বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:
গত বুধবারই আমফানের তাণ্ডবে ছন্নছাড়া হয়ে গিয়েছে কলকাতা। এক সপ্তাহ কেটে গেলেও এখনও পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারেনি জীবনানন্দের তিলোত্তমা। এরই মধ্যে ঠিক সাতদিন পর আবার বুধবারেই ফের ঝড়ের তাণ্ডব দেখল শহর। তবে এবার কোনও ঘূর্ণিঝড় নয়। এবার শুধুই কালবৈশাখী।
বুধবার ভারতীয় সময় সাড়ে ছটা নাগাদ সেই ঝড় বয়ে যায় কলকাতার ওপর দিয়ে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার। অর্থাৎ, আয়লার চেয়েও বেশি। কলকাতায় যখন ১১ বছর আগে আয়লা বয়ে গিয়েছিল, তখন তার বেগ ছিল ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার। স্বভাবতই শহরবাসী বিস্মিত। অনেকের মনেই প্রশ্ন, কালবৈশাখীর গতিবেগ এত হয় কী করে?
ঘূর্ণিঝড়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এই ঝড় দেখে প্রথমে হতচকিত হয়ে যান শহরবাসী। যদিও ঝড়–বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আবহাওয়া দফতরের। কলকাতা–সহ দক্ষিণবাংলায় কালবৈশাখী আসা এবং ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা আগে থেকেই তারা জানিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু কলকাতা শহরেই ঝড়ের দাপট যে প্রায় ১০০ কিলোমিটারের কাছাকাছি হবে, তেমনটা মহানগরীর কেউই ভেবে উঠতে পারেননি।
এদিন শুধু কলকাতা নয়, হাওড়া, হুগলি, দুই ২৪ পরগনা–সহ দক্ষিণবঙ্গের অধিকাংশ জেলাতেই কালবৈশাখী ঝড় এবং ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে। দুর্গাপুরে বজ্রাঘাতে একজন প্রাণ হারিয়েছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে থেকে থেকেই কলকাতা শহর জুড়ে বয়ে যাচ্ছিল পাগলা ঝোড়ো হাওয়া। মে মাসের শেষ দিকে যখন প্রবল গরমে সকলের অবস্থা সঙ্গীন হয়ে উঠছিল, তখন এই হাওয়া শহরবাসীকে কিছুটা স্বস্তিও দিয়েছে।
বুধবারের ঝড়ে এরই মধ্যে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় আবার গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর এসেছে। শরৎ বসু রোড, বি কে পাল অ্যাভিনিউ, তেলেঙ্গাবাগান, গোয়াবাগান, বেলেঘাটা, টালিগঞ্জ, সাদার্ন অ্যাভিনিউ, যাদবপুর, দেশপ্রিয় পার্ক–সহ বেশ কিছু রাস্তায় গাছ ভেঙে পড়ার খবর এসেছে। ঝড়ে গোয়াবাগানে একটি পুরনো বাড়ি ভেঙে পড়েছে বলে খবর। তেলেঙ্গাবাগানে একটু পুরনো বাড়ির ওপর গাছ পড়ে গেলে বাড়িটির ছাদ ভেঙে পড়ে।
ঝড়ে অনেক জায়গায় গাছ ভেঙে পড়ায় সন্ধে থেকেই অনেক রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং সেনাবাহিনী এখন আমফান–বিধ্বস্ত কলকাতার রাস্তা থেকে গাছপালা সরানোর কাজে ব্যস্ত রয়েছে। তাই এদিন গাছপালা ভেঙে পড়ায় রাস্তা আটকে গেলেও তা সাময়িকই হবে বলে অনেকের অনুমান। রাতের খবর, অনেক রাস্তা থেকে ভেঙে পড়া গাছ দ্রুত সরিয়ে ফেলা হয়েছে।
তবে বিদ্যুৎ নিয়ে একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমফানের দাপটে কলকাতা–সহ দক্ষিণবাংলার অধিকাংশ জায়গাই নিষ্প্রদীপ হয়ে যায়। এখনও সব জায়গা স্বাভাবিক হয়নি। এরই মধ্যে এই ঝড়ে নতুন করে অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। স্বভাবতই কাজ বেড়েছে সিইএসসি কর্মীদের।
এদিকে, রাজ্যের উপকূল এলাকায় ফের ঝড়–বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। সুন্দরবন অঞ্চলে ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনাতেও ভারী ঝড়–বৃষ্টি হতে পারে। আগামী শুক্রবারও কলকাতায় ব্যাপক ঝড়–বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।