দৈনিক প্রত্যয় ডেস্কঃ বৈশ্বিক মহামারি করোনার ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে লাখ লাখ পোশাক শ্রমিক। জীবিকার তাগিদে কাজে যোগ দিয়ে এরমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় শতাধিক শ্রমিক। কিন্তু এ নিয়ে চলছে রাখঢাক। প্রথমে রাজধানীর উপকণ্ঠ সাভার পৌর এলাকায় বেশ কয়েকজন পোশাক কারখানা শ্রমিক করোনায় আক্রান্তের খবর জানাজানি হলেও পরে এ নিয়ে চরম গোপনীয়তা রক্ষা করছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, প্রশাসন ও পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। এ অবস্থায় করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে সাভার-আশুলিয়া অঞ্চলে সবরকম পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানিয়ে প্রশাসনকে চিঠি দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। ৩০ এপ্রিল তিনি চিঠি দিলেও কেউ তাতে কর্ণপাত করেনি! এরমধ্যে আক্রান্ত পোশাক শ্রমিকের সংখ্যা বেড়েই চলছে। আশুলিয়ার একটি কর্মজীবী হোস্টেলে পোশাক শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল চালুর চেষ্টা করছে বিজিএমইএ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী। গাজীপুর-নারায়ণগঞ্জসহ অন্য এলাকারও অবস্থাও অভিন্ন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে আশুলিয়ার খেজুরবাগান এলাকায় ১৪তলা কর্মজীবী নারী হোস্টেলটি করোনা আক্রান্ত পোশাক কারখানা শ্রমিকদের চিকিৎসা সেবার জন্য প্রস্তুত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয় সংসদ সদস্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বিষয়টি তদারকি করছেন। হোস্টেলটি বরাদ্দ চেয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়েও আবেদন জানানো হয়েছে। আইসোলেশন সুবিধাসহ অন্যান্য সেবা চালু করা গেলে এখানে ৭৫০ বেড স্থাপনের সুযোগ রয়েছে বলে জানা গেছে।
এদিকে বিজিএমইএ এ ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। বিজিএমই কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই হোস্টেলে আইসোলেশন সেন্টার করা হলে প্রতিদিন তিন শিফটে প্রতিটি ফ্লোরে একজন করে চিকিৎসক, তিনজন করে নার্স, দুইজন ল্যাব টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হবে। সেখানে যারা চিকিৎসা পাবেন তাদের বিজিএমইএ খাবার সুবিধা নিশ্চিত করবে বলেও বলা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬০ জন পোশাক শ্রমিক আক্রান্তের তথ্য রয়েছে বিজিএমইএ’র কাছে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সাভার-আশুলিয়ায় রবিবার পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত ৮২ জনের মধ্যে অর্ধেকের বেশি পোশাক কারখানা শ্রমিক। পোশাক কারখানা চালুর আগে যা ছিল শূন্যের কোঠায়। আক্রান্তদের মধ্যে আল মুসলিম গ্রুপ, এজেআই গ্রুপসহ একাধিক কারখানার শ্রমিক রয়েছে। বেগতিক পরিস্থিতিতে কারখানার ভেতরে কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড স্থাপন করে প্রতিষ্ঠান চালু রাখতে যাচ্ছে আল মুসলিম গ্রুপ। এছাড়া আশুলিয়ার কর্মজীবী হোস্টেলে হাসপাতাল চালুর জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, আশুলিয়ার কর্মজীবী নারী হোস্টেলটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের আইসোলেশন সেন্টার বানানোর জন্য মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া সাভার-আশুলিয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্র প্রস্তুতের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি সাভার মামুন কমিউনিটি সেন্টারে প্রস্তুত করা হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ড।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ-১ এর পরিচালক সানা শামিমুর রহমান জানান, সাভার-আশুলিয়া ও ধামরাই মিলিয়ে ১ হাজার ৩০টি কারখানা চালু রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৭ লাখ শ্রমিক কর্মরত। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ মূলত কারখানাগুলোর নিরাপত্তা, যে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় তা নিয়ে কাজ করে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যাতে সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে কারখানাগুলো পরিচালিত হয় সেদিকে তারা নজর রাখছে বলেও জানান এই পুলিশ সুপার।
সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের করোনাবিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. নাজমুল হুদা মিঠুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে সুনির্দিষ্টভাবে কতজন পোশাক শ্রমিক আক্রান্ত তিনি তা জানাতে পারেননি। তিনি বলেন, তারা পৃথকভাবে হিসাব করেন না, মোট আক্রান্ত হিসাব করেন। সাভার পৌর এলাকার উলাইল মহল্লায় আল মুসলিম গ্রুপের কারখানার ভেতরে কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, কারখানা কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এসব করছে। বিষয়টি তারা অবগত এবং প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। কারখানা চালু রেখে এর ভেতরে করোনা চিকিৎসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কারখানাটি অনেক বড়। এর এক প্রান্তে (নামা গেণ্ডা এলাকায়) ১২০ বেডের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড করা হচ্ছে। অবশ্য আক্রান্ত তালিকায় পোশাক শ্রমিক কারা তা সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে বলে জানা গেলেও তিনি তা এড়িয়ে গেছেন।
আল মুসলিম গ্রুপের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল্লাহ জানান, শ্রমিকদের কথা বিবেচনায় রেখে তাদের ওখানে শুধু প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আইসোলেশনের ব্যবস্থা করছে বিজিএমইএ। আল মুসলিম গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) ইমতিয়াজ আহমেদ মতিন জানান, এ পর্যন্ত কারখানার নয়জন শ্রমিক আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন বাসায় আইসোলেশনে এবং সাতজন ঢাকায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বলেন, কোয়ারেন্টাইনের জন্য চিকিৎসক, নার্স ও স্বেচ্ছাসেবী টিম করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে এ ব্যাপারে পরামর্শ নেয়া হচ্ছে। দুই-তিন দিনের মধ্যে দুই ধাপে ১২০ বেডের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড চালু হবে। তিনি বলেন, ওই প্রতিষ্ঠানে ৪ শিফটে কাজ চলছে। ফ্লোর থেকে অনেক মেশিন সরিয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও প্রশ্ন উঠেছে, তাদের মাত্র ৯ জন শ্রমিক আক্রান্ত হলে তারা কেন একসঙ্গে ১২০ জনের কোয়ারেন্টাইন ওয়ার্ড চালু করতে যাচ্ছেন?
ডিপিআর/ জাহিরুল মিলন