আবু সায়েম মোহাম্মদ সা’-আদাত উল করীম:
কারো কাছে তিনি কলকাতার দ্বিতীয় মাদার তেরেসা, কারো কাছে তিনি সাক্ষাৎ দেবী, কারো কাছে তিনি ফেরেশতা। তিনি কলকাতার বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী সমাজ সেবি “প্রিয়া ইসলাম ফাতিহা”।
তার জীবন সংগ্রাম নতুন প্রজন্মের জন্য একটি আদর্শ। তিনি কলকাতার হাজারো তরুণ-তরুণী অনুপ্রেরণা। প্রিয়ার সম্পর্কে এমনি সুন্দর সাবলীল ভাবে কথা গুলি ব্যক্ত করেন রাত্রি মুর্খাজি তিনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রিয়ার সম্পর্কে রাত্রির লেখনী নেটিজেনদের মাঝে হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সকল বয়সী হাজার হাজার মানুষের সুন্দর মন্তব্যে ভালোবাসা সিক্ত হতে থাকেন প্রিয়া।
শৈশবে প্রিয়ার বাবা ‘লিককিমিয়া’ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবাকে চিকিৎসা করানোর মতো অর্থ বা সামর্থ্য তাদের ছিলোনা। বাবাই ছিলো তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাই বাবার মৃত্যুর পর তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরাতো। যদিও নানার বাড়ির দিকে বেশ ধনাঢ্য ছিলো কিন্তু আত্মসম্মানের ভয়ে উনার মা নানার বাড়ির কোনো সাহায্য নেননি। একটি সেলাই মেশিন দিয়ে তার মা জীবিকার তাগিদ মেটাতেন। কিন্তু এক বেলা খেলে অন্য বেলে খেতে পারতেন না।
পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে তাদের সংসার মা ছোট ভাই এবং তিনি। সংসারের দুরাবস্থা দেখে পাঁচ বছর বয়সে তিনি একটি ছোটখাটো রেস্তরাঁয় প্লেট পরিষ্কারের কাজ শুরু করেন, দিন প্রতি পনেরো টাকা মাইনেতে, পাশাপাশি পড়াশোনাও করেন। এভাবেই দিন কাটাতে লাগলেন।
মাধ্যমিক পার করে বাড়ি গিয়ে-গিয়ে টিউশনি শুরু করেন সাথে একটি এনজিওতে চাকুরি পান। একদিন কোনো এক ছাত্রের বাড়ি পড়াতে গিয়ে এক শাড়ির কারখানার সন্ধান পান। কর্তার কাছ থেকে শাড়ি পাইকারি দরে কিনে কালিঘাট সহ বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে ৩০ টাকা লাভে শাড়ি সরবরাহ করতে শুরু করেন। প্রথম দিন ১০০ পিছ শাড়ি ৩০ টাকা লাভে সেল করে ৩ হাজার টাকা উপার্জন করেন। সেই থেকেই শুরু হয় ব্যবসা জীবনের পথ চলা। এদিকে কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে ব্যবসার উপর তিনি ডি.বি.এ. ডক্টরেট করেন।
সময়ের সাথে সাথে সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে বর্তমানে কলকাতার দশজন টপ রেংকিং ব্যবসায়ীদের মধ্যে তিনি তৃতীয়। দেশ বিদেশে বিস্তার করে আছে তার ব্যবসা। তিনি ‘ফোমান গ্রুপ অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড’ কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতা। প্রিয়ার ছোট ভাই অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ইউনিভার্সিটির হিস্ট্রি লেকচারার।
প্রিয়া ইসলাম ফাতিহার সম্পত্তির পরিমাণ এতো যে প্রতি বছর ১৮০ কোটি রুপি সরকারি ট্যাক্স দিতে হয়। অনেকই বলেন তিনি যে মাঁটিতে পা রাখেন সেই মাঁটিই নাকি সোনাতে রূপ নেয়। প্রতি বছর ৭ শতো থেকে ১ হাজার কোটি ইন্ডিয়ান রুপি উপার্জন করেন। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক তিনি। সাধারণ মানুষ রাজনৈতিক নেতাদের মহাশয় মহাশয় করে আর রাজনৈতিক নেতারা উনাকে মহাশয় মহাশয় করে। উনি দলীয় ও বিরোধীদলীয় সবার অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কন্ঠস্বর জাগ্রত রাখেন। দেশ থেকে বিদেশি মিনিস্ট্রি অব্দি তার প্রভাব।
এখন প্রশ্ন হতে পারে এতো ক্ষমতা এবং অর্থ দিয়ে তিনি কি করেন?
প্রিয়া ইসলাম ফাতিহা পাঁচটি আশ্রম পরিচালনা করেন, তিনটি বৃদ্ধা আশ্রম দুটি শিশু আশ্রম। বিভিন্ন জায়গায় তার দশটি স্কুল আছে। যেখানে সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা বিনা মূল্যে পড়াশোনা করে। শিলিগুড়িতে তার বাবার নামে একটি হাসপাতাল আছে, যেখানে বিনা মূল্যে গরিব দরিদ্র মানুষের চিকিৎসা দেন। মাসজিদ থেকে মন্দির সব উন্নয়ন মূলক কাজে উনার অগ্রসর সবার আগে। এইবার আম্ফানে রাজ্যের মন্ত্রণালয়ে ১০০ কোটি অর্থ অনুদান করেন। শত শত দরিদ্র অসহায় মানুষের মাথার ছাদ তিনি। রাত্রি মূর্খাজি আরও বলেন হাজারো তরুণ তরুনীর কর্মসংস্থান করে দিয়েছেন। সে নিজেও তার প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বিভিন্ন গনমাধ্যাম চাইলেও তিনি গনমাধ্যমে আসতে চাননা। নিজের মতো করে অসহায় মানুষদের মাঝে মানবতার হাত বাড়িয়ে দেন।
রাত্রি মুর্খাজির মতো অনেকেই মাদার তেরেসাকে সরাসরি দেখেনি । তারা দ্বিতীয় মাদার তেরেসাকে দেখেছেন। অর্থাৎ প্রিয়ার মাঝেই এই মাদার তেরেসাকে খুঁজে পান। প্রকৃত পক্ষে এক সফল ব্যবসায়ীর পাশাপাশি মানুষের প্রতি মানবিকতা তাকে এক অনন্য উচ্চতায় আশীন করেছে। প্রিয়া সকলের কাছে প্রিয় হয়েছেন মানুষের প্রতি তার অসাধারণ ভালোবাসা প্রকাশ ও তার কল্যাণ মূলক সহযোগিতার মাধ্যমে।