প্রত্যয় স্পোর্টস ডেস্ক: ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’- সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে সম্ভবত এমন দোলাচলেই আছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)! দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়েই চলেছে। তাতে ঘরবন্দি হয়ে পড়া ক্রিকেটারদের ফিটনেসের বারোটা বেজে যাচ্ছে। তাদের মানসিকতাতেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে যখন ক্রিকেট খেলুড়ে অন্য দেশগুলো অনুশীলনে নেমে পড়েছে। বিষয়টা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে এক প্রকার নিরুপায় বিসিবি।
শিগগিরই মাঠে ফিরবে দেশের ক্রিকেট, এমন কোনো সম্ভাবনা দেখছে না দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এরপরও ক্রিকেট ফেরানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে তারা, শুরু হয়ে গেছে কর্মতৎপরতাও। এই দুর্যোগকালীন সময়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েই ক্রিকেটারদের শারীরিক এবং মানসিকভাবে ফিট রাখার কাজ করে যাচ্ছে বিসিবি। কোনো ক্রিকেটার যাতে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হয়, সেদিকটা মাথায় রেখে তাদের সার্বিক অবস্থা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
সম্প্রতি তামিম-মুশফিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ‘করোনা অ্যাপ’ সংযোজন করা হয়েছে। এই অ্যাপের মাধ্যমে বিসিবির নজরদারিতে থাকছেন ৭০ ক্রিকেটার। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের। দেশে করোনা পরিস্থিতির সন্তোষজনক উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই কার্যক্রম চলবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতির জন্য মার্চের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশে সব ধরনের ক্রিকেট বন্ধ আছে।
সরকারিভাবেও দেশে সব ধরনের খেলাধুলা স্থগিত রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। সেই স্থগিতাদেশ চলতি মাসের কোনো এক পর্যায়ে শিথিল করার ঘোষণা আসতে পারে, সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে এমন আভাসই দিয়েছেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। বিসিবিও তাই ক্রিকেট ফেরানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমনটাই জানিয়েছে সংস্থাটি। এর জন্য দেশের আটটি মূল আন্তর্জাতিক এবং প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের ভেন্যু তৈরি রাখা হচ্ছে।
ঢাকার শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম, নারায়ণগঞ্জের খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়াম, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম, সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম, কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম এবং রাজশাহীর শহীদ কামারুজ্জামান স্টেডিয়ামে চলছে টানা কাজ। প্রতিটি ভেন্যুতে অন্তত ১০০ জন গ্রাউন্ডসম্যান এবং কর্মী পিচ, আউটফিল্ড আর ফ্যাসিলিটিজ রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছেন। মাঠ অনুশীলন এবং ম্যাচের উপযোগী রাখতে নিয়মিত কাজের পাশাপাশি বাড়তি দায়িত্ব পালন করছেন তারা। কাজ করছেন বিদ্যুৎ আর পানি উপকেন্দ্রের কর্মীরাও।
বিসিবির কোভিড-১৯ গাইডলাইন অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি ও নিরাপত্তা অনুসরণ করছে ভেন্যুগুলো। বিসিবি কর্মী এবং শ্রমিকদের স্যানিটাইজেশন প্রটোকল মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত কর্মী পাওয়া চ্যালেঞ্জিং হলেও বিসিবি ফ্যাসিলিটিজগুলোয় যথেষ্ট পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জানিয়েছেন, মাঠে ক্রিকেট ফেরাতেই এই কর্মতৎপরতা, ‘মাঠের ক্রিকেট চালুর প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত অনুশীলন দিয়ে। এর জন্য আমাদের মাঠ আর অনুশীলন ফ্যাসিলিটিজ প্রস্তুত এবং সচল রাখতে হবে।’
তবে ঝুঁকি এড়াতে ক্রিকেটারদের মাঠে ফেরাতে তাড়াহুড়ো করতে নারাজ বিসিবি।
পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেই কেবল অনুশীলন কার্যক্রম শুরু করা হবে। সতর্কতা হিসেবে অনুশীলন ভেন্যুর অদূরে প্রস্তুত করা হবে আইসোলেশন সেন্টার। যাতে করে অনুশীলন চলাকালীন সময়ে কেউ অসুস্থ বোধ করলে সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নিতে পারেন। কথিত এই আইসোলেশন সেন্টারের জন্য বিসিবির মেডিকেল বিভাগ শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামস্থ ক্রিকেট একাডেমির দুই-তিনটি কক্ষ প্রস্তুত রাখার পরিকল্পনা করেছে। তবে বিসিরি প্রধান ক্রীড়া চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরীর চাওয়া, ওই কক্ষ যেন কোনো ক্রিকেটারকেই ব্যবহার করতে না হয়।