সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুল কাদের মির্জা বলেছেন, তিনি কোনো ‘বাটপার’ নেতার পেছনে রাজনীতি করবেন না। তিনি রাজনীতি করবেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের। শেখ হাসিনার উন্নয়নের। আজ বুধবার কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট জিরোপয়েন্টের বঙ্গবন্ধু চত্বরে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেওয়ার পর উপস্থিত অনুসারীদের উদ্দেশ্যে এসব কথা বলেন। তবে তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী ওই ‘বাটপার’ নেতা কে, তা তিনি উল্লেখ করেননি।
কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার নেত্রী আমাকে বলেছেন, তুমি শান্ত থাক। বিচার আল্লাহর কাছে দিব। আর সমস্ত কাগজপত্র প্রস্তুত করে রেখেছি। সেগুলো আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিব। আমি কোনো বাটপার নেতার পেছনে রাজনীতি করব না। আমি রাজনীতি করি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে। আমি রাজনীতি করি শেখ হাসিনার উন্নয়নের।’
বসুরহাটের স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ১০টায় বসুরহাট বঙ্গবন্ধু চত্বরে ফুল দেন বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জা। এ সময় সেখানে ১০০ থেকে ১৫০ জন কাদের মির্জার অনুসারী উপস্থিত ছিলেন। কাদের মির্জা এ সময় তাঁর অনুসারীদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, ‘আজকে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্ধ করে দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এটাও আমাদের বিরুদ্ধে, দলের বিরুদ্ধে, পৌরসভার বিরুদ্ধে একটা ষড়যন্ত্র। এটা কোনো অবস্থাতে বরদাশত করা যায় না।’
কাদের মির্জা বলেন, ‘আজকে এখানে যে চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্র চলছে, তা একতরফা। আমরা মামলা দিয়েছি, আমাদের মামলা নেয়নি। আমরা আদালতে গিয়ে মামলা করেছি। একটা লোকও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অথচ গত দুই দিনে আমাদের ১১ জন নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আমাদের একজন নেতা কাঞ্চন (মাইন উদ্দিন)। তাঁর ঘরে ডিবি ও এখানকার তদন্ত অফিসারের (পরিদর্শক–তদন্ত) নেতৃত্বে বাদল বাহিনীর দুইটা লোককে সঙ্গে নিয়ে কাঞ্চনের ঘরে ঢুকেছে। তারা ঘরে দুইটা বুলেট রেখে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে।’
আরও পড়ুন : বর্ণাঢ্য আয়োজনে দশ দিনব্যাপী ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠান শুরু
কাদের মির্জা ৯ মার্চের বসুরহাটের সহিংসতার ঘটনাকে কালরাত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমার পৌরসভায় প্রায় দুই হাজার গুলি করেছে। একটা লোককেও গ্রেপ্তার করেনি পুলিশ। আজকে ব্যবসায়ীদের বাড়িতে পুলিশ হানা দিচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যখন এই অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে, তখন পুলিশ তাঁদের ওপর হামলা করেছে। আমি কারও রক্তচক্ষুকে ভয় করি না। এখানে যত ঘটনা ঘটছে, ঢাকা থেকে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলার তদন্ত করতে দেওয়া হয়েছে। এসপি সাহেব পিবিআইকে প্রভাবিত করে মামলাগুলো ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করছেন।’
কাদের মির্জা দাবি করেন, ‘নোয়াখালীর ডিসি, এসপি এবং ডিবির যে ওসি আছে, ওসি, কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও, এসিল্যান্ড, ওসি-তদন্ত; তাদের প্রত্যাহার না করলে কোম্পানীগঞ্জে শান্তি আসবে না। আর কোম্পানীগঞ্জের যত ঘটনা আছে, এগুলো তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে। তদন্তে যদি আমিও দোষী হই, আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটে পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষের এক সপ্তাহ পরও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সাধারণ মানুষের আতঙ্ক কাটেনি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এখনো বসুরহাটের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটের সার্বিক পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। মেয়র কাদের মির্জা বঙ্গবন্ধু চত্বরে ১৭ মার্চের কর্মসূচি পালন করেছেন। শহরের বঙ্গবন্ধু চত্বর, পৌরসভার ফটক, রূপালী চত্বরসহ গুরুত্বপর্ণ স্থানে পুলিশ মোতায়েন আছে। গতকাল রাতে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুন : সারাদেশে লকডাউনসহ ১২ প্রস্তাব স্বাস্থ্য অধিদফতরের