ওয়েব ডেস্ক: সংসদে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ছিল একটি ‘উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত আইন’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সর্বোচ্চ আদালত। আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ সর্ব সম্মতিক্রমে গত বছরের ২০ অক্টোবর এ রায় দেন।
বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে রিভিউয়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। রায়ে পৃথক পর্যবেক্ষণ সহকারে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানি রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়। ফলস্বরূপ, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুর্নবহাল করা হয়। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
রায়ে ছয়জন বিচারপতি পৃথক পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ব্যতীত রায় প্রদানকারী অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস. এম ইমদাদুল হক।
সেদিন আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূইয়া, আরশাদুর রউফ, অনীক আর হক। রিটের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।
রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, এই রিভিউ আবেদনে উত্থাপিত বিষয়বস্তুর মধ্যে একটি সাধারণ বিষয়ও রয়েছে। যার মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কর্তৃত্ব অব্যাহত রয়েছে। যেমন- প্রয়োজনে বিচারকদের আচরণবিধির মূল্যায়ন ও সংশোধন করা। ৯৬ অনুচ্ছেদের বর্তমানে পুর্নবহাল করা ধারা (৪) (ক) এর অধীনে বিবেচনা করা উক্ত বিষয়টি সর্বাগ্রে একটি অপরিহার্য উপাদান। প্রকৃতপক্ষে, সংবিধানে বিচারিক আচরণের সাংবিধানিকতা, যা নিজেই একটি জীবন্ত দলিল। এবং তা চিরস্থায়ী পুনঃউদ্ভাবনের অনুমতি দেয়।
এটাও ঠিক যে, সংবিধানের মূল চেতনা এবং সংবিধানের অক্ষর এই ধরনের বর্ণনার বাইরেও প্রাধান্য লাভ করে। অন্যথায় সংবিধান নিজেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে, আচরণবিধিকে শুধুমাত্র সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা উচিত। যা প্রয়োজনে বিদ্যমান বিধানগুলোও পুনর্বিবেচনা করতে পারে।
তিন আরও বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুনরুজ্জীবিত করা হলো। এই রিভিউ আবেদনটি উপরোক্ত পর্যবেক্ষণের সাথে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে যেকোনো বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এবং বিতর্কিত রায়ের কার্যকরী অংশের কার্যকারিতায় প্রয়োজনীয় অস্পষ্টতা এবং বিরোধ দূর করার জন্য, ৯৬ অনুচ্ছেদের ২-৮ ধারাগুলি সম্পূর্ণরূপে পুর্নবহাল করার ঘোষণা করা হলো।
রায়ের পর্যবেক্ষণে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর আগে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাঠামোর জন্য নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছিল। কোড ৩৮(ক) এবং (খ) এর মতো রায়ে অনুরূপ বিধি যুক্ত করা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। যার ফলে নিয়মগুলো (আইন) কীভাবে বোঝা এবং প্রয়োগ করা হয়, তাতে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রভাবিত হয়। এবং এটি অবশ্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ওপর একটি প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ এই ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে। যাতে বিচার বিভাগ অযাচিত প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করে এবং জবাবদিহিতা বজায় রাখে। তবে, এর বিধানগুলোকে প্রতিলিপি বা অগ্রাহ্য করে এমন কোনও অতিরিক্ত বিচারিক ঘোষণা অসাবধানতাবশত এর কর্তৃত্বকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে এর ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগে অস্পষ্টতা তৈরি হতে পারে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর মামলার সারমর্ম কী ছিল? আমার মতে, এটি ছিল একটি স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের প্রচেষ্টা, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল থেকে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে সংসদের হাতে ন্যস্ত করার, যার ফলে বিচারকদের স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে পড়ে। অন্য কথায়, যদি কোনও বিচারক তার দায়িত্ব পালনের সময় সরকারের ক্রোধ বা বিরোধিতার শিকার হন, তাহলে সংসদ সদস্যরা তাকে কলমের আঘাতে পদ থেকে অপসারণ করতে পারেন। গণতান্ত্রিক সমাজে কি এমন পরিস্থিতি অনুমোদিত বা গ্রহণযোগ্য হতে পারে? আমার বিবেচনায়, যেমনটি আমার বিদ্বান ভাইয়েরা (বিচারপতি) তাদের নিজ নিজ রায়ে বলেছেন, এর উত্তরটি হলো জোরালোভাবে ‘না’।
রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হলো আইনের শাসনের ‘অপরিহার্য শর্ত’, যা যেকোনো গণতান্ত্রিক সমাজের ভিত্তি গঠন করে। আইনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হিসেবে কাজ করে। বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ করার প্রক্রিয়া বিচার বিভাগের ওপর সাধারণ জনগণের আস্থা নষ্ট করে। অতএব, বিচারকদের দায়িত্ব পালনের সময়, ন্যায়বিচারের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং প্রশাসনের জন্য তাদের মেয়াদ নিশ্চিত করা অপরিহার্য।
তিনি আরও বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল আপিল বিভাগ থেকে স্বতন্ত্র এবং পৃথক। অতএব, বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক আচরণবিধি প্রণয়ন এই বিভাগের ওপর অর্পিত কর্তৃত্বের অতিরিক্ত বলে মনে হয়। এটি রেকর্ডের সামনে স্পষ্টতই একটি ত্রুটি। অতএব, আমি মনে করি যে ২০১৭ সালের সি.এ. নং ০৬-এ রায় প্রদানের সময় বিজ্ঞ প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রণীত আচরণবিধি সংবিধানের ৯৬ (৪) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রণয়ন করা হয়নি। ফলস্বরূপ, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুনরুদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে, এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর নতুন করে আচরণবিধি প্রণয়ন করা বাধ্যতামূলক।
বিচারপতি মো. সৈয়দ জিয়াউল করিম প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমার মতে, ষোড়শ সংশোধনী ছিল একটি উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত আইন এবং এটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ; যথা- নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং সংবিধানের দুটি মৌলিক কাঠামো, ৯৪(৪) এবং ১৪৭(২) দ্বারা নিশ্চিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। একই সঙ্গে এটি সংবিধানের ৭(খ) অনুচ্ছেদ দ্বারাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলী সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৭(খ) তে বলা হয়েছে- ‘‘সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।’’
অতএব সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগই যথাযথভাবে ঘোষণা করেছে যে সংবিধানের (ষোড়শ সংশোধনী) আইন, ২০১৪ (২০১৪ সালের ১৩ নং আইন) উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, বাতিলযোগ্য এবং তা সংবিধান পরিপন্থী।
প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি মো. রেজাউল হক। রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, যেকোনো চাকরিতে, প্রত্যেকেরই পদত্যাগ করার সহজাত অধিকার রয়েছে। কাউকেই তার স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরি চালিয়ে যেতে বাধ্য করা যাবে না। অতএব, সংবিধানের ৯৬(৮) অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের পদত্যাগ সংক্রান্ত বিধান পুনরুজ্জীবিত করা, যেমনটি প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণসহ বলেছেন, এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। ফলস্বরূপ, প্রধান বিচারপতির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে, এই পুনর্বিবেচনা আবেদনটি উপরোক্ত পর্যবেক্ষণসহ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুর্নবহাল করে নিষ্পত্তি করা হলো। একই সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক বেঞ্চের তৃতীয় বিচারক হিসেবে প্রদত্ত অবমাননাকর মন্তব্যগুলো এতদ্বারা বাতিল করা হলো।
রায়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করে বিচারপতি এস.এম ইমদাদুল হক বলেন, মামলার বিষয়বস্তু থেকে জানা যায় যে, একজন হাইকোর্টের বিচারক আর্থিক দিক দিয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত নাও হতে পারেন, কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হতে পারেন। তৃতীয় বিচারক (হাইকোর্টের রায়ে ভিন্নমত প্রদানকারী) ভবিষ্যতে ক্ষমতাসীন দলের অনুগ্রহ লাভের লক্ষ্যে উপরোক্ত (অবমাননাকর মন্তব্য) মন্তব্যগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে করেছেন, যাতে তিনি কিছু অন্যায্য সুবিধা অর্জন করতে পারেন। এই ধরনের আচরণ অত্যন্ত নিন্দনীয়। আবারও, তৃতীয় বিচারকের পর্যবেক্ষণের সামগ্রিক পাঠে স্পষ্ট যে তিনি বেশ কিছু অশালীন, অশ্লীল এবং অশালীন শব্দ ব্যবহার করেছেন। উপরোক্ত প্রেক্ষাপটে, তৃতীয় বিচারক এই বিভাগ কর্তৃক প্রণীত সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের জন্য আচরণবিধি এবং গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১১১ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘণ করেছেন বলে প্রমাণিত হয়।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে, আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছি যে, যদিও অধ্যাদেশের অন্যান্য আদালতের ওপর কোনও বাধ্যতামূলক বল প্রয়োগ বা কর্তৃত্ব নেই। তবে ভবিষ্যতের মামলা-মোকদ্দমায় প্ররোচনামূলক কর্তৃত্ব হিসেবেও এটি উল্লেখ করা যেতে পারে। উপরোক্ত তথ্য এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপরে উল্লিখিত তৃতীয় বিচারকের (হাইকোর্টের রায়ে ভিন্নমত প্রদানকারী বিচারক) মন্তব্য এতদ্বারা, বাতিল করা হলো।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীটি জাতীয় সংসদে পাস হয়। এতে বিচারক অপসারণের ক্ষমতা ফিরে পায় সংসদ। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন ৯ আইনজীবী। প্রাথমিক শুনানির পর হাইকোর্ট ২০১৪ সালের ৯ নভেম্বর রুল দেয়। রুলে ওই সংশোধনী কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে ২০১৬ বছরের ৫ মে হাইকোর্ট সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। ওই বছরের ১১ অগাস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়। তিন বিচারকের ওই বেঞ্চের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। অন্য বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল তাতে ভিন্নমত জানিয়ে আলাদা রায় দেন।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করলে ২০১৭ সালের ৮ মে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। সব মিলিয়ে ১১ দিন রাষ্ট্র ও রিট আবেদনকারীর বক্তব্য শোনেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ সর্বোচ্চ আদালতের বিচারকেরা। গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ নয়জনই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন।
কামাল হোসেনের সঙ্গে একই মত পোষণকারীরা হলেন টি এইচ খান, এ এফ এম হাসান আরিফ, এম আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অন্যদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে অবস্থান জানান শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি।
আদালত মোট ১২ জন আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিলেও তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক ও শফিক আহমেদ মতামত দেননি। তাদের বাইরে ‘ইন্টারভেনার’ হিসেবে সংবিধানের এই সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু।
পরে সাত বিচারকের আপিল বিভাগ ৩ জুলাই যে রায় দেন, তাতে হাইকোর্টের রায়ের কিছু পর্যবেক্ষণ এক্সপাঞ্জ (বাদ দিয়ে) করে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল ‘সর্বসম্মতভাবে’ খারিজ করে দেওয়া হয়। ওই বছরের পয়লা আগস্ট পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।
পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের প্রায় পাঁচ মাস পর ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। ৯০৮ পৃষ্ঠার এই রিভিউ আবেদনে রাষ্ট্রপক্ষ মোট ৯৪টি যুক্তি তুলে ধরে। রায়ে দেওয়া কিছু আপত্তিকর পর্যবেক্ষণকে অপ্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে তা বাতিলের দাবি জানায়। রিভিউ আবেদনে পুরো রায়টি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চাওয়া হয়।
এরপর গত বছরের ২০ অক্টোবর রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ সর্ব সম্মতিক্রমে রায় দেন। রায়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল পুর্নবহাল করা হয়।