ওয়েব ডেস্ক: মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে বন্দি রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে করা রিটের শুনানিতে দেশের কারাগারগুলোতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে কনডেম সেলে থাকা সব বন্দির তথ্য দাখিল না করায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে আদালতের মনোভাবের বিষয়টি জানাতে রোববার (৫ ডিসেম্বর) দুপুর ২টার পর অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনকে শুনানিতে অংশ নিতে বলেছেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার। রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে গত ২ সেপ্টেম্বর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শিশির মনির। রিটকারী তিন আসামি হলেন- চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম।
তাদের আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন। তারই ধারাবাহিকতায় রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট ভার্চুয়াল বেঞ্চে আবেদনটি শুনানির জন্য ছিল।
রিট আবেদনে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে কনডেম সেলে আবদ্ধ রাখা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে। এ রুল বিবেচনাধীন থাকা অবস্থায় আবেদনকারীদের কনডেম সেল থেকে স্বাভাবিক সেলে স্থানান্তরের আবেদন করা হয়েছে।
সেই সঙ্গে দেশের সব জেলের কনডেম সেলে থাকা সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের রাখার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে (সুযোগ-সুবিধা) কারা মহাপরিদর্শককে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রিটে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন সচিব, আইজিপি, আইজি প্রিজন্স, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কুমিল্লার সিনিয়র জেল সুপারকে বিবাদী করা হয়েছে।
আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক সাজা কার্যকর করার আইনগত কোনো বিধান নেই। মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করতে কয়েকটি আবশ্যকীয় আইনগত ধাপ অতিক্রম করতে হয়।
প্রথমত, ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৭৪ ধারা মতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমোদন নিতে হবে। সেই সঙ্গে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪১০ ধারা অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে আপিল দায়েরের বিধান রয়েছে। দ্বিতীয়ত, হাইকোর্ট বিভাগ মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখলে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি সাংবিধানিক অধিকারবলে আপিল বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করতে পারেন। তৃতীয়ত, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১০৫ অনুযায়ী আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনের আইনগত সুযোগ রয়েছে।
সর্বোপরি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৯-এর অধীন রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। রাষ্ট্রপতি ক্ষমার আবেদন নামঞ্জুর করলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আইনগত বৈধতা লাভ করে। কিন্তু বাংলাদেশে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পরই সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে নির্জন কনডেম সেলে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে বন্দি রাখা হয়।
শিশির মনির আরও জানান, গত ১৮ জুন দৈনিক ইত্তেফাকে ‘ডেথ রেফারেন্স জটে বছরের পর বছর কনডেম সেলে আসামিরা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তাতে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগে চলতি বছর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি চলছে।
অর্থাৎ ২০২১ সালে বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হবে ২০২৬ সালে। ২০২০ সালের হিসাব অনুযায়ী হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন ডেথ রেফারেন্সের সংখ্যা ৭৭৫টি। এ সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। বর্তমানে হাইকোর্ট বিভাগের তিনটি বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স মামলার শুনানি করছে। দেশের কারাগারগুলোতে বর্তমানে দুই হাজার পাঁচ ফাঁসির আসামি কনডেম সেলে বন্দি।