প্রত্যয় ডেস্ক, চৌধুরী হারুনুর রশীদ, রাঙামাটিঃ রাঙামাটির জেলার তিনটি উপজেলার ছাত্রাবাসের সরকারি অর্থ নয়-ছয় করার ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। এসব বিদ্যালয় গুলোতে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রকট হওয়ায় বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। ফলে বিপর্যস্ত ও ভঙ্গুর শিক্ষা ব্যবস্থা অব্যাহত থেকে নানা অনিয়ম নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার হওয়ায় স্থানীয় সচেতন মহলে বিরাজ করছে চরম অসন্তোষ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে ছাত্রবাসের জন্য বিল ভাউচার দেখিয়ে প্রায় ৯ (নয়)লক্ষ উত্তোলন করা হয়েছে। করোনা মহামারীতে উক্ত টাকা যথাযথ ব্যয় করা হয়নি। পাশাপাশি ৭০ জন শিক্ষার্থীর অধিকাংশের কাছ থেকে মাসিক ৭২০টাকা করে বছরে ৯ হাজার ২শত(নয় হাজার দুইশত )টাকা করে আদায় করা হয়েছে ।
বাঘাইছড়ি তুলারাম উচ্চ বিদ্যালয়, নানিয়াচর বেতছড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও কাউখালী বেতবুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে এসব টাকা বরাদ্ধ করেছে । করোনা মহামারীতে হোষ্টেলে ছাত্ররা মার্চ এর দুই সপ্তাহ পর্যন্ত ছিল কিন্ত শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বছরে ৯ হাজার দুইশত টাকা করে আদায় করা হয়েছে । এই তিনটি বিদ্যালয়ে ৯(নয়) লক্ষ টাকা করে ২৭ লক্ষ টাকা স্ব-স্ব বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকের স্বাক্ষরে উক্তোলন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
বাঘাইছড়ি তুলারাম আবাসিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জ্ঞান রঞ্জন চাকমার সাথে যোগাযোগ করা হলে মুঠোফোনে বলেন, আমরা জানুয়ারী ,ফেব্রয়ারী, মার্চের ২৪ তারিখ পর্যন্ত খায় খরচ । বাবুর্চি ও পরিচালকের বেতন এক বছর দিতে হবে । এরপর ৪০ হাজার টাকা থাকবে সেইটাকা দিয়ে আগামী নভেম্বর ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে।জানা গেছে, লেখাপড়ার কোন উন্নতি না থাকায় অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের অন্য স্থানে নিয়ে গিয়ে লেখাপড়া করাচ্ছেন। এইসব বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম আশ্রয় নেওয়ার স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
অভিযোগ সুত্রে জানাগেছে, বিদ্যালয়গুলোতে নানা অনিয়ম অনেক ্আগে থেকেই দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে এখন চরমে পৌছায় স্থানীয় শিক্ষিত সচেতন মহল বেশ উদ্বিগ্ন। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে বছরের প্রথমে বিবিধ ফিসহ পরে টিউশন ফি, পরীক্ষার ফি এসব উত্তোলনের পর প্রধান শিক্ষক আংশিক বিদ্যালয় ফান্ডে জমা করে অবশিষ্ট নিজ হাতে রেখে দেন।তাছাড়াও শিক্ষা বোর্ডের সনদ,একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসা পত্রসহ এসবের প্রতিটির বিপরীতে তিনশত টাকা হারে আদায় করলেও সমুদয় টাকা বিদ্যালয় তহবিলে জমা না দিয়ে প্রধান শিক্ষক নিজের কাছে গচ্ছিত রেখে ভোগ করেন।
অপরদিকে অষ্টম ও নবম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশনে তিনশত টাকার অধিক হারে প্রতি শিক্ষার্থী থেকে আদায় করেন। যা শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি ও অন্যান্য স্কুলের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু বাড়তি টাকা আদায়ের পর বিদ্যালয় ফান্ডে জমা না হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতায় আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী খাওয়া-দাওয়ার বিলেও চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, চলতি বছরের মার্চ মাসের কয়েক সপ্তাহ পর আবাসিক ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে ছিল না। পরে করোনা মহামারী কালীন দুর্যোগে সকলে বাড়ি চলে যায়। তা সত্ত্বেও বিগত জুন মাসে জানুয়ারী মাস থেকে ছাত্রাবাসে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখিয়ে রাঙামাটি জেলা পরিষদ থেকে ভুয়া বিল করে সরকারি অর্থ উত্তোলনের ব্যবস্থা করেন প্রধান শিক্ষকগণ।
সরকার বিভিন্ন খাতে বিদ্যালয়টিতে বরাদ্দ দিলেও উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিসের মাধ্যমে বিল পাশ করে প্রধান শিক্ষক কাজ বাস্তবায়ন না করে বিলের উত্তোালিত অর্থ নিজ হাতে রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ফলে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী বিল ভাউচার ও স্টক রেজিস্টারের সাথে বাস্তবে সাদৃশ্য না থাকায় প্রধান শিক্ষকের কার্যক্রম সম্পূর্ণ রহস্যজনক। এই তিনটি বিদ্যালয়ে বিরাজমান নানা অনিয়ম অবিলম্বে রোধ করে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষা বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয় সচেতন মহল কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।
পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান হিসাব নিরিক্ষা কর্মকর্তা মো.খুরশেদ আলম চৌধুরী প্রতিবেদককে জানান, জুলাই ২০১৯ ইং হতে জুন ২০২০ পর্যন্ত তিনটি ছাত্রাবাসের জন্য ২৭ লক্ষ টাকা উক্তোলন করেছে স্ব স্ব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নামে। কোড নং০৮৫৭৯৮৩০০৩ খায় খরচ নামে শিক্ষাখাত প্রকল্প জেলা পরিষদ প্রদান করা হয় । প্রধান শিক্ষকের নামে উক্তোলন করা হলেও যদি ব্যয় করা না হয় তাহলে অবশ্যই ফেরৎ দেয়া যাবে ।