বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:গালোয়ান–সঙ্ঘর্ষ নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে তীব্র ক্ষোভ জানালেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পরিষ্কার দাবি করলেন, ভারতের বাণিজ্যিক বাজার থেকে পুরোপুরি সরিয়ে দেওয়া হোক চিনকে। বললেন, ‘টেলিকম, রেল, বিমান পরিষেবাতে চিনকে ঢুকতে দেওয়া যাবে না।’ পাশাপাশি এ কথাও জানিয়ে দিলেন, ‘এই সময়ে আমরা সরকারের পাশেই আছি। থাকবও। আমার অনুরোধ, সরকার আমাদের সঙ্গে নিয়ে ভাবুন। আমাদের সকলকে নিয়ে কাজ করুন।’ মুখ্যমন্ত্রীর কথায় খুশি হন প্রধানমন্ত্রীও। পরে প্রধানমন্ত্রী জানান, যারা ভারতকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে, ভারতের সেনা তাদের উচিত শিক্ষা দিয়েছে। প্রয়োজনে আরও দেবে। ভারতের ক্ষতি করার চেষ্টা করলে সেনারাই তার বদলা নেবে।
গালোয়ানের সঙ্ঘর্ষ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ডাকা সর্বদল বৈঠকটি হয় শুক্রবার বিকেলে। বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে গিয়েছিল নবান্নে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে হওয়া ওই বৈঠকে দেশের অন্য দলগুলির পাশাপাশি যোগ দেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে তিনি চিনের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন। বলেন, ‘চিন গণতন্ত্র জানে না। ওই দেশে স্বৈরতন্ত্র কায়েম রয়েছে। ফলে ওই দেশের সরকার তাদের জনগণের মতামতের কোনও গুরুত্ব দেয় না। তারা সবসময় আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে চলে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়েই চলতে হবে। দেশের বিরুদ্ধে যাওয়া কারও উচিত নয়। আমরা সবাই একসঙ্গে লড়াই করব। ভারত জিতবেই। দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আমরা সবসময় কেন্দ্রীয় সরকারের পাশে আছি। থাকবও।’
লাদাখে চিনা সেনার গতিবিধি কতখানি ছিল এবং ভারত সরকার বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ করতে দেরি করেছিল কিনা, তা নিয়ে বৈঠকে বিরোধী দলগুলি প্রশ্ন তোলে। বিষয়টি নিয়ে সরব হন মুখ্যমন্ত্রীও। তবে এই মুহূর্তে তিনি পুরোপুরি সরকারের পাশে রয়েছেন বলে জানিয়ে দেন। শুধু তাই নয়, এ কথাও তিনি দাবি করেন, ‘ভারতের বাণিজ্যে চিনের অনুপ্রবেশ বন্ধ করতেই হবে। বিশেষ করে টেলিকম, রেল এবং উড়ান পরিষেবায় চিনকে কোনও ভাবেই ঢুকতে দেওয়া যাবে না। চিনের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য বন্ধ হলে, প্রথম দিকে কিছুটা অসুবিধে হতে পারে সকলের। তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। চিনের ওপর আমরা পুরোপুরি নির্ভরশীল নই।’ পাশাপাশি তিনি ওই বৈঠকে চিনের তৈরি দ্রব্য বয়কটেরও ডাক দেন। বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ হলে আমাদের যত না ক্ষতি হবে, তার চেয়ে বহুগুণ বেশি ক্ষতি হবে চিনের।’ উল্লেখ্য, বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যও প্রায় একই। ১৩৫ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতের বাজার পৃথিবীর যে কোনও দেশের কাছেই লোভনীয়। চিনও এই বাজারে অনেকখানি জায়গা জুড়ে রয়েছে। গোটা ইউরোপ বা আমেরিকায়ও এত টাকার বাণিজ্য–লাভ হয় না তাদের। তাই এই বাজার হারালে চিনের অর্থনীতিতে তার মারাত্মক প্রভাব পড়বেই।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রতিটি দলকেই স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ভারতের সীমান্তে কোনও দেশই ঢুকে নেই। ভারতের কোনও সেনা চৌকিও কেউ দখল করে রাখতে পারেনি। পাশাপাশি তিনি এ কথাও বলেন, ‘প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় চিন যা করেছে, তাতে ভারতের প্রতিটি মানুষ ক্ষুব্ধ। আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করে বলছি, ভারতের জনগণকে রক্ষা করতে কোনও রকম আপস করবে না আমাদের সেনাবাহিনী। কেউ জোর করে আমাদের কাছ থেকে এক ইঞ্চি জমিও কেড়ে নিতে পারবে না।’