নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর কড়াইল বস্তি। যেখানে অবৈধ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগের ছড়াছড়ি। অবৈধ এই সংযোগ দিয়ে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে নিচ্ছে কয়েকটি সিন্ডিকেট। কড়াইল বস্তিতে ওয়াসার বৈধ পানির সংযোগ থাকলেও অবৈধ সংযোগে নাকি সুবিধা বেশি। বস্তিবাসীর ভাষ্য মতে, বৈধ সংযোগে সব সময় পানির সঙ্কট থাকে। অবৈধ সংযোগে নির্ধারিত সময়ে ঠিকই পানি পাওয়া যায়। অবৈধ পানির ব্যবসায়ীরা ওয়াসার সাথে যোগসাজসে বৈধ সংযোগধারীদের কৃত্রিমভাবে পানির সঙ্কট সৃষ্টি করে রাখে। এছাড়া ঘুষ ছাড়া মিলে না বৈধ সংযোগ। খরচ বেশি, ভোগান্তি বেশি। আবার যিনি পানির বিল দিতে আসেন তাকে ১০০ টাকা করে দিয়ে বিল নিতে হয়। তাই বৈধ সংযোগ নিতে বস্তিবাসীর অনীহা। অবৈধ সংযোগেই ভরসা! দৈনিক প্রত্যয়ের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
‘ওয়াসার বৈধ লাইনে আমরা পানি পাই না। অবৈধ লাইনে পানি সংগ্রহ করি’ এমন মন্তব্য কড়াইল বস্তির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারীর।
বউ বাজার এলাকার আরেক নারী বলেন, ‘সাধারণ মানুষ পানি পায় না, কিন্তু যারা পানি বিক্রি করছে, তাদের কাছে পানির কোন অভাব নেই। তারা পানি কোথা থেকে পাচ্ছে? যারা পানি ব্যবসা করছে তারা ১ ঘন্টা করে পানি দিবে মাসে দুই হাজার টাকা, আর আধাঘন্টা পানি নিলে এক হাজার টাকা নিচ্ছে। যদি পানির সঙ্কট হয় তাহলে পানি বিক্রেতা পানি পায় কোথায়? এমন তো না এনারা সরাসরি ওয়াসা থেকে লাইন এনে পানি বিক্রি করছে অথবা ডিপকল বসিয়ে পানি গভীর থেকে তুলছে।’
এরশাদ নগরের বাসিন্দা সিরাজুল হক জানান, ‘আমাদের এরিয়ায় ওয়াসার পানির লাইনের একটি চাবি আছে। যখন পানির স্প্রিড কম থাকে তখন অবৈধ পানির ব্যবসায়ীরা এখান থেকে চাবি ঘুরিয়ে বন্ধ করে রাখে। এভাবে তারা পানির সঙ্কট সৃষ্টি করে।’
বস্তির বাসিন্দা রানা অভিযোগ করেন, ‘বেসরকারি সংস্থার সহযোগিতায় যার যার বাসায় টিউবওয়েল আছে তার তার বাসায় মিটার আছে। মিটার অনুযায়ী কে কত ইউনিট খরচ করেছে লোক এসে মিটার দেখে লিখে নিয়ে যায়। পরে যে এসে বিল দিয়ে যান তাকে প্রতি ঘর থেকে যেসব ঘরে টিউবওয়েল আছে সেসব ঘর থেকে ১০০ টাকা করে দিতে হয়।’
কুমিল্লা পট্টির আমজাদ হোসেন বলেন, ‘অবৈধ পানির ব্যবসায়ীরা বৈধ মিটার থেকে বাইপাস করে আরেকটা লাইন বের করে বস্তিতে অবৈধ লাইন দেয়। ওই বৈধ মিটারে যত ইউনিটই খরচ হোক না কেন, বিল কত আসবে ওয়াসা অফিসের সাথে চুক্তি করা আছে। ওয়াসার লোকেরা চুক্তি অনুযায়ী মনগড়া বিল বানিয়ে দেয়। যেমন- বিল যদি হয় বিশ হাজার তারা পাঁচ হাজার টাকার বিল বানিয়ে দেয়। এরজন্য ওয়াসার লোক নেয় তিন হাজার।’
বেদে বস্তি এলাকায় অবৈধ সংযোগ দিয়ে পানির ব্যবসায়ীদের একজন ফটিকের সাথে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন ‘এসব নিয়া লিখ্যা লাভ নাই। নেতা-খ্যাতা, পুলিশ প্রশাসন সবাই জানে। আমরা সবাইরে দিয়াই খাই!’
বস্তিবাসীদের নিয়ে কাজ করা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কর্মকর্তাদের দাবি, বৈধভাবে নাগরিকের মৌলিক অধিকার পূরণ করা না হলেও বস্তির বাসিন্দারা অবৈধভাবে গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি ঠিকই পাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যাটি দেখেও না দেখার ভান করছে। মাঝ থেকে তথাকথিত সিন্ডিকেট কোটি কোটি টাকা ফাউ কামিয়ে নিচ্ছে।