  • ২৭৫ Time View

ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন:

ঐভাবে পড়া পানির বাটি নিয়ে সমস্ত ঘরে ছিটালাম, তেমন কিছু না হলেও সেই সময় শরীর হাত পা এতো ভারী মনে হচ্ছিল যেন কেউ ধরে রেখেছে আমাকে, বড় ছেলেকে আমার পিছনে থাকতে বলেছিলাম যাতে পড়ে না যাই, এরসমাঝে বলে রাখি আমার চারটা বাচ্চা নিয়ে আগের যে ঘরে ছিলাম সেটা ছিল ওভার ক্রাউডেড, তিন বেড রুমের ঘর হলেও দুটো সিঙ্গেল রুম আর একটা ডাবল, সিঙ্গল একরুমে দুই ছেলে বাঙ্ক বেডে থাকতো, ছোট্ট একটা আলমারী, বিছানা থেকে নেমেই দরজা, মানে খুবই ছোট রুম, আরেক সিঙ্গেল রুমে মেয়ে, সেই রুমে দেয়ালে আলমারী লাগানো ,আমাদের রুমও অনেক ছোট, ছেলের কট বেড রাখতে পারিনি, ছোট রান্না ঘরে পাশা পাশি দুজন দাঁড়ালে গায়ে গায়ে লেগে যায়, মোট কথা একটা পাখীর বাসাই ছিল।

আমার স্বপ্ন ছিল বিশাল বড় বড় রুম হবে, লিভিং রুমও বড় হবে যেখানে বড় সোফা ,টিভি ডাইনিং টেবিল থাকবে মোট কথা বিশাল বড় হবে, রান্না ঘরও বড় চাই, অনেক গুলো কাবার্ড থাকবে, আরেকটা কথা বলি, লন্ডনে আগের দিনে রান্না ঘরে কাবার্ড গুলো সাদা থাকতো, এবং ওয়ার্কটপও সাদা, এতে সমস্যা হতো দাগ বেশী পড়তো, আমার স্বপ্ন ছিল নিজের যদি কোনোদিন ঘর হয়,তাহলে রান্না ঘরের কাবার্ড সাদা বা ঊড লাগাবোনা, ডার্ক কালার মানে ব্রাউন বা কালচে রং হবে, ওয়ার্কটপ থাকবে মার্বেলের, গার্ডেন থাকবে যেখানে বাচ্চারা খেলবে, এখন যে ঘরটায় আছি সেটাও মোটামুটি বড় যেরকম চাই প্রায় সেরকমই, কিন্তু এটা প্রাইভেট প্রপার্টি, আমার ঘর কোনোদিনই হবেনা, তাছাড়া প্রাইভেট প্রপার্টির আরো অনেক সমস্যা আছে, সেটা বাদই দিলাম,এখানে আরেকটা বিষয় বলে রাখি, আগের ঘরে থেকে এই ভূতুড়ে টেম্পোরারী ঘরে আসার কিছুদিন আগে থেকে আমার কিছু সমস্যা হয় শ্বশুরবাড়ীর লোকদের সাথে, যে কারনে তাদের সাথে পুরাপুরি যোগাযোগ বন্ধ করে দেই,কিন্তু তারা বিভিন্ন ধরনের মানুষ পাঠিয়ে বা আমার ঘরের দরজার লেটার বক্সে দিয়ে কিছু ফেলে যেতো।

এসবব নিয়ে পুলিশও ডাকা হয় কয়েকবার, কিন্তু তেমন প্রমাণ না থাকায় কিছু করতে পারছিলনা, আর আমার বাসার সামনেও দূর থেকে দাঁড়িয়ে থাকতো কিছু লোক যেগুলোকে দেখতেই বোঝা যেতো চোর গাঁজা খোর টাইপ, সবকিছু মিলিয়ে নিজের আর বাচ্চাদেরও জীবন নিরাপদ ছিল না, আর সেই সময় হাসবেন্ডের এক্সড্যান্ট সব মিলিয়ে স্যোশিয়াল ওয়ার্কারই আমাকে সাহায্য করেছিল দুদিনের মাঝে ঘর মুভ হতে, পাঠকরা হয়তো বলবেন আমার হাসবেন্ড কোন কিছু কি করেনি বা উনার পরিবারকেও কিছু বলেন নি কেনো? হ্যাঁ আমার স্বামী কখনই এসব বিশ্বাস করতেন না যে, উনার সাইড থেকে এসব করা হচ্ছে, পরিবারের ব্যাপারে কিছু বললেই বরং আমাকে উল্টো খারাপ বলতেন, আমার নিজের কেউ ছিলনা বলেই তারা আরো সুযোগ নিতো,আর এজন্যই আমাকেই একাই অনেক কিছু করতে হতো, যাই হোক হুজুর মামার পানি পড়া দিয়ে গেলাম পর পর দুদিন, এর মাঝে যেদিন শেষ বার দেবো পানি মানে তৃতীয় দিন সেদিন কাউন্সিল থেকে কল এলো অফিসে দেখা করতে, আরেকটা কথা বলে রাখি এখানে ঘরের জন্য বিড করতে হয় প্রতি সাপ্তাহে, তার জন্য একটা নাম্বার দেয়া হয়, কিন্তু কেনো জানিনা ঐ নাম্বার কাজ করছিলনা, তাই অফিসে বলেছিলাম, ভাবলাম এজনই মনে হয় আমাকে ডাকা হয়েছে, কাল সকালে যাব অফিসে।

আজ শেষ দিন পানি ছিটানোর, কেনো জানি ভয় ভয় লাগছে, সেই সাথে মামা ঘরের প্রতিটি দরজা জানালার উপর লাগানোর জন্য একটা করে তাবিজ লিখে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন শেষ দিন পানি পড়া দিয়ে ওগুলো আঠা দিয়ে সব দরজা জানালার উপর লাগাতে, আমি পানি পড়া নীচের রুমে ছিটাচ্ছি, সেই সাথে শরীর ভারী ভারী মনে হচ্ছে, সাথে বড় ছেলেকে রেখেছি, প্যাসেজ শেষ করে সিঁড়ি দিয়ে উঠছি আর কোনায় কোনায় পানি দিচ্ছি হঠাৎ মনে হলো আমার মাথার উপর থেকে সিলিংটা কালো অন্ধকার হয়ে,ভেঙ্গে আমার মাথার উপর পড়ে যাচ্ছে, আমি ভয়ে চিৎকার দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম, আমার বড় ছেলেও ভয়ে আমাকে ধরে বললো কি হইছে মাম? আমার চিৎকারে বাকী বাচ্চারাও চলে এলো সিঁড়ির কাছে, জানতে চাইলো কি হইছ, আমি বললাম,মনে হলো সিলিং ভেঙ্গে আমার উপরে পড়ছে, কিন্তু এখন তো দেখি ঠিক আছে ,ছেলে বললো সে দেখেনি এমন কিছু , আমি বুঝতে পারলাম এটা শুধু আমি দেখবো,তার মানে যাতে করে পানিটা ছিটিয়ে শেষ না করতে পারি, ভাগ্যিস হাত থেকে পানি পড়েনি, ছেলে পিছনে থাকায় আমাকে ধরেছিল, তা না হলে হয়তো আমি সিঁড়ি থেকেও পড়ে যেতাম,কিছু হতো আমার, মনকে আরো শক্ত করে, বাচ্চাদের সবাইকে আমার সাথে রেখে সিড়ি দিয়ে আবার ওঠা শুরু করলাম, আর স্পষ্ট দেখছি , অন্ধকার হয়ে সিলিং আমার উপরে চলে আসছে, আমি চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম জপে জপে ছিটাচ্ছি পানি, যতবারই চোখ খুলি দেখতে পাই সেইম ঘটনা, তবুও আমি থামার পাত্র নই, এভাবেই উপর তালার সব রুমে রুমে পানি দিলাম বাচ্চাদের সাথে নিয়ে, কিন্তু বাচ্চারা কেউ কিছু দেখছেনা যেটা আমি দেখছি, ফাইনালী শেষ করে তাবিজ গুলো লাগালাম, কিন্তু সারা সময় শরীরটা অনেক ভারী লাগছিল, সে রাতে আর কোনো ভয় পেলাম না, বা বাচ্চারাও কেউ ঘুম থেকে জেগে ওঠেনি, আলহামদুলিল্লাহ একটা সুন্দর সকাল দিয়ে শুরু হলো দিন, বাচ্চারা স্কুলে গেলো, আমি ছোটটাকে নিয়ে অফিসে গেলাম এবং সেখানে গিয়ে বললাম বিডিং হচ্ছেনা, তারা কম্পিউটারে চেক করছে, সেখানে থাকা অবস্থায় একটা কল এলো , বললো ফাতেমা কন্গ্রাচুলেশন! ৪ বেড রুমের একটা ঘর তোমার জন্য সিলেক্টেড হয়ে গেছে, কিন্তু কিছু কারনে যোগাযোগ করতে পারিনি, আমি আবাক হয়ে গেলাম, কারন আমি তো বিডিং করার সুযোগও পাইনি তাহেল কিভাবে? যে অফিসে ছিলাম তাদেরকে বললাম কলটার কথা, তারা বললো, তাহলে এজন্যই তুমি বিড করতে পারছোনা, তোমার জন্য ঘর সিলেক্ট হয়ে গেছে, তোমাকে ৩টা চয়েজ দেয়া হবে,এগুলো এ মাসের মাঝেই , ঘর পছন্দ না হলে, ৪ বেড রুমের জন্য ৪/৫ বছর ওয়েটিং এ থাকবে, ঐদিকে ফোন কলের লোকটা আমাকে আগামী সাপ্তাহে একটা তারিখ দিলো ঘরটা দেখতে, ঘরে এসে আর কোনো সমস্যা হলো না, বাচ্চাদের নিয়ে আছি আর কোনো ভয় পাইনি,ভালয় ভালয় দিন কাটছে, এর মাঝে রোজার মাস শুরু হলো, মোট কথা আমরা ভাল আছি, সময় মতো এক সাপ্তাহ পর গেলাম ঘর দেখতে,কিন্তু ঘর দেখার আগেই মন খারাপ হলো ফ্লাট এবং ৬ তালার উপর শুনে, নীচে থেকেই ফিরে যেতে চাইলাম, তখন বাঙ্গালী হাউজিং অফিসার বললেন আমাকে….. এই ঘরটায় আপনি ৩ নাম্বার পজিশনে ছিলেন, প্রথম যারা তারাও ফ্লাট শুনে না করে দিয়েছে,দ্বিতীয় যারা তাদেরকে ইমেল বা কল করেও যোগাযোগ করতে পারিনি বেশ কয়েকবারে, এখন আপনি কষ্ট করে এসে ফিরে যাবেন? আমি বাঙ্গালি হিসেবে রিকোয়েস্ট করবো একবার ভিতরটা দেখে যান, মুরব্বী লোকটার কথা ফেলতে পারলাম না, দেখতে উপরে এলাম।

কিন্তু একি! এতো আমার স্বপ্নে আঁকা হুবহু ঘর, বিশাল বিশাল সব রুম, দুটো মাস্টার বেডরুম, ডাবল একটা, সিঙ্গেলটাও কোয়ার্টার সাইজ, লিভিং রুমে ফুটবল খেলা যাবে, আর সবচেয়ে অবাক করা বিষয় রান্না ঘর! যেটা আমার কল্পনার সাথে সম্পূর্ন মিল, বিশাল রান্না ঘরের চারিদেকে ব্রাউন কাবার্ডে ভরা, মার্বেলের ওয়ার্কটপ, লিভিং রুমের দরজা খুললেই বিশাল বড় ছাদ, যেখানে ক্রিকেট খেলা যাবে, সাধারনত লন্ডনের কোনো বাড়ীতে ছাদ থাকেনা, এই বাসাটা সম্পূর্ন নতুন বিল্ডিং, মনে হচ্ছিল যখন এই বাসাটা বানানো হয় তার প্লান আমিই করেছিলাম,আমার মাথায় শুধু ঘুরছিল সেই কথা ………. আমার মন মতো ঘর না হলে এই ঘর ছাড়বোনা, তাহলে কি ঐ ঘর ছাড়ার জন্যই আমাকে এই ঘর দিয়েছে????? জানিনা এর পিছনের কি রহস্য! আমি আলহামদুলিল্লাহ বলে লোকটাকে ঘর পছন্দ হয়েছে জানালাম, পরবর্তী সপ্তাহে তার অফিসে গিয়ে পেপারসওয়ার্ক আর সাইন করে ঘরের চাবি আনতে বললো, আমি ঘরে এসেও ভাবছি, এটা কিভাবে সম্ভব!!!!! এতো মিল কিভাবে মিলে গেলো আমার কল্পনার সেই ঘরের সাথে? আমি আজও জানিনা যে ঐ ঘরের ভূতটা কেউ চালান দিয়েছিল না কি
আগেই ছিল সেই ঘরে একমাত্র আল্লাহই ভাল জানেন!!!!!
মোট কথা শেষ ভাল যার সব ভাল তার ????????
শেষ পর্ব

লেখিকা:ফাতেমা ফেরদৌস রেসিম,লন্ডন।

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..