প্রত্যয় ঢাকা ডেস্ক :
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি ফেসমাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নতুন করে কোভিড-১৯ সংক্রমণের তীব্রতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করব- মাস্ক ছাড়া কেউ যাতে বাইরে না যায়, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে এবং প্রত্যেকটি সভা বা সিম্পোজিয়াম, সেমিনার বা প্রশিক্ষণ কর্মশালা সামাজিক দূরত্ব মেনে করতে হবে। যতদূর সম্ভব খোলা জায়গায় কর্মসূচি করতে হবে। ঘরের মধ্যে করলে করোনার প্রাদুর্ভাব আরও বেশি দেখা দেয়। এ সময় ভ্যাকসিন প্রদানও চলবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
রোববার দুপুরে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে দেশে একটি মানুষও আর গৃহহীন থাকবে না তার সরকার সবাইকে ঘর করে দেবে। তিনি বলেন, আমরা প্রায় ৯৯ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি যেগুলো বাকি আছে সেগুলোও করে দেব, শতভাগ মানুষের কাছে বিদ্যুৎ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে শতভাগ গৃহকে আমরা আলোকিত করব।
আরও পড়ুন : কঠোর হুশিয়ারি সরকারের
তিনি স্কুল-কলেজ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা স্কুল কলেজগুলো খুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু এখন হঠাৎ করে করোনার প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়াতে আমরা এখন নয়, রোজার ঈদের পরে স্কুল-কলেজ-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেব। আর এই ফাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেসবের মেরামত লাগবে সেসব কাজ সরকার করে দেবে। পাশাপাশি দেশের উন্নয়নের কাজগুলো চলতে থাকবে, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে সে প্রচেষ্টা আমরা অব্যাহত রাখব।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বাড়ছে। সব অনুষ্ঠান সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে। পাশাপাশি গত বছর মানুষের পাশে যেমন দাঁড়িয়েছেন, তেমনি সামনেও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মানুষ যেন কষ্টে না থাকে। সরকারের পক্ষ থেকে আমরা যা করার করব। কিন্তু দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেও মানুষের পাশে থাকতে হবে। যে দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছে, তাদের ওপর অনেক দায়িত্ব। মানুষের জন্য খাদ্য বিতরণ, মাস্কসহ স্বাস্থ্যসুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ ও নানা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সভায় প্রারম্ভিক বক্তব্য দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অধ্যাপক মেরিনা জামান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কোচি ও হুমায়ুন কবির বক্তব্য দেন।
আরও পড়ুন : হেফাজতের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ৫২’র ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের শহীদসহ সব গণআন্দোলনে আত্মাহুতিদানকারীদের স্মরণে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।
লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, তার সরকার স্বাধীনতার সুফল বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রার্দুভাব আবার দেখা গেছে এবং এই ভাইরাসটাও আবার ভিন্ন ভিন্নভাবে এসেছে। তাই আমাদের ঠিক আগের মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রার্দুভাব কতদিন থাকবে আমরা এখনো জানি না। তার জন্য আমাদের প্রস্তুতিটা থাকতে হবে।
আবারও করোনাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বলব- যখন করোনাভাইরাস প্রচণ্ড মহামারি আকার ধারণ করল সে সময় যেভাবে মানুষের পাশে আপনারা দাঁড়িয়েছিলেন আবারও করোনার একটা ধাক্কা আসছে, আমরা দেখতে পাচ্ছি। আপনাদেরও সেভাবে আবার দাঁড়াতে হবে।
তিনি বলেন, এখন আমাদের সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। করোনাভাইরাসে যেন মানুষের কষ্ট না হয়, একটা রাজনৈতিক দল হিসেবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের কর্তব্য। আপনাদের এখন থেকে প্রস্তুতি নিয়ে আবার মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে।
আরও পড়ুন : চার মাসে যুক্তরাজ্যফেরত ৪২৫১ জন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ১২ বছরে বাংলাদেশের আমূল পরিবর্তন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে দেশ পরিচালনা করেছি। এতসব অর্জনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শই কারণ। এটা নতুন কিছু নয়, কোনো ম্যাজিকও নয়। এদেশের মানুষ জাতির পিতার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। ৭ মার্চের ভাষণে যা যা করতে বলেছেন, মানুষ তাই করেছে। তিনিই বলেছিলেন, বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আসলেও দাবায়ে রাখা যায়নি, যাচ্ছে না। আমরা তার আদর্শে দেশ পরিচালনা করে এগিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু তার সংবিধানে যে মৌলিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন আমরা সে আলোকেই পথ চলছি। তার সব কাজ পূর্ণ করছি। তিনি বলেন, গৃহহীন ও ভূমিহীন কেউ যেন বাদ না যায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। কেউ বাদ গেলে জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অনেক দূর যেতে হবে। উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এটাই জাতির পিতার স্বপ্ন। তার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ব- এটাই প্রতিজ্ঞা।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে পাঁচ দেশের প্রধান এসেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও ২৭টি প্রতিষ্ঠান থেকে শুভেচ্ছাবার্তা আমরা পেয়েছি। এটা বাংলাদেশের জনগণের জন্য অত্যন্ত সম্মানের। এটাই আমাদের সার্থকতা।
তিনি বলেন, সময়ের অভাবে সব বার্তা শোনাতে পারিনি। সব বার্তা রক্ষিত আছে। এগুলো তৃণমূল পর্যন্ত প্রচার করতে হবে। তাদের শুভেচ্ছাবার্তা যেন জনসাধারণ জানতে পারে। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনকে এগুলো প্রচারে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, সবুজ বাংলা আরও সবুজ করতে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। কোনো জলাশয় যেন অনাবাদি না থাকে। খাদ্য উৎপাদন করে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে। করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় বলা যায় না, যাতে অন্তত খাদ্য সংকট না হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা নিজের খাদ্যের জোগান নিজেই নিশ্চিত করে অন্যকেও দেব।
আরও পড়ুন : মেডিকেল ভর্তি : প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়ালে ডিজিটাল আইনে মামলা