নিজস্ব প্রতিবেদক: মহামারি করোনা ভাইরাসে অর্থনীতির ক্রমহ্রাসমান সংকোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখার ওপর জোর দিয়ে বিএনপি বলছে, বাজেটে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য আয় সংকোচন রোধ করার পরামর্শ দলটির। সেই সঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নের প্রস্তাব দিয়েছে তারা।
মঙ্গলবার দুপুরে উত্তরার নিজ বাসা থেকে ‘বাজেট ভাবনা : অর্থবছর ২০২০-২১’ শীর্ষক ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির মহাসচিব বলেন, তাদের দল মনে করে তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোও থাকতে হবে। মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সঙ্কটে মানুষের সার্বজনীন মৌলিক প্রয়োজন খাদ্য, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, বাসস্থান ইত্যাদি প্রদানে সরকারের ব্যর্থতা স্পষ্ট হয়েছে। পুনরুদ্ধার প্যাকেজ ও মুদ্রানীতি সহজ করাসহ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। ‘সামাজিক নিরাপত্তা জাল’ নামে কিছু কর্মসূচি থাকলেও তা নিতান্তই অপ্রতুল। তা ছাড়া ওপরে উল্লিখিত কর্মসূচিটিও দুর্নীতিগ্রস্ত।
জনসেবা খাতে বরাদ্দ দিন দিন কমেছে উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতের দুর্বলতাও করোনাকালে উন্মোচিত হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘করোনার প্রভাবে ভোগ, চাহিদা, সরকারি ব্যয়, আমদানি-রফতানির সূচক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়েছে। এর ফলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে যেতে বাধ্য। কর্মহীন মানুষের আয় না থাকায় কেনাকাটা কমে গেছে। সঞ্চয় হ্রাস পাচ্ছে, ফলে বিনিয়োগও কমে যাবে। করোনার কারণে মার্চ মাসে প্রবাসী আয় ১২ শতাংশ কমেছে। দেশের ভেতরে ও বাইরে এভাবে আয় কমে যাওয়ায় ভোগ-ব্যয়ও অনেক কমে যাবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে এর প্রভাব প্রকটভাবে দেখা দেবে।’
অর্থনীতির সাবেক এই অধ্যাপক বলেন, আমাদের দেশে ব্যক্তি খাতের ভোগ-ব্যয় জিডিপির ৭০ শতাংশ। এদিকে, ৬ মাসে রফতানি আয় কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। গণপরিবহন সঙ্কটে কৃষকও পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না। ফলে পরবর্তী মৌসুমে এরা উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বিভিন্ন খুদে ব্যবসা, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প, পর্যটন ও সেবা খাতসহ সব প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কার্যক্রম অচল।
বিএনপি নেতা বলেন, অনেকে মনে করেন, করোনার ভয়াবহতা না কমলে নতুন বাজেট করে কোনো লাভ নেই। লক্ষ্য হওয়া উচিত আগামী ছয় মাসের জন্য একটি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট করা। কারণ করোনার কারণে পূর্ণাঙ্গ বাজেটের কোনো লক্ষ্যই অর্জিত হবে না। আবার অনেকে মনে করেন, অর্থনীতির অস্বাভাবিক সংকোচনে প্রচলিত বাজেট ব্যবস্থা থেকে সরে এসে তিন বছরের মধ্যমেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করাই ভালো হবে।