বিদুষ রায়, গাইবান্ধা প্রতিনিধি ঃ
সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে মানুষ যখন আতঙ্কিত হয়ে ঘরে বন্দি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতা জারি ও লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। ঠিক তখনই মানুষের দুয়ারে পবিত্র রমজান এসে হাজির। আর রমজানের শুরুতেই পাইকারী ও খুচরা বাজারে বেড়ে গেছে সব রকম নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার। পেঁয়াজের অস্থিরতা কমতে না কমতেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আদাসহ মসলাজাতীয় পণ্যের দাম। গত সপ্তাহের তুলনায় নিত্যপণ্যের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেড়ে গেছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আদার দাম।
এই মাসে সাধারণত প্রতি বছরই বেশ কয়েকটি পণ্য চড়া দামে বিক্রি হয়। বিশেষ করে পেঁয়াজ, বেগুন, ছোলা, ভোজ্যতেল, ডাল, খেজুর, চিনি ও আদাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। করোনা ভাইরাস এর কারণে পুরো দেশে পন্যের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। রমজান মাসে দেশীয় বাজারে এর প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
২৫ ও ২৬ এপ্রিল রোজ শনিবার ও রবিবার গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার সরেজমিন বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব নিত্যপণ্যের দাম পাইকারি বাজারের চেয়ে ১০ থেকে ৪০ টাকা বেশি রাখা হচ্ছে। গত সপ্তাহের বাজারে দাম ছিল আদা ১৮০ বর্তমানে ৩২০ টাকা, রসুন ১০০ বর্তমানে ১২০ টাকা, পেঁয়াজ ৪৫ বর্তমানে ৫৫ টাকা, আলু ২৫ বর্তমানে ৩৫ টাকা, কাঁচা মরিচ ৩৫ বর্তমানে ৪০ টাকা, মসুর ডাল ১০০ বর্তমানে ১২০ টাকা, সয়াবিন তেল ৯৫ বর্তমানে ১২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে সবজির দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকলেও বেড়েছে চালের দাম। গত সপ্তাহে চালের দামের চেয়ে বর্তমানে প্রতিবস্তায় বাড়ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
পলাশবাড়ী বাজারে আসা আব্দুল মান্নান বলেন, আর কতদিন বেশি দরে মসলা কিনতে হবে? চালের দামও বেড়েই চলছে। সরকার কি আমাদের জন্য কিছুই করবে না? পেঁয়াজ, আদার পাশাপাশি অন্যান্য মসলা জাতীয় পণ্যই বাড়তি দরেই কিনতে হচ্ছে। এই মুহূর্তে প্রশাসন যদি বাজার মনিটরিং না করেন, তারা যদি ভালোভাবে তদারকি না করেন, তাহলে দাম আরো বেড়ে যাবে। ফলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কষ্টের সীমা থাকবে না।
বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা সপ্না বেগম বলেন, বাজারের প্রত্যেকটি পণ্যের দামে আগুন। সব নিত্যপণ্য বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এক দিকে করোনা ভাইরাসের চিন্তায় মরছি, অন্যদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আস্তে আস্তে বেড়ে চলছে। জিনিসপত্রের দাম এই রকম থাকলে আমাদের না খেয়ে রোজা রাখতে হবে। আর না খেয়ে মরতে হবে।
আরেকজন ক্রেতা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন অস্থির। কোনো অজুহাত পেলেই আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহন না করলে এই সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠবে। যেমন, এর আগেও লবণ ও পেঁয়াজ দেশে পর্যাপ্ত ছিল তারপরও গুজব ছড়িয়ে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করেছিল। প্রশাসনের হস্তক্ষেপেই তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের দাবি, সারাদেশে করোনা ভাইরাস দেখা দেয়ার কারণে বিভিন্ন জায়গায় সতর্কতা জারি ও লকডাউন ঘোষণা করায় চলাচলের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকায় পাইকারি বাজারে যাওয়া আসার সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তারপরও বেশি ভাড়া দিয়ে মালামাল নিয়ে এসে দাম বৃদ্ধি করতে হচ্ছে। তারা আরও বলেন, অনেক পন্যবাহি যানবাহন বন্ধ থাকায় পেঁয়াজ, রসুন ও আদা সহ পণ্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে। ফলে দাম বাড়ছে। আমাদের কিছুই করার নাই। তবে ব্যবসায়ীদের নিকট পণ্য ক্রয়ের চালান দেখতে চাইলে তারা দেখাতে রাজি হয়নি।
ক্রেতা সাধারণ ও সচেতনমহল বলছেন, দাম বৃদ্ধির পিছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি রয়েছে। তারা দ্রুত বাজার মনিটরিং জোরদার করার জন্য প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।