1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  4. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  5. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  6. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  7. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  8. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :

“কদমফুল আর একজন বাবা” লেখিকা:সাদিয়া আফরোজ লুনা

  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুন, ২০২০
  • ৬১৯ Time View

ছেলেকে নিয়ে দীর্ঘদিন পর বাসার পিছনের পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম

সাথে ছিল বান্ধবী শুভ্রার কন্যা আর তার মা। আন্নিকা আর রায়ানের মধ্যে খুব মিল, একেবারে প্রাণের বন্ধু দুজন। আর কাকী ঠিক যেন চিরায়ত বাংলার মায়ের প্রতিচ্ছবি। তার নাতনি আর আমার পুত্র দিন দুনিয়া ভুলে মনের সুখে খেলছিল। ওদের উপর চোখ রেখেই আমরা কথা বলে যাচ্ছিলাম। কথা বলতে বলতেই একটু দূরে একটা গাছের উপর চোখ আটকে গেলো দুজনেরই। ঝোপমতো একটা গাছ। গাছটা যেন ঠিক কাছে ডাকছিল আমাকে, কাছে গেলাম। গাছ ভর্তি গোল গোল ফুল, বিভিন্ন রকমের পোকা উড়ে বেড়াচ্ছে। ফুল গুলি সাদা হলেও দেখতে ঠিক অনেকটা দেশের কদম ফুলের মত। মিষ্টি একটা গন্ধ, গন্ধটা আবার পুরোই কদম ফুলের মতো। মিষ্টি! প্রাণ ভরে গন্ধ নিলাম, গন্ধটা মনটাই ভালো করে দিলো। মনের সুখে কাকীকে বেসুরো গলায় ” বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছো দান” এক লাইন শুনিয়েও দিলাম। ছবি তুলে নিলাম বেশ কিছু। যতক্ষণ বাইরে ছিলাম মনের মধ্যে, মনের মধ্যে কদমফুল কদমফুল করছিলো আর চোখও চলে যাচ্ছিলো গাছটার দিকে।। কি যেন একটা মনে হয়েও মনে হচ্ছিলনা।

বাসায় ফিরেও সুখ নেই, কদমফুল পিছু ছাড়ল না। ছবি দেখি আর কেমন যেন লাগে।

ছেলেকে ঘুম পাড়াই, আর ভাবি কদমফুলের কথা। কেমন যেন একটা অস্বস্তি, একটা অনুভূতি, একটু খানি কষ্ট অনুভব করছি। ছেলের ঘুম আসেনা। বললাম ওকেঃ স্টোরি বলবো বাবা?
হ্যাঁ মাম্মি।
আমার স্টোরি মানেই হচ্ছে আমার কিছু স্মৃতি। আমার ফেলা আসা সময়ের কথা।


শুরু করলাম আমার ছোট বেলার এক গল্প, আমার দাদাবাড়ির গল্প। গাছ থেকে পরে যাওয়া এক পাখির বাচ্চার গল্প, যাকে বাঁচাতে না পারার কষ্ট এখনও আমাকে পীড়া দেয়। ছেলে ঘুমিয়ে গেলো। আমার মনে আবারও কদমফুল। সাথে সাথেই মনে ভেসে উঠলো এক স্মৃতি। গ্রাম, দাদাবাড়ি !!!! বুঝে গেলাম কেন কষ্ট পাচ্ছি সারাটা সময়। বহু বছর আগে, কত হবে ৩০? নাকি ৩২? বেড়াতে গিয়েছিলাম দাদাবাড়ি ছোট্ট আমি। দাদাবাড়ি অনেক বড়, প্রচুর গাছ, ফলের বাগান, পুকুর আর ক্ষেতে ভরা। আমাদের বাসা থেকে ট্রেনে ৭/৮ ঘণ্টা লেগে যেতো। সারাটা বছর তাকিয়ে থাকতাম কবে
যাবো বাড়ি।


বাড়িতে খুব বড় একটা কদমগাছ ছিল, বাইরের পুকুরের কোল ঘেঁষে, অনেক ফুল ফুটত। কিন্তু এতো উপরে যে ধরা যেতনা। সেবার পুকুরের পাড় ভেঙ্গে কদম গাছটা পানির উপর প্রায় শুয়ে পরে যায়। আব্বাকে দেখলাম কি দিয়ে যেন গাছ কাটতে শুরু করেছে। মন খারাপ হোল খুব, সাহস করে বললাম কেন গাছটা কাটছেন আব্বা? কি যে উত্তর দিয়েছিলেন আব্বা মনে নেই। মন খারাপ নিয়েই আবার খেলতে চলে যাই। কিছুক্ষণ পরে আব্বা আসে, আব্বার হাতে দুইটা কদমফুল। আব্বা বলল “নেও”

আমার জন্য ফুল নিয়ে এসেছে আব্বা? আব্বা কি বুঝতে পেরেছিল তার ছোট্ট মেয়েটার মনের কষ্ট? ফুল পেয়ে খুব খুশি আমি, জীবনে এই প্রথম আব্বার কাছ থেকে ফুল পাওয়া, এই ছিল শেষ। ভুলেই গিয়েছিলাম এই ছোট্ট মধুর ঘটনা। আজ ভিন্ন একটা ফুলের কারণে ৩০/৩২ বছর আগের মনের গহীনে চাপা পরে থাকা স্মৃতি হঠাৎ করে চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে।

আব্বা নেই, দাদাবাড়ি নেই, কদমগাছও নেই। কোথায় কত দুরে আমার দেশ, কোথায় আমার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা। আজ এতো বছর ক্যানসাসের ছোট্ট একটা পার্কে জংলীমতো একটা গাছের সাদা সাদা কদমফুলের মতো ফুল বহু বছর আগে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি মনে করিয়ে আমার দুচোখ ভাসিয়ে যাচ্ছে। সে কদমফুল ফুল না, পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাওয়া এক বাবার তার কন্যার প্রতি ভালোবাসা অনুভূতি।

 

লেখিকা:সাদিয়া আফরোজ লুনা

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..